Saturday, April 10, 2010

বিদ্যুৎ যায় না মন্ত্রীপাড়ায়, ব্যতিক্রম মতিয়া

বিদ্যুৎ যায় না মন্ত্রীপাড়ায়, ব্যতিক্রম মতিয়া পিডিএফ প্রিন্ট কর ইমেল
Wednesday, 07 April 2010
Sample Imageলুৎফর রহমান: সিডর-আইলার মতো বিপর্যয় না হলে বিদ্যুৎ যায় না মন্ত্রী ও এমপি পাড়ায়। বঙ্গভবন, গণভবন, সচিবালয় ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বিদ্যুৎ যায় না কখনও। পালা করে দুই ঘণ্টার লোডশেডিংয়ে জনজীবনে দুর্ভোগ চলছে। ব্যতিক্রম শুধু ভিআইপি এলাকায়। সেখানে নেই দুর্ভোগের ছিটেফোঁটাও। অথচ সারাদেশে দুই ঘণ্টা পর পর দুই ঘণ্টার লোডশেডিং চলছে। কোথাও কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। সাধারণ মানুষের ভোগানিত্ম চরমে পৌঁছলেও মন্ত্রী-এমপিদের তা স্পর্শ করছে না।

এমন ভিআইপিদের ভিড়ে ব্যতিক্রম কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। নিয়মিত লোডশেডিংয়ের মধ্যেই বসবাস করছেন তিনি। বিদ্যুৎ বিভাগ স্বেচ্ছায় তার বাসায় দ্বৈত বিদ্যুৎ লাইন দেয়ার প্রসত্মাব করলেও তা নিতে রাজি হননি সরকারের এ প্রভাবশালী মন্ত্রী। তিনি বিদ্যুৎ বিভাগকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এলাকার লোকজন যেখানে বিদ্যুৎ পায় না সেখানে তিনি লোডশেডিংয়ের বাইরে থাকবেন কেন। মতিয়া চৌধুরীর বাসায় দ্বৈত সংযোগ দেয়ার প্রসত্মাব নিয়ে যাওয়া কর্মকর্তারাও বিব্রত হন মন্ত্রীর এমন জবাবে। ডিপিসি সূত্র জানায়, মন্ত্রীপাড়া মিন্টু রোড ও বেইলি রোডে ভিআইপি ফিডারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। তাই এসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কখনও বন্ধ হয় না।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর নিজস্ব বাসভবন ভিআইপি ফিডারের বাইরে হওয়ায় তার বাসায় নিয়মিত দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং হয়। বিষয়টি নিয়ে গত মাসের শেষের দিকে ডিপিডিসি’র কর্মকর্তারা স্বেচ্ছায় যোগাযোগ করেন তার সঙ্গে। তারা জানান, তিনি চাইলে তার বাসায় দুই ফিডারের দ্বৈত সংযোগ দেয়া যাবে। তবে মতিয়া চৌধুরী এতে রাজি হননি। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, তার আশপাশের লোকজন লোডশেডিং যন্ত্রণায় রয়েছেন। তিনি একা এর বাইরে থাকতে পারেন না। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দ্বৈত লাইনের সুবিধা না নিয়ে মন্ত্রী মতিয়া এখন নিয়মিত দুই ঘণ্টার লোডশেডিংয়ের সঙ্গেই বসবাস করছেন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ডিপিডিসি’র রমনা জোনের সহকারী জোনাল অফিসার আবদুল মতিন হাওলাদার জানান, সরকারের একজন মন্ত্রী হিসেবে আমরা মতিয়া চৌধুরীর বাসায় দ্বৈত সংযোগ দিতে চেয়েছিলাম। তবে তিনি এতে সম্মত হননি।

রাজধানীর যেসব এলাকায় সরকারি গুরম্নত্বপূর্ণ স্থাপনা, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, মন্ত্রী ও এমপি পাড়া বলে পরিচিত, সেসব এলাকা বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে ভিআইপি ফিডার বলে পরিচিত। এসব ফিডারে ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকে। ভিআইপি ফিডারের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিডর বা আইলার মতো কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ছাড়া ভিআইপি এলাকায় কখনও বিদ্যুৎ যায় না। দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, উপর থেকে নির্দেশ আছে ভিআইপি ফিডারে কোন লোডশেডিং হবে না। জরম্নরি মেরামত কাজ করতে হলেও আগে জানিয়ে দেয়া হয়। বিকল্প ব্যবস্থায় লাইন মেরামত করা হয়। একানত্ম প্রয়োজন হলে দিনের বেলায় স্বল্প সময়ের জন্য লাইন বন্ধ রেখে মেরামত কাজ করা হয়। ভিআইপি ফিডারের আওতাধীন রমনা জোনের মিন্টু রোড, বেইলি রোড, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা, বঙ্গভবন, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন, সংসদ ভবন এলাকা ও মানিক মিয়া এভিনিউ’র সংসদ সদস্য ভবন এলাকা ঘুরে সংশিস্নষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি শুষ্ক মওসুমে এসব এলাকায় একবারের জন্যও লোডশেডিং হয়নি। সংযোগ লাইনে ত্রম্নটির কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাটও হয়নি কখনও। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী এসব ভিআইপি এলাকায় এসি বন্ধের নির্দেশও মানা হচ্ছে না।
জানা যায়, মন্ত্রিপাড়া, এমপি হোস্টেল, সংসদ ভবন, সচিবালয় ও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনগুলোসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ স্থাপনাতেই ২৪ ঘণ্টা এসি চলে। ডিপিডিসি সূত্র জানায়, তাদের আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুতের যে চাহিদা তার তিন ভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎও পাওয়া যায়। ফলে লোডশেডিং না করে উপায় থাকে না। তবে ভিআইপি এলাকায় লোডশেডিং না করাটা একটা অলিখিত আইনের মতো। তাই ওইসব এলাকায় লোডশেডিং করা হয় না। ঢাকা অঞ্চলে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে গড়ে এক হাজার থেকে এক হাজার এক শ’ মেগাওয়াট সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। ডিপিডিসি’র আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ চাহিদা প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট। আর সরবরাহ করা হয় ৬০০-৬৫০ মেগাওয়াট। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর ফিডারে দিনে বিদ্যুৎ চাহিদা প্রায় ৪০ মেগাওয়াট। এ ফিডারে গড়ে সরবরাহ করা হচ্ছে ১৬ থেকে ১৮ মেগাওয়াট। একইভাবে রমনা জোনে ৩২ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ১৬ মেগাওয়াটেরও কম।

http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&task=view&id=10554&Itemid=83

No comments: