০ বিপুল জনসমর্থন কমেনি- প্রমাণের চেষ্টা আ'লীগের ০ জনগণের আস্থা হারিয়েছে সরকার_ দেখাতে চায় বিএনপি ০ ইসির লক্ষ্য সক্ষমতা প্রমাণ
নূরুর রহমান/নাসির লিটন/আনোয়ার রাবি্ব, লালমোহন থেকে
ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে ভোলা-৩ শূন্য আসনের নির্বাচন।
সরকারি দল, বিরোধী দল এবং নির্বাচন কমিশন_ সবার কাছেই এখন লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলা নিয়ে গঠিত ভোলা-৩ আসন সাফল্য-ব্যর্থতার কঠিন পরীক্ষার ক্ষেত্র। বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকার এখানে ভোটের লড়াইয়ে দেখাতে চায় তাদের ওপর জনগণের আস্থা এতটুকুও কমেনি; আর প্রধান বিরোধী দল প্রমাণ করতে চায় এ সরকার জনসমর্থন হারিয়েছে। দু'দলের এ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে নির্বাচন কমিশন চায় একটি রাজনৈতিক সরকারের সময় সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিজের সক্ষমতা প্রমাণ করতে। এ জন্য ইসি এ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করে প্রার্থীদের নিরাপত্তা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
মূলত সব পক্ষের জন্যই এ নির্বাচন একটি টেস্ট কেস। দু'দলই এ আসনে বিজয়ের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। প্রার্থীদের পাশাপাশি দু'দলেরই কেন্দ্রীয় নেতারা এখন ওই ভোলার তজুমদ্দিন-লালমোহন চষে বেড়াচ্ছেন। দলীয় প্রধানরাও সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন। আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে দলীয় এমপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বিএনপি মাঠের পাশাপাশি কূটনৈতিক পর্যায়েও দৌড়ঝাঁপ করছে। গত রাতে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় প্রভাবশালী কূটনীতিকদের সঙ্গে দেখা করে ভোলার ব্যাপারে তাদের কথা
জানিয়ে এসেছে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এবং তারা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা ও সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ইতিবাচক ভাবমূর্তি অর্জন করে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে সেই কমিশন শূন্য আসনের নির্বাচনে ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে পারে কি-না, সেটা এক অনিশ্চিত প্রশ্ন। যে কারণে কমিশনও সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে ভোলায়। ইতিমধ্যে দুই নির্বাচন কমিশনার ভোলার পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে ঘুরে এসেছেন একাধিকবার। বৈঠক করেছেন প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও প্রার্থীদের সঙ্গেও। গতকালই তিন দিনের সফরে ভোলা রওনা হয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা। এরই মধ্যে ভোলার এসপিসহ প্রশাসনে রদবদল, পর্যাপ্তসংখ্যক র্যাব সদস্য নিয়োগসহ কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কমিশন। গতকাল থেকে এক জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৫ জন করে পুলিশের সার্বক্ষণিক পাহারা দেওয়া হয়েছে দুই প্রার্থীকে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৮-এর ডিসেম্বরে যে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় দেশজুড়ে বিজয় অর্জন করেছিল, তারই অনিবার্য অংশ ছিল তরুণ প্রার্থী মেজর (অব) জসীমের কাছে টানা ৬ বারের বিজয়ী প্রবীণ সাংসদ বিএনপি নেতা মেজর (অব) হাফিজের পরাজয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেজর (অব) জসীম নির্বাচন কমিশনে ভুল তথ্য দেওয়ার কারণে পরবর্তী সময়ে তার প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করা হয়। ফলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
শনিবার অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা তোফায়েল আহমেদ এমপি নির্বাচন সমন্বয়কের দায়িত্ব নিয়ে ঢাকা থেকে ভোলায় আসা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দিন-রাত ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন দলীয় প্রার্থী নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের পক্ষে। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদের পক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ টানা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রামগঞ্জ-পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে। দুই প্রধান দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রচারে মুখর এখন লালমোহন তজুমদ্দিন তথা ভোলা-৩ নির্বাচনী এলাকা। শুধু রাজনৈতিক দল আর নির্বাচন কমিশন নয়, গোটা দেশবাসীর দৃষ্টিই এখন ভোলার দিকে।
কঠোর নিরাপত্তাবলয়ে প্রার্থীরা : ভোলায় নির্বাচনী প্রচারে প্রার্থীদের নিরাপত্তা গতকাল থেকে আরও জোরদার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ মেসবাহুল ইসলাম সমকালকে বলেছেন, রোববার থেকে প্রত্যেক প্রার্থীর সঙ্গে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৫ জন করে পুলিশ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকছেন। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন প্রত্যেক প্রার্থীর সঙ্গে একজন করে ভিডিও ক্যামেরাম্যান দেওয়ার কথা থাকলেও গতকাল দুই প্রার্থীর কারও সঙ্গেই ভিডিও ক্যামেরা দেখা যায়নি। সহকারী রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান সমকালকে বলেন, পর্যাপ্তসংখ্যক ক্যামেরা না পাওয়ায় এখনও প্রার্থীদের সঙ্গে ভিডিও ক্যামেরা দেওয়া যায়নি।
রিটার্নিং অফিসার মোঃ নুরুজ্জামান তালুকদার সমকালকে বলেছেন, এই নির্বাচনী এলাকার ৮৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৯টি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
দুই প্রার্থী এখন বিরামহীন প্রচারে ব্যস্ত। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে চলছে নিজ নিজ সভা-সমাবেশ-গণসংযোগ। প্রার্থীরা যাচ্ছেন ভোটারদের ঘরে ঘরে। প্রচারে অপেক্ষাকৃত নবীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন এগিয়ে আছেন। তিনি বয়োজ্যেষ্ঠদের চাচা-চাচী, দাদা-দাদী বলে সম্বোধন করে সালাম করছেন। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ কোলাকুলি ও করমর্দন করে দোয়া চাইছেন। দেরিতে প্রচারাভিযান শুরু করায় পিছিয়ে পড়া হাফিজ এখন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে পুষিয়ে নেওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জাতীয় নির্বাচনেও সেনা মোতায়েন না করার কথা ভাবছে ইসি : ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করা, উপনির্বাচনে প্রচারণার জন্য সময় সংক্ষিপ্ত করাসহ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে আরও কিছু সংস্কারের কথা ভাবছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এটিএম শামসুল হুদা। তিনি বলেন, অপর দুই নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করে এ পরিকল্পনার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সিইসি গতকাল ভোলা-৩ আসনের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ভোলা-৩ আসনের নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে বিএনপির দাবি আবারও নাকচ করে দিয়ে সিইসি জানান, কোনো উপনির্বাচনে সেনা মোতায়েনের রেকর্ড নেই। সাধারণ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আছে। তারা দেশের অন্যত্র যেভাবে কাজ করছেন, সেখানেও কাজ করবেন। কথায় কথায় সেনা নামানো ঠিক না। তাদের কাজ তাদের করতে দিতে হবে। সেনাবাহিনীকে ব্যবহার না করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আছে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও সহযোগিতা করতে হবে।
সিইসি গতকাল জানান, ভোলা-৩ আসনের নির্বাচন-পূর্ব সহিংসতায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী উভয়েই নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন। এজন্য দু'দলের প্রার্থীকেই সতর্ক করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ভবিষ্যতে একই অপরাধ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে চিঠিতে হুশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের তদন্তে দেখা গেছে ঘটনাস্থলে আওয়ামী লীগের পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ চলছিল। সেখানে বিএনপি প্রচারণা চালাতে গেলে থানার ওসি বিএনপির কর্মীদের সেখানে যেতে নিষেধ করেন। কিন্তু তারা তা মানেননি। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী কোথাও সভা-সমাবেশ, মিছিল করতে হলে আগে থেকে জানাতে হবে। কিন্তু তারা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন। তাই তাদের সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
শাওনের গণসংযোগ : আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরুন্নবী শাওন গতকাল পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নে দিনব্যাপী গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করেছেন। সন্ধ্যায় গজারিয়া নমগ্রামে মতবিনিময় এবং কর্তারহাট বাজার, মঙ্গলশিকদার বাজার ও মহেষখালীতে জনসভা করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লা আল ইসলাম জ্যাকব, আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন আখন্দ, যুবলীগ কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আবু সাঈদ প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, মিসেস আনোয়ারা আহমেদ, জনতা ব্যাংকের পরিচালক বলরাম পোদ্দার, যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান, অ্যাডভোকেট মামুুনুর রশিদ, শাজাহান ভূঁইয়া মাখন, আনোয়ার ইসলাম সান্টু, সৈয়দ আহম্মদ, সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি লিয়াকত শিকদার, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান শাহীন, খলিলুর রহমান, শাওনপত্নী ফারজানা চৌধুরী দলীয় প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন।
হাফিজের গণসংযোগ : বিএনপি প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ গতকাল তজুমদ্দিন উপজেলার বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড মেঘনা নদীর মধ্যবর্তী চরজহির উদ্দিনে দিনব্যাপী গণসংযোগ ও পথসভা করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
এছাড়া দলীয় প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মজিবর রহমান সরোয়ার এমপি, সংসদ সদস্য মুকুল, ফজলুল হক মিলন, শহিদুল আলম তালুকদার, মীর শরাফত আলী শফু, আমান উল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশিদ, হাফিজ ইব্রাহিম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আনোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) মিজানুর রহমান, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-সভাপতি হায়দার আলী লেনিন প্রমুখ।
অস্ত্র উদ্ধার : লালমোহন থানা পুলিশ গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের জনৈক কাশেমের বাড়ির পেছন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১টি রিভলবার, ১টি চায়নিজ কুড়াল, ২টি ছোরা ও একটি চাপাতি উদ্ধার করেছে।
ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা : রিটার্নিং অফিসার মোঃ নুরুজ্জামান তালুকদার সমকালকে বলেন, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি কেন্দ্রে ২৪ জন পুলিশসহ আনসার মোতায়েন থাকবে। এছাড়া ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে থাকবে ২১ ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রয়োজনে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত ২৫ এপ্রিলের পরও অব্যাহত থাকবে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে র্যাব ঝটিকা অভিযান চালাবে এবং চেকপোস্ট বসাবে।
জেলা প্রশাসক মোঃ মেসবাহুল ইসলাম জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় চরাঞ্চলগুলোতে কোস্টগার্ড মোতায়েন থাকবে।
যুবদল নেতাসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা : রোববার রাতে নাঙ্গলখালী স্টেডিয়ামের সামনে ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদকে (২২) কুপিয়ে আহত করার অভিযোগে পৌর যুবদলের সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর ঈমাম হোসেনসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার সকালে লালমোহন থানায় মামলা করা হয়েছে। পুলিশ এ মামলায় মোস্তফা ও দীন মোহাম্মদকে গ্রেফতার করেছে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, হামলাকারীরা বিএনপির ক্যাডার। গুরুতর আহত ফরহাদকে র্যাব উদ্ধার করে লালমোহন হাসপাতালে ভর্তি করে।
বিচারপতি রউফের ক্ষমা চাওয়া উচিত : তোফায়েল
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ এমপি বলেছেন, এ নির্বাচনে (ভোলা-৩) জয়-পরাজয়ে সরকারের কিছুই আসে-যায় না। নির্বাচনে জয়ী হলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে, না হলেও থাকবে। তবে কেন বিতর্কিত নির্বাচনের কাদা আমরা গায়ে লাগাব? সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুর রউফের বক্তব্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি সিইসি থাকার সময়ে মাগুরার উপনির্বাচনে পুরো নির্বাচন পদ্ধতিকে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। জাতির কপালে কলঙ্কের তিলক এঁকে দিয়েছিলেন তিনি। বর্তমান সরকারের সময়ে বগুড়ার দুটি উপনির্বাচনে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ জয়ী হয়েছেন। সরকার যে কোনো মূল্যে 'মাগুরা' নয়, 'বগুড়া'র দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায়। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের যে কোনো পদক্ষেপ আওয়ামী লীগ মেনে নেবে।
তিনি গতকাল সোমবার লালমোহনে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন। এতে উপস্থিত ছিলেন বরগুনার এমপি গোলাম সবুর টুলু, সাবেক সচিব রবিউল মুক্তাদির চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল মমিন টুলু, লালমোহন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ একেএম নজরুল ইসলাম, যুবলীগ কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হারুনুর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান হিরন, অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান শাহীন প্রমুখ।
নূরুর রহমান/নাসির লিটন/আনোয়ার রাবি্ব, লালমোহন থেকে
ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে ভোলা-৩ শূন্য আসনের নির্বাচন।
সরকারি দল, বিরোধী দল এবং নির্বাচন কমিশন_ সবার কাছেই এখন লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলা নিয়ে গঠিত ভোলা-৩ আসন সাফল্য-ব্যর্থতার কঠিন পরীক্ষার ক্ষেত্র। বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকার এখানে ভোটের লড়াইয়ে দেখাতে চায় তাদের ওপর জনগণের আস্থা এতটুকুও কমেনি; আর প্রধান বিরোধী দল প্রমাণ করতে চায় এ সরকার জনসমর্থন হারিয়েছে। দু'দলের এ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে নির্বাচন কমিশন চায় একটি রাজনৈতিক সরকারের সময় সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিজের সক্ষমতা প্রমাণ করতে। এ জন্য ইসি এ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করে প্রার্থীদের নিরাপত্তা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
মূলত সব পক্ষের জন্যই এ নির্বাচন একটি টেস্ট কেস। দু'দলই এ আসনে বিজয়ের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। প্রার্থীদের পাশাপাশি দু'দলেরই কেন্দ্রীয় নেতারা এখন ওই ভোলার তজুমদ্দিন-লালমোহন চষে বেড়াচ্ছেন। দলীয় প্রধানরাও সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন। আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে দলীয় এমপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বিএনপি মাঠের পাশাপাশি কূটনৈতিক পর্যায়েও দৌড়ঝাঁপ করছে। গত রাতে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় প্রভাবশালী কূটনীতিকদের সঙ্গে দেখা করে ভোলার ব্যাপারে তাদের কথা
জানিয়ে এসেছে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এবং তারা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা ও সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ইতিবাচক ভাবমূর্তি অর্জন করে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে সেই কমিশন শূন্য আসনের নির্বাচনে ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে পারে কি-না, সেটা এক অনিশ্চিত প্রশ্ন। যে কারণে কমিশনও সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে ভোলায়। ইতিমধ্যে দুই নির্বাচন কমিশনার ভোলার পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে ঘুরে এসেছেন একাধিকবার। বৈঠক করেছেন প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও প্রার্থীদের সঙ্গেও। গতকালই তিন দিনের সফরে ভোলা রওনা হয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা। এরই মধ্যে ভোলার এসপিসহ প্রশাসনে রদবদল, পর্যাপ্তসংখ্যক র্যাব সদস্য নিয়োগসহ কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কমিশন। গতকাল থেকে এক জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৫ জন করে পুলিশের সার্বক্ষণিক পাহারা দেওয়া হয়েছে দুই প্রার্থীকে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৮-এর ডিসেম্বরে যে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় দেশজুড়ে বিজয় অর্জন করেছিল, তারই অনিবার্য অংশ ছিল তরুণ প্রার্থী মেজর (অব) জসীমের কাছে টানা ৬ বারের বিজয়ী প্রবীণ সাংসদ বিএনপি নেতা মেজর (অব) হাফিজের পরাজয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেজর (অব) জসীম নির্বাচন কমিশনে ভুল তথ্য দেওয়ার কারণে পরবর্তী সময়ে তার প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করা হয়। ফলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
শনিবার অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা তোফায়েল আহমেদ এমপি নির্বাচন সমন্বয়কের দায়িত্ব নিয়ে ঢাকা থেকে ভোলায় আসা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দিন-রাত ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন দলীয় প্রার্থী নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের পক্ষে। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদের পক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ টানা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রামগঞ্জ-পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে। দুই প্রধান দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রচারে মুখর এখন লালমোহন তজুমদ্দিন তথা ভোলা-৩ নির্বাচনী এলাকা। শুধু রাজনৈতিক দল আর নির্বাচন কমিশন নয়, গোটা দেশবাসীর দৃষ্টিই এখন ভোলার দিকে।
কঠোর নিরাপত্তাবলয়ে প্রার্থীরা : ভোলায় নির্বাচনী প্রচারে প্রার্থীদের নিরাপত্তা গতকাল থেকে আরও জোরদার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ মেসবাহুল ইসলাম সমকালকে বলেছেন, রোববার থেকে প্রত্যেক প্রার্থীর সঙ্গে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৫ জন করে পুলিশ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকছেন। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন প্রত্যেক প্রার্থীর সঙ্গে একজন করে ভিডিও ক্যামেরাম্যান দেওয়ার কথা থাকলেও গতকাল দুই প্রার্থীর কারও সঙ্গেই ভিডিও ক্যামেরা দেখা যায়নি। সহকারী রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান সমকালকে বলেন, পর্যাপ্তসংখ্যক ক্যামেরা না পাওয়ায় এখনও প্রার্থীদের সঙ্গে ভিডিও ক্যামেরা দেওয়া যায়নি।
রিটার্নিং অফিসার মোঃ নুরুজ্জামান তালুকদার সমকালকে বলেছেন, এই নির্বাচনী এলাকার ৮৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৯টি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
দুই প্রার্থী এখন বিরামহীন প্রচারে ব্যস্ত। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে চলছে নিজ নিজ সভা-সমাবেশ-গণসংযোগ। প্রার্থীরা যাচ্ছেন ভোটারদের ঘরে ঘরে। প্রচারে অপেক্ষাকৃত নবীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন এগিয়ে আছেন। তিনি বয়োজ্যেষ্ঠদের চাচা-চাচী, দাদা-দাদী বলে সম্বোধন করে সালাম করছেন। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ কোলাকুলি ও করমর্দন করে দোয়া চাইছেন। দেরিতে প্রচারাভিযান শুরু করায় পিছিয়ে পড়া হাফিজ এখন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে পুষিয়ে নেওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জাতীয় নির্বাচনেও সেনা মোতায়েন না করার কথা ভাবছে ইসি : ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করা, উপনির্বাচনে প্রচারণার জন্য সময় সংক্ষিপ্ত করাসহ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে আরও কিছু সংস্কারের কথা ভাবছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এটিএম শামসুল হুদা। তিনি বলেন, অপর দুই নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করে এ পরিকল্পনার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সিইসি গতকাল ভোলা-৩ আসনের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ভোলা-৩ আসনের নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে বিএনপির দাবি আবারও নাকচ করে দিয়ে সিইসি জানান, কোনো উপনির্বাচনে সেনা মোতায়েনের রেকর্ড নেই। সাধারণ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আছে। তারা দেশের অন্যত্র যেভাবে কাজ করছেন, সেখানেও কাজ করবেন। কথায় কথায় সেনা নামানো ঠিক না। তাদের কাজ তাদের করতে দিতে হবে। সেনাবাহিনীকে ব্যবহার না করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আছে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও সহযোগিতা করতে হবে।
সিইসি গতকাল জানান, ভোলা-৩ আসনের নির্বাচন-পূর্ব সহিংসতায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী উভয়েই নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন। এজন্য দু'দলের প্রার্থীকেই সতর্ক করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ভবিষ্যতে একই অপরাধ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে চিঠিতে হুশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের তদন্তে দেখা গেছে ঘটনাস্থলে আওয়ামী লীগের পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ চলছিল। সেখানে বিএনপি প্রচারণা চালাতে গেলে থানার ওসি বিএনপির কর্মীদের সেখানে যেতে নিষেধ করেন। কিন্তু তারা তা মানেননি। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী কোথাও সভা-সমাবেশ, মিছিল করতে হলে আগে থেকে জানাতে হবে। কিন্তু তারা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন। তাই তাদের সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
শাওনের গণসংযোগ : আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরুন্নবী শাওন গতকাল পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নে দিনব্যাপী গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করেছেন। সন্ধ্যায় গজারিয়া নমগ্রামে মতবিনিময় এবং কর্তারহাট বাজার, মঙ্গলশিকদার বাজার ও মহেষখালীতে জনসভা করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লা আল ইসলাম জ্যাকব, আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন আখন্দ, যুবলীগ কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আবু সাঈদ প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, মিসেস আনোয়ারা আহমেদ, জনতা ব্যাংকের পরিচালক বলরাম পোদ্দার, যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান, অ্যাডভোকেট মামুুনুর রশিদ, শাজাহান ভূঁইয়া মাখন, আনোয়ার ইসলাম সান্টু, সৈয়দ আহম্মদ, সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি লিয়াকত শিকদার, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান শাহীন, খলিলুর রহমান, শাওনপত্নী ফারজানা চৌধুরী দলীয় প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন।
হাফিজের গণসংযোগ : বিএনপি প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ গতকাল তজুমদ্দিন উপজেলার বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড মেঘনা নদীর মধ্যবর্তী চরজহির উদ্দিনে দিনব্যাপী গণসংযোগ ও পথসভা করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
এছাড়া দলীয় প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মজিবর রহমান সরোয়ার এমপি, সংসদ সদস্য মুকুল, ফজলুল হক মিলন, শহিদুল আলম তালুকদার, মীর শরাফত আলী শফু, আমান উল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশিদ, হাফিজ ইব্রাহিম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আনোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) মিজানুর রহমান, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-সভাপতি হায়দার আলী লেনিন প্রমুখ।
অস্ত্র উদ্ধার : লালমোহন থানা পুলিশ গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের জনৈক কাশেমের বাড়ির পেছন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১টি রিভলবার, ১টি চায়নিজ কুড়াল, ২টি ছোরা ও একটি চাপাতি উদ্ধার করেছে।
ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা : রিটার্নিং অফিসার মোঃ নুরুজ্জামান তালুকদার সমকালকে বলেন, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি কেন্দ্রে ২৪ জন পুলিশসহ আনসার মোতায়েন থাকবে। এছাড়া ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে থাকবে ২১ ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রয়োজনে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত ২৫ এপ্রিলের পরও অব্যাহত থাকবে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে র্যাব ঝটিকা অভিযান চালাবে এবং চেকপোস্ট বসাবে।
জেলা প্রশাসক মোঃ মেসবাহুল ইসলাম জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় চরাঞ্চলগুলোতে কোস্টগার্ড মোতায়েন থাকবে।
যুবদল নেতাসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা : রোববার রাতে নাঙ্গলখালী স্টেডিয়ামের সামনে ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদকে (২২) কুপিয়ে আহত করার অভিযোগে পৌর যুবদলের সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর ঈমাম হোসেনসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার সকালে লালমোহন থানায় মামলা করা হয়েছে। পুলিশ এ মামলায় মোস্তফা ও দীন মোহাম্মদকে গ্রেফতার করেছে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, হামলাকারীরা বিএনপির ক্যাডার। গুরুতর আহত ফরহাদকে র্যাব উদ্ধার করে লালমোহন হাসপাতালে ভর্তি করে।
বিচারপতি রউফের ক্ষমা চাওয়া উচিত : তোফায়েল
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ এমপি বলেছেন, এ নির্বাচনে (ভোলা-৩) জয়-পরাজয়ে সরকারের কিছুই আসে-যায় না। নির্বাচনে জয়ী হলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে, না হলেও থাকবে। তবে কেন বিতর্কিত নির্বাচনের কাদা আমরা গায়ে লাগাব? সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুর রউফের বক্তব্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি সিইসি থাকার সময়ে মাগুরার উপনির্বাচনে পুরো নির্বাচন পদ্ধতিকে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। জাতির কপালে কলঙ্কের তিলক এঁকে দিয়েছিলেন তিনি। বর্তমান সরকারের সময়ে বগুড়ার দুটি উপনির্বাচনে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ জয়ী হয়েছেন। সরকার যে কোনো মূল্যে 'মাগুরা' নয়, 'বগুড়া'র দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায়। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের যে কোনো পদক্ষেপ আওয়ামী লীগ মেনে নেবে।
তিনি গতকাল সোমবার লালমোহনে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন। এতে উপস্থিত ছিলেন বরগুনার এমপি গোলাম সবুর টুলু, সাবেক সচিব রবিউল মুক্তাদির চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল মমিন টুলু, লালমোহন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ একেএম নজরুল ইসলাম, যুবলীগ কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হারুনুর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান হিরন, অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান শাহীন প্রমুখ।
No comments:
Post a Comment