১৯৭১ সালের বদর দিবস উপলক্ষে ৭ নভেম্বর বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বরে ঢাকা শহর ছাত্রসংঘ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মুজাহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছিলেন, 'বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু কিছু লোক এখনও পাকিস্তানের আদর্শবিরোধী কাজ করছে। জনগণ তাদের সম্পর্কে সচেতন।' তিনি এদের খতমের আহ্বান জানান (৮ নভেম্বর ১৯৭১ দৈনিক আজাদ)।
রাজীব আহাম্মদ
জামায়াতের কেউ মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, পৃথিবীর কারও সাধ্য নেই এটি প্রমাণ করার। জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী গত শুক্রবার জেলা জামায়াতের আমিরদের সমাবেশে এমন দাবি করেন। ওই সমাবেশে তিনি দাবি করেন, জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করলেও মানবতাবিরোধী অপরাধ (খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগি্নসংযোগ) করেনি। যদিও মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজামী নিজেই মুক্তিযোদ্ধাদের 'ভারতের দালাল', 'বিচ্ছিন্নতাবাদী', 'কাফের' আখ্যা দিয়ে 'খতম' করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সে সময়কার বিভিন্ন পত্রিকায় নিজামীর উদ্ধৃতি দিয়ে এসব আহ্বানের খবর প্রকাশিত হয়। নিজামী নিজেও তার লেখায় পাকিস্তান রক্ষায় 'আক্রমণাত্মক' হতে ঘাতক আল-বদর বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন। একই রকম আহ্বান জানিয়েছিলেন জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ।
মাওলানা নিজামী ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রামে 'বদর দিবস, পাকিস্তান ও আলবদর' শিরোনামে একটি উপসম্পাদকীয়তে লেখেন, '...দুর্ভাগ্যবশত পাকিস্তানের কিছু মুনাফিক (মুক্তিযোদ্ধা) তাদের (ভারতের) পক্ষ অবলম্বন করে ভেতর থেকে আমাদের দুর্বল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাদের মোকাবিলা করে তাদের সকল ষড়যন্ত্র বানচাল করেই পাকিস্তানের আদর্শ ও অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে; শুধু পাকিস্তান রক্ষার আত্মরক্ষামূলক প্রচেষ্টা চালিয়েই এ পাকিস্তানকে রক্ষা করা যাবে না।' তিনি এ লেখার মাধ্যমে বদর বাহিনীকে আক্রমণাত্মক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন।
'আমাদের পরম সৌভাগ্যই বলতে হবে। পাকসেনার সহযোগিতায় এ দেশের ইসলামপ্রিয় তরুণ সমাজ বদর যুদ্ধের স্মৃতিকে সামনে রেখে আলবদর বাহিনী গঠন করেছে।' তিনি তার লেখায় মুক্তিযোদ্ধাদের মুনাফিক হিসেবে আখ্যা দিয়ে পাকিস্তান রক্ষার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন। ওই সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের 'দেশদ্রোহী', 'ভারতের দালাল' আখ্যা দিয়ে খতমের আহ্বান জানান।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দলিল (ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তান) অনুযায়ী, জামায়াতের বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অনেক নেতা একই রকমের বক্তব্য দেন। মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যার নির্দেশ দেন। অনেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে আলবদর, রাজাকার, আলশামস বাহিনীতে যোগ দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করার অভিযোগ আছে।
পূর্ব পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দলিল (ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তান) অনুযায়ী এবং ওই সময় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী জামায়াতের বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, চার নায়েবে আমির মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ, মকবুল আহমাদ, মাওলানা আবদুস সুবহান, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, তিন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা ও এটিএম আজহারুল ইসলাম, নির্বাহী পরিষদের অপর দুই সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ আবদুজ জাহেদ ও মীর কাসেম আলী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেন। ঘাতক রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠনে সহায়তা করেন। এসব বাহিনীর নেতৃত্বও দেন তারা।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, একাত্তরের ১৪ জুন জামালপুর ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সভায় নিজামী বলেছিলেন, ইসলাম রক্ষায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে। এ জন্য তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। জামায়াতের দলীয় মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সংখ্যায় নিজামীকে বদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে উল্লেখ করা হয় (মুক্তিযুদ্ধে দৈনিক সংগ্রামের ভূমিকা)।
পাকিস্তান দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় নিজামী বলেছিলেন, '...ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মীরা দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ' (দৈনিক সংগ্রাম, ৮ সেপ্টেম্বর)।
আজাদী দিবস উপলক্ষে ১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে নিজামী বলেছিলেন, 'পাকিস্তান কোনো ভূখণ্ডের নাম নয়, আদর্শের নাম। ইসলামী আদর্শই পাকিস্তান সৃষ্টি করেছে এবং এই আদর্শই পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম।' তিনি আরও বলেছিলেন, 'ইসলামপ্রিয় ছাত্র সমাজ বেঁচে থাকতে পাকিস্তানের অস্তিত্ব টিকে থাকবে' (১৫ আগস্ট ১৯৭১, দৈনিক সংগ্রাম)।
জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ছিলেন আলবদর বাহিনীর অন্যতম সংগঠক। ১২ আগস্ট ১৯৭১ দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এর উল্লেখ রয়েছে। '৭১ সালের ১৭ অক্টোবর রংপুরে ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সভায় মুজাহিদ আলবদর বাহিনী গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। ২৫ অক্টোবর ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সম্মেলনে মুজাহিদ 'পাকিস্তানের ছাত্র-জনতাকে দুষ্কৃতকারী (মুক্তিযোদ্ধা) খতম করার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান' (২৬ অক্টোবর ১৯৭১, দৈনিক সংগ্রাম)।
১৯৭১ সালের বদর দিবস উপলক্ষে ৭ নভেম্বর বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বরে ঢাকা শহর ছাত্রসংঘ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মুজাহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছিলেন, 'বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু কিছু লোক এখনও পাকিস্তানের আদর্শবিরোধী কাজ করছে। জনগণ তাদের সম্পর্কে সচেতন।' তিনি এদের খতমের আহ্বান জানান (৮ নভেম্বর ১৯৭১ দৈনিক আজাদ)। তিনি ওই সমাবেশে যেসব দোকানে 'ভারতমনা' লেখকের বই পাওয়া যাবে সেগুলো জ্বালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মালেক মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী ছিলেন। মালেক মন্ত্রিসভার এই মন্ত্রীর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল মন্ত্রী হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। প্রায় দুই বছর সাজাও ভোগ করেন তিনি। দালাল আইন বাতিল হলে ১৯৭৪ সালে তিনি মুক্তি পান। ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনার খানজাহান আলী সড়কের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন জামায়াতকর্মী নিয়ে প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠন করেন ইউসুফ। তখন এ সংবাদ দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় ছাপা হয়। ২৮ নভেম্বর করাচিতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'রাজাকাররা আমাদের বীর সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতীয় হামলার মোকাবিলা করছে।' তিনি রাজাকারদের হাতে আরও আধুনিক অস্ত্র দেওয়ার দাবি জানান।
জামায়াতের আরেক নায়েবে আমির মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে স্বাধীনতার বিরোধিতা করার অভিযোগ। মকবুল আহমাদ চট্টগ্রাম বিভাগীয় শান্তি কমিটির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন (মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান, পৃ-৪৩০)। মকবুল আহমাদ '৭১ সালের ১০ আগস্ট রেডিও পাকিস্তান চট্টগ্রামের ডিউটি অফিসার ইনচার্জ ফজলুল হককে লেখা এক চিঠিতে ফেনীর তাকিয়াবাড়ির মাওলানা সৈয়দ ওয়ায়েজউদ্দিনকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। এ জন্য তিনি ফেনী শহর রাজাকার কমান্ডার হানিফ ও উপদেষ্টা মাওলানা মোস্তফাকে চট্টগ্রামে পাঠান। পরে ১৭ আগস্ট চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে ওয়ায়েজউদ্দিনকে একটি জিপে করে তুলে নিয়ে যায় রাজাকাররা। এরপর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। স্বাধীনতার পর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মকবুল আহমাদের হাতে লেখা সেই চিঠিটি বাংলায় অনুবাদ করে বিলি করে। (তথ্য সূত্র : ফেনী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত সংবাদ)।
জামায়াতের আরেক নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও একজন চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি স্বাধীনতার প্রবল বিরোধিতা করেন। মানবতাবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিলেন বলেও স্থানীয় লোকজন ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এ অভিযোগ এনেছেন। যা বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
জামায়াতের অপর নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সুবহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনা জেলা শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন। 'একাত্তরের ঘাতক দালালরা কে কোথায়' ও 'মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান' বই দুটিতে এর উল্লেখ রয়েছে। মাওলানা সুবহানের সেই সময়কার কোনো বক্তব্য সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে খুঁজে পাওয়া না গেলেও তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান ও তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রসংঘের সভাপতি আশরাফ আলীর তত্ত্বাবধানে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃহত্তর ময়মনসিংহে আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক সংগ্রামের একটি প্রতিবেদনে কামারুজ্জামানকে ময়মনসিংহ জেলা আলবদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত দৈনিক সংগ্রামের খবরে বলা হয়, জেলা ছাত্রসংঘের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী জামালপুরে মোট ৫শ' দুষ্কৃতকারীকে (নিরীহ গ্রামবাসী ও মুক্তিযোদ্ধা) হত্যা করেছে। সেই সঙ্গে চার ভারতীয় চরকে আটক করেছে। ৭০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে আটক করার খবরও প্রকাশ করা হয়।
অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম আলবদর বাহিনীর রাজশাহী জেলা শাখার প্রধান ছিলেন (মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান, এ এস এম সামছুল আরেফিন পৃ-৪৩০)। ১৯৭১ সালের ১৭ অক্টোবর রংপুরের যে সভায় মুজাহিদ আলবদর বাহিনী প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন, সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন দলিল 'ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তান'-এর অক্টোবরের দ্বিতীয় ভাগের প্রতিবেদনে (১৩ নভেম্বর ১৯৭১ স্বরাষ্ট্র সচিব স্বাক্ষরিত) এ সভার কথা উল্লেখ আছে।
আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীর সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান, পৃ-৪৩০)। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করেন। ওই সময় প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে এর উল্লেখ রয়েছে।
নির্বাহী পরিষদের সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ আবদুজ জাহের '৭১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ও চট্টগ্রাম বদর বাহিনীর জেলাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন (মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান, পৃ-৪২৯)। ২ আগস্ট চট্টগ্রামের মুসলিম হলে এক সমাবেশে তিনি বলেন, 'ভারতের সকল চক্রান্ত নস্যাৎ করে পাকিস্তান টিকিয়ে রাখার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব।' (৩ আগস্ট দৈনিক সংগ্রাম)
নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য মীর কাসেম আলী মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বরে ঢাকা শহর ছাত্রসংঘের আয়োজিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, '১৪ বছর পূর্বে কাফেররা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) উপর যেভাবে আক্রমণ চালিয়ে ছিল হিন্দুস্তান (ভারত) ও তার চররা (মুক্তিযোদ্ধারা) বর্তমানে পাকিস্তানের ওপর সেভাবে হামলা চালাচ্ছে। আমাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত থাকতে পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে হিন্দুস্তানের গোলামে পরিণত হতে দিব না।' (দৈনিক আজাদ ৮ নভেম্বর ১৯৭১)।রাজীব আহাম্মদ
জামায়াতের কেউ মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, পৃথিবীর কারও সাধ্য নেই এটি প্রমাণ করার। জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী গত শুক্রবার জেলা জামায়াতের আমিরদের সমাবেশে এমন দাবি করেন। ওই সমাবেশে তিনি দাবি করেন, জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করলেও মানবতাবিরোধী অপরাধ (খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগি্নসংযোগ) করেনি। যদিও মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজামী নিজেই মুক্তিযোদ্ধাদের 'ভারতের দালাল', 'বিচ্ছিন্নতাবাদী', 'কাফের' আখ্যা দিয়ে 'খতম' করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সে সময়কার বিভিন্ন পত্রিকায় নিজামীর উদ্ধৃতি দিয়ে এসব আহ্বানের খবর প্রকাশিত হয়। নিজামী নিজেও তার লেখায় পাকিস্তান রক্ষায় 'আক্রমণাত্মক' হতে ঘাতক আল-বদর বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন। একই রকম আহ্বান জানিয়েছিলেন জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ।
মাওলানা নিজামী ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রামে 'বদর দিবস, পাকিস্তান ও আলবদর' শিরোনামে একটি উপসম্পাদকীয়তে লেখেন, '...দুর্ভাগ্যবশত পাকিস্তানের কিছু মুনাফিক (মুক্তিযোদ্ধা) তাদের (ভারতের) পক্ষ অবলম্বন করে ভেতর থেকে আমাদের দুর্বল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাদের মোকাবিলা করে তাদের সকল ষড়যন্ত্র বানচাল করেই পাকিস্তানের আদর্শ ও অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে; শুধু পাকিস্তান রক্ষার আত্মরক্ষামূলক প্রচেষ্টা চালিয়েই এ পাকিস্তানকে রক্ষা করা যাবে না।' তিনি এ লেখার মাধ্যমে বদর বাহিনীকে আক্রমণাত্মক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন।
'আমাদের পরম সৌভাগ্যই বলতে হবে। পাকসেনার সহযোগিতায় এ দেশের ইসলামপ্রিয় তরুণ সমাজ বদর যুদ্ধের স্মৃতিকে সামনে রেখে আলবদর বাহিনী গঠন করেছে।' তিনি তার লেখায় মুক্তিযোদ্ধাদের মুনাফিক হিসেবে আখ্যা দিয়ে পাকিস্তান রক্ষার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন। ওই সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের 'দেশদ্রোহী', 'ভারতের দালাল' আখ্যা দিয়ে খতমের আহ্বান জানান।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দলিল (ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তান) অনুযায়ী, জামায়াতের বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অনেক নেতা একই রকমের বক্তব্য দেন। মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যার নির্দেশ দেন। অনেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে আলবদর, রাজাকার, আলশামস বাহিনীতে যোগ দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করার অভিযোগ আছে।
পূর্ব পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দলিল (ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তান) অনুযায়ী এবং ওই সময় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী জামায়াতের বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, চার নায়েবে আমির মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ, মকবুল আহমাদ, মাওলানা আবদুস সুবহান, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, তিন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা ও এটিএম আজহারুল ইসলাম, নির্বাহী পরিষদের অপর দুই সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ আবদুজ জাহেদ ও মীর কাসেম আলী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেন। ঘাতক রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠনে সহায়তা করেন। এসব বাহিনীর নেতৃত্বও দেন তারা।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, একাত্তরের ১৪ জুন জামালপুর ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সভায় নিজামী বলেছিলেন, ইসলাম রক্ষায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে। এ জন্য তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। জামায়াতের দলীয় মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সংখ্যায় নিজামীকে বদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে উল্লেখ করা হয় (মুক্তিযুদ্ধে দৈনিক সংগ্রামের ভূমিকা)।
পাকিস্তান দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় নিজামী বলেছিলেন, '...ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মীরা দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ' (দৈনিক সংগ্রাম, ৮ সেপ্টেম্বর)।
আজাদী দিবস উপলক্ষে ১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে নিজামী বলেছিলেন, 'পাকিস্তান কোনো ভূখণ্ডের নাম নয়, আদর্শের নাম। ইসলামী আদর্শই পাকিস্তান সৃষ্টি করেছে এবং এই আদর্শই পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম।' তিনি আরও বলেছিলেন, 'ইসলামপ্রিয় ছাত্র সমাজ বেঁচে থাকতে পাকিস্তানের অস্তিত্ব টিকে থাকবে' (১৫ আগস্ট ১৯৭১, দৈনিক সংগ্রাম)।
জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ছিলেন আলবদর বাহিনীর অন্যতম সংগঠক। ১২ আগস্ট ১৯৭১ দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এর উল্লেখ রয়েছে। '৭১ সালের ১৭ অক্টোবর রংপুরে ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সভায় মুজাহিদ আলবদর বাহিনী গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। ২৫ অক্টোবর ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সম্মেলনে মুজাহিদ 'পাকিস্তানের ছাত্র-জনতাকে দুষ্কৃতকারী (মুক্তিযোদ্ধা) খতম করার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান' (২৬ অক্টোবর ১৯৭১, দৈনিক সংগ্রাম)।
১৯৭১ সালের বদর দিবস উপলক্ষে ৭ নভেম্বর বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বরে ঢাকা শহর ছাত্রসংঘ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মুজাহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছিলেন, 'বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু কিছু লোক এখনও পাকিস্তানের আদর্শবিরোধী কাজ করছে। জনগণ তাদের সম্পর্কে সচেতন।' তিনি এদের খতমের আহ্বান জানান (৮ নভেম্বর ১৯৭১ দৈনিক আজাদ)। তিনি ওই সমাবেশে যেসব দোকানে 'ভারতমনা' লেখকের বই পাওয়া যাবে সেগুলো জ্বালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মালেক মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী ছিলেন। মালেক মন্ত্রিসভার এই মন্ত্রীর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল মন্ত্রী হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। প্রায় দুই বছর সাজাও ভোগ করেন তিনি। দালাল আইন বাতিল হলে ১৯৭৪ সালে তিনি মুক্তি পান। ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনার খানজাহান আলী সড়কের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন জামায়াতকর্মী নিয়ে প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠন করেন ইউসুফ। তখন এ সংবাদ দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় ছাপা হয়। ২৮ নভেম্বর করাচিতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'রাজাকাররা আমাদের বীর সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতীয় হামলার মোকাবিলা করছে।' তিনি রাজাকারদের হাতে আরও আধুনিক অস্ত্র দেওয়ার দাবি জানান।
জামায়াতের আরেক নায়েবে আমির মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে স্বাধীনতার বিরোধিতা করার অভিযোগ। মকবুল আহমাদ চট্টগ্রাম বিভাগীয় শান্তি কমিটির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন (মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান, পৃ-৪৩০)। মকবুল আহমাদ '৭১ সালের ১০ আগস্ট রেডিও পাকিস্তান চট্টগ্রামের ডিউটি অফিসার ইনচার্জ ফজলুল হককে লেখা এক চিঠিতে ফেনীর তাকিয়াবাড়ির মাওলানা সৈয়দ ওয়ায়েজউদ্দিনকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। এ জন্য তিনি ফেনী শহর রাজাকার কমান্ডার হানিফ ও উপদেষ্টা মাওলানা মোস্তফাকে চট্টগ্রামে পাঠান। পরে ১৭ আগস্ট চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে ওয়ায়েজউদ্দিনকে একটি জিপে করে তুলে নিয়ে যায় রাজাকাররা। এরপর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। স্বাধীনতার পর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মকবুল আহমাদের হাতে লেখা সেই চিঠিটি বাংলায় অনুবাদ করে বিলি করে। (তথ্য সূত্র : ফেনী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত সংবাদ)।
জামায়াতের আরেক নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও একজন চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি স্বাধীনতার প্রবল বিরোধিতা করেন। মানবতাবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিলেন বলেও স্থানীয় লোকজন ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এ অভিযোগ এনেছেন। যা বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
জামায়াতের অপর নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সুবহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনা জেলা শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন। 'একাত্তরের ঘাতক দালালরা কে কোথায়' ও 'মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান' বই দুটিতে এর উল্লেখ রয়েছে। মাওলানা সুবহানের সেই সময়কার কোনো বক্তব্য সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে খুঁজে পাওয়া না গেলেও তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান ও তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রসংঘের সভাপতি আশরাফ আলীর তত্ত্বাবধানে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃহত্তর ময়মনসিংহে আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক সংগ্রামের একটি প্রতিবেদনে কামারুজ্জামানকে ময়মনসিংহ জেলা আলবদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত দৈনিক সংগ্রামের খবরে বলা হয়, জেলা ছাত্রসংঘের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী জামালপুরে মোট ৫শ' দুষ্কৃতকারীকে (নিরীহ গ্রামবাসী ও মুক্তিযোদ্ধা) হত্যা করেছে। সেই সঙ্গে চার ভারতীয় চরকে আটক করেছে। ৭০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে আটক করার খবরও প্রকাশ করা হয়।
অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম আলবদর বাহিনীর রাজশাহী জেলা শাখার প্রধান ছিলেন (মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান, এ এস এম সামছুল আরেফিন পৃ-৪৩০)। ১৯৭১ সালের ১৭ অক্টোবর রংপুরের যে সভায় মুজাহিদ আলবদর বাহিনী প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন, সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন দলিল 'ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তান'-এর অক্টোবরের দ্বিতীয় ভাগের প্রতিবেদনে (১৩ নভেম্বর ১৯৭১ স্বরাষ্ট্র সচিব স্বাক্ষরিত) এ সভার কথা উল্লেখ আছে।
আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীর সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান, পৃ-৪৩০)। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করেন। ওই সময় প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে এর উল্লেখ রয়েছে।
নির্বাহী পরিষদের সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ আবদুজ জাহের '৭১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ও চট্টগ্রাম বদর বাহিনীর জেলাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন (মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান, পৃ-৪২৯)। ২ আগস্ট চট্টগ্রামের মুসলিম হলে এক সমাবেশে তিনি বলেন, 'ভারতের সকল চক্রান্ত নস্যাৎ করে পাকিস্তান টিকিয়ে রাখার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব।' (৩ আগস্ট দৈনিক সংগ্রাম)
http://www.samakal.com.bd/details.php?news=13&action=main&option=single&news_id=60127&pub_no=311
No comments:
Post a Comment