Sunday, April 18, 2010

দেশী-বিদেশী জঙ্গীদের সর্বশেষ পরিকল্পনা ॥ বিমান হামলা

দেশী-বিদেশী জঙ্গীদের সর্বশেষ পরিকল্পনা ॥ বিমান হামলা
০ ৩৬তম জঙ্গী সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে শিবির
০ জঙ্গীরা লেবাস পাল্টে ঢুকছে বিএনপির অভ্যন্তরে
০ আন্দোলনের নামে কেপিআইসহ স্থাপনা ধ্বংসের চেষ্টা চালাবে
০ পানি বিদ্যুত গার্মেন্টস সেক্টর অশান্ত করার চক্রান্ত হচ্ছে
০ উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীর বিচার নস্যাত
গাফফার খান চৌধুরী ॥ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাত করতে দেশী-বিদেশী জঙ্গী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে যুদ্ধাপরাধীরা। বাংলাদেশে দেশী-বিদেশী ৩৬ জঙ্গী সংগঠনের তৎপরতা রয়েছে। ৩৬তম জঙ্গী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গসংগঠন ছাত্র শিবিরের নাম রয়েছে। কূটনৈতিক মিশন ব্যর্থ হওয়ায় যুদ্ধাপরাধীদের টার্গেট এবার পানি, বিদ্যুত, গার্মেন্টস সেক্টরকে অশান্ত করার । এ লক্ষ্যে তারা দেশজুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করে সরকার বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে তুলতে চাইছে । ভবিষ্যতে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ বড় বড় সরকারী স্থাপনাও রয়েছে তাদের হামলার টার্গেটে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে অবস্থিত বিমানবন্দরের ১শ' ১৭ ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট সম্পর্কে সরকারের কাছে গোয়েন্দা রিপোর্ট দাখিল করা হচ্ছে। এসব পয়েন্টে বিধিনিষেধ আরোপ করার প্রস্তাবও দেয়া হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো এখন সময়সাপেৰ বিষয়। বিচার প্রক্রিয়া বর্তমান সরকারের শেষ সময় পর্যন্তও গড়াতে পারে। যু্দ্ধাপরাধীরা এই দীর্ঘ সময়কে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। বিচার প্রক্রিয়া নস্যাত করতে যুদ্ধাপরাধীদের কূটনৈতিক মিশন ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তরফ থেকে বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে তারা হস্তক্ষেপ করবে না। যুদ্ধাপরাধীরা বিচারের শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে নানামুখী কৌশল নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের হিসাবমতে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারবে না। তবে বিচারের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।
এ জন্য পানি ও বিদ্যুতকে ইস্যু করে সরকারবিরোধী আন্দোলনের চেষ্টা করে যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গোপনে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার ছাত্রশিবির কর্মীদের লেবাস পরিবর্তন করে ঢাকায় আনা হয়েছে। বিএনপির যেকোন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অগ্রবর্তী দল হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে এরা। প্রয়োজনে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মসূচীতেও হামলা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। গার্মেন্টস সেক্টরকে অস্থির করে তুলতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে কাজ করছে। এ খাতে প্রচুর অর্থ ঢালছে। প্রায় মাসখানেক ধরে পানির দাবিতে রাজধানীতে যে বিৰোভ হয়েছে এরও নেপথ্যে কাজ করেছে জামায়াত-শিবির। সর্বশেষ বিমান হামলা করে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এ জন্য লেবাস পরিবর্তন করে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের সদস্য ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে মিশে গেছে। কৌশল পরিবর্তনের এসব দিকনির্দেশনা আসছে যুদ্ধাপরাধীদের কাছ থেকে।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকারকে ৰমতায় যেতে হলে পানি ও বিদু্যত সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে। এজন্য বর্তমান সরকার দেশে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পারমাণবিক বিদু্যত কেন্দ্র স্থাপন করে দেশে বিদ্যুতের স্থায়ী সমাধান করে বর্তমান সরকার আগামীতেও ক্ষমতায় যেতে চায়। সেক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কোন উপায় থাকবে না। এ জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হিসেবে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে পরবর্তী হামলার সম্ভাব্য টার্গেট হিসেবে নিয়েছে যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গীরা। পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে সরকারের ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাশিয়া থেকে ঘুরে এসেছে। পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের মধ্যদিয়ে বিদ্যুত সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া যাওয়ার কথা রয়েছে। আগামীতে ক্ষমতা গিয়ে আওয়ামী লীগ যাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে না পারে এ জন্য পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রেও হামলার টার্গেট রয়েছে যু্দ্ধাপরাধীদের। হামলায় দেশী-বিদেশী জঙ্গীদের ব্যবহার করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬১ সালে ঈশ্বরদীর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এজন্য ২শ' ৯২ একর জমি অধিগ্রহণও করা হয়। ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ৭০ মেগাওয়াট, ১৯৬৬ সালে ১৪০ মোগওয়াট, ১৯৬৯ সালে ২শ' মেগাওয়াট ও ১৯৮০ সালে ১শ' ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক জ্বালানি প্লান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রটি ৬শ' মেগাওয়াটে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০১ সালে প্রকল্পটি বাংলাদেশ ন্যাশনাল নিউকিয়ার পাওয়ার এ্যাকশন প্লান্টের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থা (আইএইএ) বাংলাদেশকে পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেয়। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, দৰিণ কোরিয়ার পর গত বছরের মে মাসে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নিমর্াণে সমঝোতা স্মারক স্বাৰর করে বাংলাদেশ। রাশিয়ার সঙ্গে করা সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বিদু্যত কেন্দ্র নিমর্াণে দেশটি অবকাঠামোগত নিমর্াণ, বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থা, জনশক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কারিগরি সহায়তা দেবে। প্রথম দফায় দু'টি পস্নান্টের প্রতিটিতে ৫শ' করে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ রি-এ্যাক্টর প্রযুক্তিতে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাশিয়া বর্তমানে ৩১ টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করছে। পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন রি-এ্যাক্টর প্রযুক্তি দিয়ে ফ্রান্সের বিদ্যুত চাহিদার ৮০ শতাংশ পূরণ করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৪৩৯ রি-এ্যাক্টর চুল্লি রয়েছে। এর মধ্যে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রয়েছে ১৩৬ টি। প্রতিবেশী ভারতে ১৭ চুলিস্ন থেকে ৪ হাজার ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হয়। পাকিস্তানে দুটি চুল্লি থেকে ৪২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হয়। গত এক বছরে রাশিয়া, ভারত, আর্মেনিয়া, হাঙ্গেরি, উজবেকিস্তান, স্লোভাকিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, বুলগেরিয়া এবং জার্মানিতে ৬৫ প্লান্ট সরবরাহ করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৪৩৯ পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে বর্তমানে মোট চাহিদার ১৬ শতাংশ বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়।
আইএইএ বাংলাদেশকে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার করতে অনুমতি দিয়েছে। দেশে ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। দেশে বর্তমানে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে বিদু্যত উৎপাদন বাড়িয়ে সাত হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। এছাড়া ২০২১ সালে সকলের কাছে বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার করেছে সরকার। সরকারের এমন ঘোষণাকে নস্যাত করতে মরিয়া যুদ্ধাপরাধীরা। বিদ্যুত ঘাটতি মেটানো সম্ভব হলে আগামীতে নিশ্চিতভাবেই আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় যাবে। এতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো ছাড়া কোন পথ থাকবে না। এ জন্যই যু্দ্ধাপরাধীদের পরবর্তী টার্গেট পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে এদেশে তৎপর ৩৬টি সংগঠন হুমকি বলে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে দেশী-বিদেশী সরকারী উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে আলোচিত হয়েছে। আলোচকরা সংগঠনগুলোকে জঙ্গী সংগঠন হিসেবে মতামত ব্যক্ত করেছেন। এসব সংগঠন_ জেএমবি, জেএমজেবি, হুজি, হিযবুত তাহরীর, হিযবুত তাওহীদ, আনজুমানে বাইয়্যিনাত, আবু সায়েফ, উলফা (ভারত), তা'আমীর উদ্দিন, আইডিপি (ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি), আহলে হাদিস (একাংশ), ফ্রিডম পার্টি, মরো ইসলামিক লিবারেশন (ফিলিপিন্স), হামাস, হিজবুলস্নাহ, হরকাতুল মুজাহিদীন (পাকিস্তান), এলটিটিই, জঈশ-ই-মোহাম্মদ (পাকিসত্মান), আল কায়েদা, হরকতুল আনসার (পাকিস্তান), লস্কর-ই-তৈয়বা (পাকিস্তান), জামা'য়াত-উল-ফোকরা (আরব), লস্কর-ই-ওমর (পাকিস্তান) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পারমাণবিক স্থাপনার জন্য হুমকিসরূপ। সর্বশেষ জঙ্গী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গসংগঠন ছাত্রশিবিরকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মোটমুটি ৩৬টি সংগঠনের বিস্তারিত কর্মকা-সহ একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে এদেশীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে।

http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2010-04-16&ni=14989

No comments: