Tuesday, April 13, 2010

ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী সংস্থার কাজই মুখ্য।

নিয়োগ দেয়া হয়েছে দুই রেজিস্ট্রার, যোগ দিচ্ছেন তদন্ত কর্মকর্তারা
যুদ্ধাপরাধী বিচার
স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে সরকারের গঠিত ট্রাইব্যুনালে রেজিস্ট্রার এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল-৩-এর সদস্য (জেলাজজ) মোঃ শাহিনুর ইসলামকে রেজিস্ট্রার এবং আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা (যুগ্ম জেলাজজ) মোঃ সেলিম মিয়াকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রসিকিউটর হিসেবে আব্দুর রহমান হাওলাদার যোগদান করেছেন। রেজিস্ট্রার নিয়োগের ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গতি ফিরে এসেছে।
ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী সংস্থার কাজই মুখ্য। '৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের বিষয়ে তদন্তকারী সংস্থা খোঁজখবর নিচ্ছে। বেশ কয়েক শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ওপর তাঁরা সারসংক্ষেপ তৈরি করেছেন। শীঘ্রই তাদের গ্রেফতারের অনুমতি চেয়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে চিঠি দিবেন। সূত্র মতে, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারলে তাদের কাছ থেকে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে। তদন্তকারী সংস্থার হাতে যুদ্ধাপরাধীর ওপর অকাট্য প্রমাণ রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হতে পারে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ খবর জানা গেছে। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের দাবি '৭১ সালে তারা কোন মানবতাবিরোধী অপরাধ করেনি। অথচ তাদের বিরম্নদ্ধে এ সমস্ত অভিযোগ প্রমাণ করতে তদন্ত সংস্থার হাতে তথ্য-উপাত্তের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে। ১৯৭৩ সালের নবেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধু সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এরপরও ১১ হাজার দালালের বিভিন্ন আদালতে বিচার চলছিল। সাধারণ ৰমায় বলা হয়েছিল, দেশ দ্রোহ হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, অগ্নিসংযোগের অপরাধীরা ক্ষমা পাবে না। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে রাজাকারদের পুনর্বাসিত করেন। বিভিন্ন সংগঠন থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি ওঠে। ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ জাহানারা ইমামকে চেয়ারপার্সন করে ১২ জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত গণআদালতে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের প্রতীকী বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধী, ফ্যাসিস্ট সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরম্নদ্ধে আন্দোলনের সূচনা হয়। ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ গণআদালতের প্রথম বর্ষ পূর্তিতে ৮ জনের বিষয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন জামায়াতের বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। ১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামীর কি ভূমিকা ছিল আজকের প্রজন্মের জামায়াত নেতৃবৃন্দ কিছুই জানে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় মতিউর রহমান নিজামী জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন। তাঁর প্রত্যৰ তত্ত্বাবধানে মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিহত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মূল করার জন্য আলবদর বাহিনী গঠন করা হয়। মতিউর রহমান নিজামী ছিলেন আলবদর বাহিনীর প্রধান, নিজামীর এই বদর বাহিনীর উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধরত বাঙালী জনগোষ্ঠীকে পাকিস্তানী তথা ইসলামী জীবন দর্শনে বিশ্বাসী জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরিত করা। মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে তার এলাকা পাবনার সাঁথিয়াতে হত্যা, লুটতরাজ অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। পাবনা জেলার বেড়া থানার কৃশালিকা গ্রামের আমিরুল ইসলাম ডাবলু গণতদন্ত কমিশনকে জানিয়েছিলেন তাঁর পিতা মোঃ সোহরাব আলীকে একাত্তরে নিজামীর নির্দেশেই হত্যা করা হয়। তিনি আরও জানান, নিজামীর নির্দেশে প্রফুল্ল প্রামাণিক ও ষষ্ঠী প্রামাণিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এছাড়া আরও অনেককে হত্যা, নির্যাতনের মতো অভিযোগ রযেছে নিজামীর বিরুদ্ধে।
তদন্তকারী সংস্থার হাতে যেসব অভিযোগ এসেছে সেগুলো যাচাইবাছাই করে চূড়ান্ত রিপোর্ট করা হচ্ছে। প্রথমে মাত্র কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হতে পারে। তদন্ত সংস্থা পারিপার্শিক অবস্থা দেখেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানা গেছে। ৭ সদস্যবিশিষ্ট তদন্তকারী সংস্থার অন্যতম সদস্য মেজর (অব) এএসএম সামসুল আরেফিন বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। শীঘ্রই তিনি তদন্ত সংস্থায় যোগদান করবেন। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালে অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগেরও কাজ চলছে বলে জানা গেছে।

http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2010-04-13&ni=14748

No comments: