ক্ষণে ক্ষণে হাওয়া পাল্টাচ্ছে
ভোলা-৩ নির্বাচন
মামুন-অর-রশিদ/হাসিব রহমান, লালমোহন থেকে ॥ শেষ সময়ে হঠাৎ করেই বদলে গেছে ভোলা-৩ নির্বাচনী এলাকার দৃশ্যপট। দুই দলের প্রচারে আক্রমণ পাল্টা-আক্রমণ আর গুজবে ৰণে ৰণে বাতাস পাল্টাচ্ছে গোটা লালমোহন ও তজুমদ্দিনে। উপনির্বাচনের বিজয়ের মুকুট পরতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যনত্ম দুই দলের বিরামহীন প্রচারে জমজমাট এখন এ দ্বীপ জেলাটি। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে নেমেছেন শাওন-হাফিজ। নির্বাচনের আর মাত্র ৪ দিন বাকি রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে বিএনপি এত দিন কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও শেষ সময়ে এসে প্রচারের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। সর্বশেষ নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যবেৰণ করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা দু'দিনের সফরে ভোলায় এসেছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে প্রচার চালাতে ইতোমধ্যে দুই প্রাথর্ীকে সতর্ক করেছে নির্বাচন কমিশন।
ভোলা-৩ লালমোহন-তজুমদ্দিন আসনের উপনির্বাচনে এবার লড়াই হবে সমানে-সমান। তবে শেষ পর্যনত্ম বিএনপি নির্বাচনে থাকলেই এই লড়াই জমবে। বিএনপি প্রার্থীর গতিবিধি এবং অভিযোগ ও গুজবের খেলায় স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ সংশয়ে রয়েছেন, শেষ পর্যনত্ম বিএনপি প্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে থাকবেন তো! স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন মহলে কথা হচ্ছে বিএনপি শেষ মুহূর্তে গিয়ে নির্বাচন বর্জন করতে পারে। তবে এই নির্বাচনী প্রচারে কেন্দ্র থেকে আসা বিএনপি নেতাদের বক্তব্য ভিন্ন। তাদের কথা শেষ পর্যনত্ম মাঠে থেকে বিজয়ী হলে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতার সেস্নাগান তুলবে। আর পরাজিত হলে আরেকটি মাগুরা কাহিনী বানাবে। শেষ পর্যনত্ম দু'জন প্রার্থী মাঠে থাকলে লড়াই হবে সমানে সমান।
যদিও স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে এখনও চূড়ানত্ম সিদ্ধানত্মের কোন আভাস পাওয়া যায়নি। তবে দুই দলের প্রচার আক্রমণ পাল্টা-আক্রমণ আর গুজবে ৰণে ৰণে বাতাস পাল্টাচ্ছে গোটা লালমোহন-তজুমদ্দিনে। একদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নতুন মুখ নূরম্নন্নবী চৌধুরী শাওন সর্বত্র জাগিয়ে তুলেছে আশাবাদ। অন্যদিকে এ আসন থেকে পর পর ৬ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ সরকারের নানান ব্যর্থতা তুলে ধরে গণজাগরণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি ভাবছেন ৬ বারের এমপি হবার কারণে সর্বত্রই তাঁর ভোট রয়েছে। মূল লড়াই হবে ভোটে। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালের নির্বাচনে হাফিজউদ্দিন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেজর (অব) জসিমউদ্দিনের কাছে ১৭ হাজার ভোটে হেরেছিলেন। তখনই আসনটি হাতছাড়া হয় হাফিজের।
তবে আওয়ামী লীগের সর্বসত্মরের নেতাকমর্ী, সমর্থকরা এককাট্টা হয়ে দলীয় প্রাথর্ী নূরম্নন্নবী চৌধুরী শাওনের পৰে জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচার চালালেও বিএনপির একাংশ এবং রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতকে পুরোমাত্রায় সক্রিয় করতে না পারায় এখনও কিছুটা বেকায়দায় বিএনপি প্রাথর্ী মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ।
এই উপনির্বাচনকে ঘিরে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। জয়-পরাজয় যা-ই হোক, এ উপনির্বাচনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে বিএনপি যে ব্যবহার করবে, তার আলামত ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। খোদ দলটির প্রধান খালেদা জিয়া খুলনার সমাবেশে ঘোষণা করেছেন, ভোলার নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরম্নদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আওয়ামী লীগসহ স্থানীয় ভোটারদের মতে, জিতলে সরকারের ব্যর্থতা প্রচার, আর হারলে কারচুপির অভিযোগ তুলে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ৰেত্র আগে থেকেই প্রস্তুত করতে এসব বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।
হাফিজ গত ৬ বার এমপি থাকা অবস্থায় এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা বলছেন। বিদু্যত, পানিতে সরকারের ব্যর্থতার কথা বলছেন। লালমোহনের নদী ভাঙ্গন রোধের আশ্বাস দিচ্ছেন। তবে তাঁর নির্বাচনী প্রচারে সমন্বিত কোন পরিকল্পনা লৰ্য করা যায়নি। তাঁর নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় ঢিলেঢালা ভাবের কথা বলছেন স্থানীয় সাধারণ ভোটাররা। তবে সরকারী দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরম্নদ্ধে ৰণে ৰণে নানা গুজব ছড়ানোর কাজটি তাঁর নির্বাচন পরিচালকরা যথেষ্ট দৰতার সঙ্গে করছেন।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরম্নন্নবী চৌধুরী শাওন নির্বাচনী প্রচারে ব্যাপক শোডাউন করছেন। কেন্দ্রীয় স্থানীয় নেতাদের কয়েকটি টিমে ভাগ করে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা প্রচারে ব্যসত্ম থাকছেন। আশ্বাস দিচ্ছেন এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্যনিরসনের জন্য তিনি সরকারের কৃপা নিয়ে কাজ করবেন। একবারে তরম্নণ উদীয়মান নেতা হিসেবে তিনি ব্যাপক আলোড়ন তুলেছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর এ আসনে হাফিজউদ্দিন নির্বাচিত হলে রাজনৈতিক প্রতিপৰ ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি যে বর্বর নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন সেখান থেকে বাঁচতেও এবার অনেকে শাওনমুখী হয়েছেন। সরকারী দলের প্রার্থীর ওপর মানুষের কিছুটা দুর্বলতা তৈরি হয়েছে এলাকার উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বার্থে। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী হাফিজকে ভোট দিয়ে এলাকাবাসী পেয়েছে হাফিজের নিজের এবং তাঁর ভাতিজার প্রাসাদোপম দু'টি বাড়ি, যা মানুষের চোখ ঝাঁজিয়ে তুলছে। তাছাড়া হাফিজের মৌমাছির বাহিনীর প্রতি মানুষের দীর্ঘদিনের ৰোভেরও প্রকাশ ঘটছে নির্বাচনী প্রচারণায় হাফিজকে সামনে পেয়ে।
অস্ত্র উদ্ধার কাহিনী
ভোলার লালমোহনে যখন নির্বাচনী প্রচার নিয়ে দুই গ্রম্নপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলছে তখনই হঠাৎ লালমোহনে অস্ত্র উদ্ধার যেন বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। রবিবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পড়ে লালমোহনে আওয়ামী লীগ নেতাদের গাড়ি বহর থেকে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা অস্ত্র উদ্ধার করেছে। কিন্তু অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে নিশ্চিত কোন তথ্য কেউ দিতে পারেনি। রাতভর চলে এ নিয়ে নানা গুঞ্জন ও রটনা। সোমবার সকালে সত্যিই একটি অস্ত্রের ব্যাগের সন্ধান পাওয়া যায়।
লালমোহন থানার এসআই এনামুল হাসান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের একটি টিম অভিযানে নামে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের জনৈক আবুল কাশেমের বাড়ির পাশর্্ববর্তী ধান ৰেত থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়। একটি সিমেন্টের ব্যাগের ভেতর অস্ত্রগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তিনি জানান, অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে পয়েন্ট ৩২ বোর রিভলবার, যার গায়ে 'মেড ইন জাপান' লেখা, একটি চাইনিজ কুড়াল, একটি চাপাতি ও দু'টি ছোরা। পুলিশ জানায়, এ ব্যাপারে কাউকে আটক করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনে সহিংসতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এগুলো আনা হয়েছিল।
ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে জখম
বিএনপি কর্মী গ্রেফতার
ভোলার লালমোহনে রবিবার রাতে ফরাজগঞ্জ বাজারে ছাত্রলীগ কর্মী ফরহাদকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, বিএনপি ক্যাডাররা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় রবিবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিএনপির কর্মী মোসত্মফা ও দিল মোহাম্মদকে গ্রেফতার করে। সোমবার সকালে আওয়ামী লীগ সমর্থক আব্দুস সাত্তার বাদী হয়ে বিএনপির ২০ নেতাকর্মীকে আসামি করে লালমোহন থানায় মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় মোসত্মফাকে আসামি দেখিয়ে কোর্টে প্রেরণ করা হয়।
বিভিন্ন স্থানে হামলা অব্যাহত
লালমোহনের চরভুতা ইউনিয়নের বাংলাবাজারে সোমবার ১টার দিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া হয়। বিএনপি অভিযোগ করে, ওই সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা চরভুতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আক্তারম্নজ্জামান টিটব, ইউপি মেম্বার কামাল সরকারকে মারধর করে। বিএনপির নেতৃবৃন্দের জনসংযোগ করার আগে এ ঘটনা ঘটে। অপরদিকে, আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে এ ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত নয়। এ দিকে মেজর হাফিজের স্ত্রী দিলারা হাফিজ সকাল ১১টায় ধলিগৌরনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করে ফেরার পথে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওই হামলায় অনত্মত ৫ জন আহত হয়। তবে তাদের নাম জানা যায়নি।
গণসংযোগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরম্নন্নবী চৌধুরী শাওনের নির্বাচনী প্রচারে ব্যসত্ম সময় কাটাচ্ছেন দলের সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। এমনকি বসে নেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরম্নন্নবী শাওন নিজেও। দ্বারে দ্বারে ভোট ভিৰা চাইছেন। প্রতিশ্রম্নতি দিচ্ছেন উন্নয়ন আর অগ্রগতির। তিনি দিনরাত যখন ঘুরে বেড়ান ভোটারদের দ্বারে দ্বারে তখনই উৎসক জনতার ঢল নামে তাঁর পিছনে। তিনি প্রচারের কাজে এমন ব্যসত্ম হয়ে পড়েছেন যেন ঘুমানোর সময়টুকুও তাঁর নেই। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে গ্রম্নপে গ্রম্নপে ভাগ হয়ে স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ কয়েকটি টিম দুই উপজেলায় দিনরাত নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। সোমবার শাওন লালমোহন উপজেলার গজারিয়া বাজারসহ কয়েকটি ইউনিয়নে গণসংযোগ ও পথসভায় অংশ নেন। তাঁর পৰে প্রচারণায় নামেন আওয়ামী লীগের ভোলা-৩ আসনের নির্বাচনী সমন্বয়ক উপদেষ্টাম-লীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ। তিনি সোমবার লালমোহনে ৮/১০টি পথসভা ও গণসংযোগ করে শাওনের জন্য ভোট চান। এ ছাড়াও লালমোহন ও তজুমদ্দিনে ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুলস্নাহ আল ইসলাম জ্যাকব, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এমপি গোলাম মাহাবুব টুলু, শাজাহান ভুইয়া মাখন, যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবর রহমান হিরণ, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার, বলরাম পোদ্দার, খলিলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন সংক্রানত্ম বিশেষ দায়িত্বে নিয়োজিত ওবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান শাহিন, লালমোহন উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যৰ নজরম্নল ইসলমসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রচার ॥ উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদের নির্বাচনী প্রচারে লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলায় মাঠঘাট চষে বেড়ান। প্রায় কেন্দ্রীয় ৫০ নেতা ভোলায় অবস্থান করছেন। এসব নেতার মধ্যে যাঁদের নাম জানা গেছে তাঁরা হচ্ছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উলস্নাহ আমান, সংসদ সদস্য শহিদুলস্নাহ চৌধুরী এ্যানি, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সংসদ সদস্য আফসার উদ্দিন মিজান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আনোয়ার হোসেন, সংসদ সদস্য সোহরাব হোসেন, সংসদ সদস্য মুকুল, সংসদ সদস্য হারম্নন, সরোয়ার জাহান নিজাম, সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার, কর্নেল (অব) শাজাহান, সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহিম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, বিএনপির শিৰা বিষয়ক সম্পাদক খায়রম্নল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি সুতলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহসভাপতি হায়দার আলী লেনিন, জেলা যুবদল সভাপতি ইয়ারম্নল আলম লিটন প্রমুখ। বিএনপি সূত্র জানায়, মেজর হাফিজ সোমবার তজুমদ্দিন উপজেলার চর জহিরম্নদ্দিনসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি টিম তজুমদ্দিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন। আমান উলস্নাহ আমান ও সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ারের নেতৃত্বে দু'টিসহ মোট ৬টি টিম প্রচারণার ব্যসত্ম সময় কাটায়।
নির্বাচন পর্যবেৰণে ভোলায় সিইসি ॥ ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনের সর্বশেষ পরিস্থিতি দেখতে এবার ভোলায় দু'দিনের সফরে আজ মঙ্গলবার ভোলায় আসছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা। তিনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নিবেন। তাঁর ২ দিনের সফরসূচীতে রয়েছে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের সভাকৰে সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রৰাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক, দুপুর ২টায় নির্বাচন পর্যবেৰকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে বিকেল ৩টায় লালমোহনে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময়। পর দিন বুধবার তজুমদ্দিন উপজেলায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ ভোটারদের সঙ্গে মতবিমিনয় করবেন।
হাফিজ-শাওনকে ইসির সতর্ক ॥ আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালাতে ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনের দুই প্রাথর্ীকে সতর্ক করতে সোমবার এক চিঠিতে ভোলার রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব (আইন) এ কে এম সলিমুলস্নাহ স্বাৰরিত কমিশনের চিঠিটি সোমবার সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ফ্যাঙ্যোগে পাঠানো হয়েছে। লালমোহন উপজেলায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা তদনত্মে যুগ্ম জেলা জজের নেতৃত্বে বিচারিক তদনত্ম প্রতিবেদনের প্রেৰিতে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রাথর্ী নূরম্নন্নবী চৌধুরী শাওন ও বিএনপির প্রাথর্ী মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদকে সতর্ক করে চিঠি দেয়ার সিদ্ধানত্ম হয় বলে জানা গেছে।
তোফায়েলের সাংবাদিক সম্মেলন ॥ ভোলা-৩ উপনির্বাচনী পরিবেশ শানত্ম উলেস্নখ করে তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বিএনপির প্রাথর্ী গায়ে পড়ে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, নির্বাচন পর্যনত্ম সবকিছু নীরবে সহ্য করতে হবে। আওয়ামী লীগ চায় না এ উপনির্বাচনে গায়ে কাঁদা লাগাতে। এ কারণে যে কোন মূল্যে সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করছি। নির্বাচন কমিশনকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। সোমবার লালমোহনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক তোফায়েল আহমেদ সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুর রউফের উপনির্বাচন বন্ধ করে দেয়ার ব্যাপারে যে মনত্মব্য করেছেন জাতির কাছে তা কখনই গ্রহণযোগ্য হবে না। আবদুর রউফ প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালীন উপনির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অগ্রহণযোগ্য মাগুরার নির্বাচন উপহার দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়ী করছে। আবার এই নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি তুলে আন্দোলনের কথা বলছে। তারা হেরে গেলেও সেনাবাহিনী তাদের হারিয়ে দিয়েছে বলে অপপ্রচার চালাবে। স্ববিরোধিতার ভূমিকা এখন বিএনপির মজ্জাগত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভোলা-৩ লালমোহন-তজুমদ্দিন আসনের উপনির্বাচনে এবার লড়াই হবে সমানে-সমান। তবে শেষ পর্যনত্ম বিএনপি নির্বাচনে থাকলেই এই লড়াই জমবে। বিএনপি প্রার্থীর গতিবিধি এবং অভিযোগ ও গুজবের খেলায় স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ সংশয়ে রয়েছেন, শেষ পর্যনত্ম বিএনপি প্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে থাকবেন তো! স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন মহলে কথা হচ্ছে বিএনপি শেষ মুহূর্তে গিয়ে নির্বাচন বর্জন করতে পারে। তবে এই নির্বাচনী প্রচারে কেন্দ্র থেকে আসা বিএনপি নেতাদের বক্তব্য ভিন্ন। তাদের কথা শেষ পর্যনত্ম মাঠে থেকে বিজয়ী হলে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতার সেস্নাগান তুলবে। আর পরাজিত হলে আরেকটি মাগুরা কাহিনী বানাবে। শেষ পর্যনত্ম দু'জন প্রার্থী মাঠে থাকলে লড়াই হবে সমানে সমান।
যদিও স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে এখনও চূড়ানত্ম সিদ্ধানত্মের কোন আভাস পাওয়া যায়নি। তবে দুই দলের প্রচার আক্রমণ পাল্টা-আক্রমণ আর গুজবে ৰণে ৰণে বাতাস পাল্টাচ্ছে গোটা লালমোহন-তজুমদ্দিনে। একদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নতুন মুখ নূরম্নন্নবী চৌধুরী শাওন সর্বত্র জাগিয়ে তুলেছে আশাবাদ। অন্যদিকে এ আসন থেকে পর পর ৬ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ সরকারের নানান ব্যর্থতা তুলে ধরে গণজাগরণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি ভাবছেন ৬ বারের এমপি হবার কারণে সর্বত্রই তাঁর ভোট রয়েছে। মূল লড়াই হবে ভোটে। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালের নির্বাচনে হাফিজউদ্দিন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেজর (অব) জসিমউদ্দিনের কাছে ১৭ হাজার ভোটে হেরেছিলেন। তখনই আসনটি হাতছাড়া হয় হাফিজের।
তবে আওয়ামী লীগের সর্বসত্মরের নেতাকমর্ী, সমর্থকরা এককাট্টা হয়ে দলীয় প্রাথর্ী নূরম্নন্নবী চৌধুরী শাওনের পৰে জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচার চালালেও বিএনপির একাংশ এবং রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতকে পুরোমাত্রায় সক্রিয় করতে না পারায় এখনও কিছুটা বেকায়দায় বিএনপি প্রাথর্ী মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ।
এই উপনির্বাচনকে ঘিরে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। জয়-পরাজয় যা-ই হোক, এ উপনির্বাচনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে বিএনপি যে ব্যবহার করবে, তার আলামত ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। খোদ দলটির প্রধান খালেদা জিয়া খুলনার সমাবেশে ঘোষণা করেছেন, ভোলার নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরম্নদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আওয়ামী লীগসহ স্থানীয় ভোটারদের মতে, জিতলে সরকারের ব্যর্থতা প্রচার, আর হারলে কারচুপির অভিযোগ তুলে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ৰেত্র আগে থেকেই প্রস্তুত করতে এসব বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।
হাফিজ গত ৬ বার এমপি থাকা অবস্থায় এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা বলছেন। বিদু্যত, পানিতে সরকারের ব্যর্থতার কথা বলছেন। লালমোহনের নদী ভাঙ্গন রোধের আশ্বাস দিচ্ছেন। তবে তাঁর নির্বাচনী প্রচারে সমন্বিত কোন পরিকল্পনা লৰ্য করা যায়নি। তাঁর নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় ঢিলেঢালা ভাবের কথা বলছেন স্থানীয় সাধারণ ভোটাররা। তবে সরকারী দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরম্নদ্ধে ৰণে ৰণে নানা গুজব ছড়ানোর কাজটি তাঁর নির্বাচন পরিচালকরা যথেষ্ট দৰতার সঙ্গে করছেন।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরম্নন্নবী চৌধুরী শাওন নির্বাচনী প্রচারে ব্যাপক শোডাউন করছেন। কেন্দ্রীয় স্থানীয় নেতাদের কয়েকটি টিমে ভাগ করে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা প্রচারে ব্যসত্ম থাকছেন। আশ্বাস দিচ্ছেন এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্যনিরসনের জন্য তিনি সরকারের কৃপা নিয়ে কাজ করবেন। একবারে তরম্নণ উদীয়মান নেতা হিসেবে তিনি ব্যাপক আলোড়ন তুলেছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর এ আসনে হাফিজউদ্দিন নির্বাচিত হলে রাজনৈতিক প্রতিপৰ ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি যে বর্বর নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন সেখান থেকে বাঁচতেও এবার অনেকে শাওনমুখী হয়েছেন। সরকারী দলের প্রার্থীর ওপর মানুষের কিছুটা দুর্বলতা তৈরি হয়েছে এলাকার উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বার্থে। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী হাফিজকে ভোট দিয়ে এলাকাবাসী পেয়েছে হাফিজের নিজের এবং তাঁর ভাতিজার প্রাসাদোপম দু'টি বাড়ি, যা মানুষের চোখ ঝাঁজিয়ে তুলছে। তাছাড়া হাফিজের মৌমাছির বাহিনীর প্রতি মানুষের দীর্ঘদিনের ৰোভেরও প্রকাশ ঘটছে নির্বাচনী প্রচারণায় হাফিজকে সামনে পেয়ে।
অস্ত্র উদ্ধার কাহিনী
ভোলার লালমোহনে যখন নির্বাচনী প্রচার নিয়ে দুই গ্রম্নপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলছে তখনই হঠাৎ লালমোহনে অস্ত্র উদ্ধার যেন বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। রবিবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পড়ে লালমোহনে আওয়ামী লীগ নেতাদের গাড়ি বহর থেকে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা অস্ত্র উদ্ধার করেছে। কিন্তু অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে নিশ্চিত কোন তথ্য কেউ দিতে পারেনি। রাতভর চলে এ নিয়ে নানা গুঞ্জন ও রটনা। সোমবার সকালে সত্যিই একটি অস্ত্রের ব্যাগের সন্ধান পাওয়া যায়।
লালমোহন থানার এসআই এনামুল হাসান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের একটি টিম অভিযানে নামে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের জনৈক আবুল কাশেমের বাড়ির পাশর্্ববর্তী ধান ৰেত থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়। একটি সিমেন্টের ব্যাগের ভেতর অস্ত্রগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তিনি জানান, অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে পয়েন্ট ৩২ বোর রিভলবার, যার গায়ে 'মেড ইন জাপান' লেখা, একটি চাইনিজ কুড়াল, একটি চাপাতি ও দু'টি ছোরা। পুলিশ জানায়, এ ব্যাপারে কাউকে আটক করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনে সহিংসতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এগুলো আনা হয়েছিল।
ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে জখম
বিএনপি কর্মী গ্রেফতার
ভোলার লালমোহনে রবিবার রাতে ফরাজগঞ্জ বাজারে ছাত্রলীগ কর্মী ফরহাদকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, বিএনপি ক্যাডাররা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় রবিবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিএনপির কর্মী মোসত্মফা ও দিল মোহাম্মদকে গ্রেফতার করে। সোমবার সকালে আওয়ামী লীগ সমর্থক আব্দুস সাত্তার বাদী হয়ে বিএনপির ২০ নেতাকর্মীকে আসামি করে লালমোহন থানায় মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় মোসত্মফাকে আসামি দেখিয়ে কোর্টে প্রেরণ করা হয়।
বিভিন্ন স্থানে হামলা অব্যাহত
লালমোহনের চরভুতা ইউনিয়নের বাংলাবাজারে সোমবার ১টার দিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া হয়। বিএনপি অভিযোগ করে, ওই সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা চরভুতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আক্তারম্নজ্জামান টিটব, ইউপি মেম্বার কামাল সরকারকে মারধর করে। বিএনপির নেতৃবৃন্দের জনসংযোগ করার আগে এ ঘটনা ঘটে। অপরদিকে, আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে এ ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত নয়। এ দিকে মেজর হাফিজের স্ত্রী দিলারা হাফিজ সকাল ১১টায় ধলিগৌরনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করে ফেরার পথে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওই হামলায় অনত্মত ৫ জন আহত হয়। তবে তাদের নাম জানা যায়নি।
গণসংযোগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরম্নন্নবী চৌধুরী শাওনের নির্বাচনী প্রচারে ব্যসত্ম সময় কাটাচ্ছেন দলের সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। এমনকি বসে নেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরম্নন্নবী শাওন নিজেও। দ্বারে দ্বারে ভোট ভিৰা চাইছেন। প্রতিশ্রম্নতি দিচ্ছেন উন্নয়ন আর অগ্রগতির। তিনি দিনরাত যখন ঘুরে বেড়ান ভোটারদের দ্বারে দ্বারে তখনই উৎসক জনতার ঢল নামে তাঁর পিছনে। তিনি প্রচারের কাজে এমন ব্যসত্ম হয়ে পড়েছেন যেন ঘুমানোর সময়টুকুও তাঁর নেই। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে গ্রম্নপে গ্রম্নপে ভাগ হয়ে স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ কয়েকটি টিম দুই উপজেলায় দিনরাত নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। সোমবার শাওন লালমোহন উপজেলার গজারিয়া বাজারসহ কয়েকটি ইউনিয়নে গণসংযোগ ও পথসভায় অংশ নেন। তাঁর পৰে প্রচারণায় নামেন আওয়ামী লীগের ভোলা-৩ আসনের নির্বাচনী সমন্বয়ক উপদেষ্টাম-লীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ। তিনি সোমবার লালমোহনে ৮/১০টি পথসভা ও গণসংযোগ করে শাওনের জন্য ভোট চান। এ ছাড়াও লালমোহন ও তজুমদ্দিনে ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুলস্নাহ আল ইসলাম জ্যাকব, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এমপি গোলাম মাহাবুব টুলু, শাজাহান ভুইয়া মাখন, যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবর রহমান হিরণ, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার, বলরাম পোদ্দার, খলিলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন সংক্রানত্ম বিশেষ দায়িত্বে নিয়োজিত ওবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান শাহিন, লালমোহন উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যৰ নজরম্নল ইসলমসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রচার ॥ উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদের নির্বাচনী প্রচারে লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলায় মাঠঘাট চষে বেড়ান। প্রায় কেন্দ্রীয় ৫০ নেতা ভোলায় অবস্থান করছেন। এসব নেতার মধ্যে যাঁদের নাম জানা গেছে তাঁরা হচ্ছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উলস্নাহ আমান, সংসদ সদস্য শহিদুলস্নাহ চৌধুরী এ্যানি, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সংসদ সদস্য আফসার উদ্দিন মিজান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আনোয়ার হোসেন, সংসদ সদস্য সোহরাব হোসেন, সংসদ সদস্য মুকুল, সংসদ সদস্য হারম্নন, সরোয়ার জাহান নিজাম, সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার, কর্নেল (অব) শাজাহান, সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহিম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, বিএনপির শিৰা বিষয়ক সম্পাদক খায়রম্নল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি সুতলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহসভাপতি হায়দার আলী লেনিন, জেলা যুবদল সভাপতি ইয়ারম্নল আলম লিটন প্রমুখ। বিএনপি সূত্র জানায়, মেজর হাফিজ সোমবার তজুমদ্দিন উপজেলার চর জহিরম্নদ্দিনসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি টিম তজুমদ্দিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন। আমান উলস্নাহ আমান ও সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ারের নেতৃত্বে দু'টিসহ মোট ৬টি টিম প্রচারণার ব্যসত্ম সময় কাটায়।
নির্বাচন পর্যবেৰণে ভোলায় সিইসি ॥ ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনের সর্বশেষ পরিস্থিতি দেখতে এবার ভোলায় দু'দিনের সফরে আজ মঙ্গলবার ভোলায় আসছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা। তিনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নিবেন। তাঁর ২ দিনের সফরসূচীতে রয়েছে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের সভাকৰে সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রৰাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক, দুপুর ২টায় নির্বাচন পর্যবেৰকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে বিকেল ৩টায় লালমোহনে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময়। পর দিন বুধবার তজুমদ্দিন উপজেলায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ ভোটারদের সঙ্গে মতবিমিনয় করবেন।
হাফিজ-শাওনকে ইসির সতর্ক ॥ আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালাতে ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনের দুই প্রাথর্ীকে সতর্ক করতে সোমবার এক চিঠিতে ভোলার রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব (আইন) এ কে এম সলিমুলস্নাহ স্বাৰরিত কমিশনের চিঠিটি সোমবার সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ফ্যাঙ্যোগে পাঠানো হয়েছে। লালমোহন উপজেলায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা তদনত্মে যুগ্ম জেলা জজের নেতৃত্বে বিচারিক তদনত্ম প্রতিবেদনের প্রেৰিতে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রাথর্ী নূরম্নন্নবী চৌধুরী শাওন ও বিএনপির প্রাথর্ী মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদকে সতর্ক করে চিঠি দেয়ার সিদ্ধানত্ম হয় বলে জানা গেছে।
তোফায়েলের সাংবাদিক সম্মেলন ॥ ভোলা-৩ উপনির্বাচনী পরিবেশ শানত্ম উলেস্নখ করে তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বিএনপির প্রাথর্ী গায়ে পড়ে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, নির্বাচন পর্যনত্ম সবকিছু নীরবে সহ্য করতে হবে। আওয়ামী লীগ চায় না এ উপনির্বাচনে গায়ে কাঁদা লাগাতে। এ কারণে যে কোন মূল্যে সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করছি। নির্বাচন কমিশনকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। সোমবার লালমোহনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক তোফায়েল আহমেদ সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুর রউফের উপনির্বাচন বন্ধ করে দেয়ার ব্যাপারে যে মনত্মব্য করেছেন জাতির কাছে তা কখনই গ্রহণযোগ্য হবে না। আবদুর রউফ প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালীন উপনির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অগ্রহণযোগ্য মাগুরার নির্বাচন উপহার দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়ী করছে। আবার এই নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি তুলে আন্দোলনের কথা বলছে। তারা হেরে গেলেও সেনাবাহিনী তাদের হারিয়ে দিয়েছে বলে অপপ্রচার চালাবে। স্ববিরোধিতার ভূমিকা এখন বিএনপির মজ্জাগত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
No comments:
Post a Comment