বদর বাহিনী কমান্ডার খালেক মজুমদার বুদ্ধিজীবী হত্যার নায়ক
সেই রাজাকার থেকে যুদ্ধাপরাধী
মামুন-অর-রশিদ ॥ শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুলস্ন্লাহ কায়সারের ঘাতক এবিএম খালেক মজুমদারের স্বাধীনতার পর বিচারে সাত বছরের কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছিল। কিন্তু আগস্ট ট্র্যাজেডির পর জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় আসায় তাকে আর পুরো মেয়াদে কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়নি। খালেক মজুমদার একাত্তরে ছিলেন ঢাকা নগর জামায়াতের এক নেতা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ ঘাতক। খালেক মজুমদার পরবর্তী সময়ে 'শিকল পরা দিনগুলো' নামে একটি বই লিখে স্বীকার করে যে, 'জামায়াতে ইসলামের আদর্শ বাসত্দবায়নের জন্য অন্য জামায়াত নেতাদের মতো তাকেও গণহত্যা, নারীধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করতে হয়েছে।' পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর তার প্রতিক্রিয়া ছিল এ রকম 'আমাদের ভাগ্যাকাশ থেকে বিদায় নিলো সৌভাগ্যের শুকতারা'। ভাগ্যাকাশ সৌভাগ্যের শুকতারা জ্বালিয়ে রাখার জন্য খালেক মজুমদার একাত্তরে কি করেছেন তার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যাবে এই রিপোর্টে।শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুলস্ন্লাহ কায়সারের ঘাতক এবিএম খালেক মজুমদারের
স্বাধীনতার পর বিচারে সাত বছরের কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছিল।
কিন্তু আগস্ট ট্র্যাজেডির পর জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় আসায়
তাকে আর পুরো মেয়াদে কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়নি।
খালেক মজুমদার একাত্তরে ছিলেন ঢাকা নগর জামায়াতের এক নেতা
এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ ঘাতক।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ও খালেক মজুমদার কর্তৃক লিখিত
'শিকল পরা দিনগুলো' গ্রন্থে লেখক নিজেই
স্বীকার করেছেন- তিনি সে সময় জামায়াতে ইসলামীর সিদ্দিক বাজারস্থ
ঢাকা মহানগরী অফিসের সেক্রেটারি ছিলেন।
১৯৭১-এ তার দল জামায়াতে ইসলামী ছিল স্বাধীনতার বিরুদ্ধে
সারা দেশে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠন করে
তারা পাক বাহিনীকে সহায়তা করেছে এবং নিজেরাও প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছে
গণহত্যা, নারীধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদিতে।
সে সময় জামায়াতের অফিস সেক্রেটারির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের
দায়িত্বে থাকা খালেক মজুমদার স্বীকার করে,
দলের আদর্শ বাসত্দবায়নের তাগিদে এসব কাজ তাকে করতে হয়েছে।
তার লেখা বইয়ে তিনি এটাও স্বীকার করেছেন, তার সঙ্গে আরেক যুদ্ধাপরাধী আলবদর
প্রধানত জামায়াতে ইসলামী নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অপারেশন ইনচার্জে চৌধুরী মঈনুদ্দীনের সঙ্গে পরিচয় ছিল।
চৌধুরী মঈনুদ্দীন একই এলাকায় বাস করত।
তার বই থেকে আরও জানা যায়, তার সঙ্গে পাক বাহিনীরও যোগাযোগ ছিল।
স্বাধীনতার ১৪ বছর পর প্রকাশিত 'শিকল পরা দিনগুলো'র ছত্রে ছত্রে রয়েছে
খালেক মজুমদারের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মনোভাব ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরম্নদ্ধে কুৎসা।
'৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ঘোষণায় ৭ কোটি বাঙালী যখন আনন্দে উদ্বেলিত
তখন খালেক মজুমদারের প্রতিক্রিয়া ছিল বিষাদময়।
বইটির ১১ পৃষ্ঠায় লেখেন, 'তখনো নিশ্চিত হতে পারছিলাম না আমার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে।
তবে লক্ষণ ভালো ঠেকলো না, উহ-আহ-এর দীর্ঘ নিঃশ্বাসের মধ্যদিয়েই কেটে গেলো রক্তিম দিনটা।
দিনের শেষে নেমে এলো রাতের অন্ধকার। আমাদের ভাগ্যাকাশ থেকে বিদায় নিলো সৌভাগ্যের শুকতারা।'
স্বাধীনতার পর বিচারে সাত বছরের কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছিল।
কিন্তু আগস্ট ট্র্যাজেডির পর জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় আসায়
তাকে আর পুরো মেয়াদে কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়নি।
খালেক মজুমদার একাত্তরে ছিলেন ঢাকা নগর জামায়াতের এক নেতা
এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ ঘাতক।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ও খালেক মজুমদার কর্তৃক লিখিত
'শিকল পরা দিনগুলো' গ্রন্থে লেখক নিজেই
স্বীকার করেছেন- তিনি সে সময় জামায়াতে ইসলামীর সিদ্দিক বাজারস্থ
ঢাকা মহানগরী অফিসের সেক্রেটারি ছিলেন।
১৯৭১-এ তার দল জামায়াতে ইসলামী ছিল স্বাধীনতার বিরুদ্ধে
সারা দেশে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠন করে
তারা পাক বাহিনীকে সহায়তা করেছে এবং নিজেরাও প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছে
গণহত্যা, নারীধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদিতে।
সে সময় জামায়াতের অফিস সেক্রেটারির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের
দায়িত্বে থাকা খালেক মজুমদার স্বীকার করে,
দলের আদর্শ বাসত্দবায়নের তাগিদে এসব কাজ তাকে করতে হয়েছে।
তার লেখা বইয়ে তিনি এটাও স্বীকার করেছেন, তার সঙ্গে আরেক যুদ্ধাপরাধী আলবদর
প্রধানত জামায়াতে ইসলামী নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অপারেশন ইনচার্জে চৌধুরী মঈনুদ্দীনের সঙ্গে পরিচয় ছিল।
চৌধুরী মঈনুদ্দীন একই এলাকায় বাস করত।
তার বই থেকে আরও জানা যায়, তার সঙ্গে পাক বাহিনীরও যোগাযোগ ছিল।
স্বাধীনতার ১৪ বছর পর প্রকাশিত 'শিকল পরা দিনগুলো'র ছত্রে ছত্রে রয়েছে
খালেক মজুমদারের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মনোভাব ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরম্নদ্ধে কুৎসা।
'৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ঘোষণায় ৭ কোটি বাঙালী যখন আনন্দে উদ্বেলিত
তখন খালেক মজুমদারের প্রতিক্রিয়া ছিল বিষাদময়।
বইটির ১১ পৃষ্ঠায় লেখেন, 'তখনো নিশ্চিত হতে পারছিলাম না আমার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে।
তবে লক্ষণ ভালো ঠেকলো না, উহ-আহ-এর দীর্ঘ নিঃশ্বাসের মধ্যদিয়েই কেটে গেলো রক্তিম দিনটা।
দিনের শেষে নেমে এলো রাতের অন্ধকার। আমাদের ভাগ্যাকাশ থেকে বিদায় নিলো সৌভাগ্যের শুকতারা।'
এবিএম খালেক মজুমদারের পিতা আবদুল মজিদ মজুমদার, গ্রাম দোহাড্ডা, থানা হাজিগঞ্জ, জেলা কুমিল্লা। ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর দফতর সম্পাদক (অফিস সেক্রেটারি) ছিল খালেক। দলের আদর্শ অনুযায়ী '৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে পাকবাহিনীকে সাহায্য করেন এবং নিজেও হত্যা, লুটতরাজে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। '৭১ সালে তিনি জামায়াতের ঘাতক বাহিনী আলবদরের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। বদর বাহিনী কমান্ডার হিসেবে বিজয়ের পূর্ব মুহূর্তে সুপরিকল্পিতভবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও এই ব্যক্তি জড়িত ছিল।
'৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় খালেক মজুমদারের নেতৃত্বে একদল আলবদর পুরান ঢাকার ২৯ নং কায়েতটুলি থেকে দৈনিক সংবাদের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক এবং দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। খালেক মজুমদার ধরে নিয়ে যাওয়ার পর দেশের এই প্রতিভাধর সনত্দান আর ফিরে আসেননি, খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁর মৃতদেহও। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শহীদুল্লাহ কায়সারের ছোট বোনের স্বামী নাসির আহমেদ, স্ত্রী সায়ফুন্নাহার কায়সার, ছোট ভাই চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক জাকারিয়া হাবিব ও তাঁর স্ত্রী নীলা জাকারিয়ার সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া বর্ণনা থেকে বিস্তারিত জানা যায়।
১৯৭১ সালে যুদ্ধাবস্থার কারণে শহীদুল্লাহ কায়সারের বাসায় তাঁর অনেক আত্মীয়স্বজন আশ্রয় নিয়েছিলেন। ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাসার নিচতলায় জাকারিয়া হাবিবসহ অনেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শোনার চেষ্টা করছিলেন। কার্ফু ও বস্ন্ল্যাক আউটের কারণে পুরো এলাকা অন্ধকার ছিল। এমন সময় বাইরের দরজায় ধাক্কা দেয়ার শব্দ হয়। শব্দ শুনেই জাকারিয়া হাবিব দৌড়ে উপরে চলে যান। শহীদুল্লাহ কায়সার তখন ড্রইংরুমে চা খাচ্ছিলেন, সে রুমে ছিলেন নীলা জাকারিয়াও। আগমনকারীদের কথা শহীদুল্লাহ কায়সারকে জানিয়ে নিচে চলে আসেন জাকারিয়া হাবিব। এ সময় ভয়ে শহীদুল্লাহ কায়সারের বোন শাহানা বেগম (বর্তমানে আমেরিকা নিবাসী) একতলার সব আলো জ্বেলে দেন। শহীদুলস্ন্লাহ কায়সার ড্রইংরুম থেকে বেডরুমে গিয়ে টেলিফোন করার চেষ্টা করেন। ততক্ষণে আগমনকারীরা নিচের দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে যায়। প্রথমে শহীদুলস্ন্লাহ কায়সারের ছোট ভাই ওবায়দুলস্ন্লাকে (বর্তমানে আমেরিকা নিবাসী) রাইফেলের বাঁট দিয়ে আঘাত করে মেঝেতে ফেলে দেয়। মুখোশধারী আগমনকারীরা জাকারিয়া হাবিবকে ধরে শহীদুলস্ন্লাহ কায়সারকে খুঁজতে খুঁজতে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে সরাসরি তার বেডরম্নমে চলে যায়। টেলিফোন হাতে শহীদুলস্ন্লাহ কায়সার নিজের পরিচয় দিয়ে তাদের আগমনের কারণ জানতে চান। শহীদুলস্ন্লাহ কায়সারের পরিচয় পেয়েই একজন 'মিল গিয়া' বলে উলস্ন্লাসধ্বনি করে তাঁর চুলের মুঠি চেপে ধরে। অন্যদের কেউ জামার কলার, কেউ হাত ধরে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে। এ সময় শাহানা বেগম, পান্না কায়সার, নাসির আহমেদ জোর করে তাঁকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। ধসত্দাধসত্দির এক পর্যায়ে শাহানা বেগম এক আততায়ীর মুখোশ টান দিয়ে খুলে ফেলেন। উজ্জ্বল আলোতে সবাই তাকে চিনে ফেলেন। পরে আদালতে খালেক মজুমদারকে শনাক্তকরণের সময় তারা পৃথকভাবে জানান, এই ব্যক্তিই ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা রাতে শহীদুলস্ন্লাহ কায়সারকে অপহরণ করতে গিয়েছিল। মুখের আবরণ খুলে ফেলার পর খালেদ মজুমদার ক্ষিপ্ত হয়ে শাহানা বেগমকে লাথি মেরে ফেলে দেয়, অন্যদের আঘাত করে শহীদুল্লাহ কায়সার ও জাকারিয়া হাবিবকে টেনেহিঁচড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে আনে। আততায়ীদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে শহীদুল্লাহ কায়সার তখন আশপাশের সব কিছু, এমনকি দেয়াল আঁকড়ে ধরেও প্রতিরোধের চেষ্টা চালান। শহীদুল্লাহ কায়সারের কন্যা, আজকের সুপরিচিত অভিনেত্রী শমী কায়সার তখন দু'বছরের অবোধ শিশু। সেও আব্বু, আব্বু বলে চিৎকার করে ডাকছিল। কিন্তু আততায়ীরা সব বাধা উপেক্ষা করে তাদের দু'জনকে নিয়ে যায়। পরে রাসত্দায় নিয়ে জাকারিয়া হাবিবকে ছেড়ে দিয়ে শহীদুলস্ন্লাহ কায়সারকে মোড়ে দাঁড়ানো জীপে তুলে নিয়ে যায়। সেটাই ছিল তাঁর শেষ যাওয়া।
খালেক মজুমদার তখন একই এলাকার ৪৭ নং আগামসী লেনে থাকতেন, কায়েতটুলি মসজিদের তৎকালীন ইমাম আশরাফ উল্লাহ, যিনি বর্তমানে বনানী গোরসত্দানে কাজ করেন। তিনি জানান, ঘটনার দিন অর্থাৎ ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বিকেলে খালেক মজুমদার তাঁর কাছে শহীদুলস্ন্লাহ কায়সার কখন বাসায় থাকেন ইত্যাদি জানতে চান। আশরাফ উলস্ন্লাহ উত্তরে জানি না বলেন। তিনি নিজেও জানতেন না খালেক মজুমদার শহীদুল্লাহ কায়সারকে মেরে ফেলার জন্য খুঁজছেন। সেদিন সন্ধ্যা রাতে আশরাফ উল্লাহ মসজিদের দোতলায় জানালা দিয়ে দেখতে পান শহীদুল্লাহ কায়সার রাসত্দার ল্যাম্পপোস্ট আঁকড়ে ধরে 'বাঁচাও বাঁচাও' বলে চিৎকার করছেন আর কয়েক জন তাঁকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে গেলো। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পরদিন, অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বর আশরাফ উল্লাহ এ কথা নাসির আহমেদ ও জাকারিয়া হাবিবকে জানিয়েছিলেন।
১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে রাতে নাসির আহমেদ কোতোয়ালি থানায় ফোন করে ঘটনাটি জানান। কিন্তু তখন পুলিশ প্রশাসন বলে কিছু না থাকায় কোন সাহায্য পাওয়া যায়নি। ১৬ ডিসেম্বর দেশ হানাদারমুক্ত হওয়ার পর নাসির আহমেদ শহীদুল্লাহ কায়সারকে ফিরে পাওয়ার জন্য খালেক মজুমদারকে খুঁজতে থাকেন। ২০ ডিসেম্বর তিনি বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলাও দায়ের করেন।
১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের কথা শুনেই খালেক মজুমদার কৃতকর্মের শাস্তির ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। নাসির আহমেদ, জাকারিয়া হাবিবসহ অন্যরা তার বাসায় গিয়ে তাকে পাননি, তবে তার রুমে গুলিসহ একটি রিভলবার এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পান; যাতে বেশ কয়েক সামরিক কর্মকর্তা ও আলবদর হাইকমান্ড সদস্যের নাম পাওয়া যায়। বিজয়ের পর গঠিত বুদ্ধিজীবী হত্যাকা- তদনত্দ কমিশনকে এসব কাগজপত্র হসত্দানত্দর করা হয়। মূলত শহীদুল্লাহ কায়সারকে ফিরে পাওয়ার আশায় নাসির আহমেদ ২নং সেক্টরের কয়েক মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে দিনের পর দিন খুঁজতে থাকেন খালেক মজুমদারকে। শেষ পর্যনত্দ মালিবাগের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। খালেক মজুমদারের বিরম্নদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় সুস্পষ্টভাবে প্রামাণিত হয় যে, সেই শহীদুল্লাহ কায়সারকে মেরে ফেলার জন্য অপহরণ করে নিয়ে যায়। ১৯৭২ সালের ১৭ জুলাই মামলার রায়ে তাকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদ- ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। খালেক মজুমদারের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণিত অভিযোগ থাকায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার আওতায়ও তিনি পড়েননি। জিয়াউর রহমানের আমলে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে উচ্চতর আদালতে আপীল করে ১৯৭৬ সালের ২৯ এপ্রিল খালাস পায় খুনী-ঘাতক খালেক মজুমদার।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ও খালেক মজুমদার কর্তৃক লিখিত 'শিকল পরা দিনগুলো' গ্রন্থে লেখক নিজেই স্বীকার করেছেন- তিনি সে সময় জামায়াতে ইসলামীর সিদ্দিক বাজারস্থ ঢাকা মহানগরী অফিসের সেক্রেটারি ছিলেন। ১৯৭১-এ তার দল জামায়াতে ইসলামী ছিল স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। সারা দেশে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠন করে তারা পাক বাহিনীকে সহায়তা করেছে এবং নিজেরাও প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছে গণহত্যা, নারীধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদিতে। সে সময় জামায়াতের অফিস সেক্রেটারির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বে থাকা খালেক মজুমদার স্বীকার করে, দলের আদর্শ বাসত্দবায়নের তাগিদে এসব কাজ তাকে করতে হয়েছে। তার লেখা বইয়ে তিনি এটাও স্বীকার করেছেন, তার সঙ্গে আরেক যুদ্ধাপরাধী আলবদর প্রধানত জামায়াতে ইসলামী নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অপারেশন ইনচার্জে চৌধুরী মঈনুদ্দীনের সঙ্গে পরিচয় ছিল। চৌধুরী মঈনুদ্দীন একই এলাকায় বাস করত। তার বই থেকে আরও জানা যায়, তার সঙ্গে পাক বাহিনীরও যোগাযোগ ছিল। স্বাধীনতার ১৪ বছর পর প্রকাশিত 'শিকল পরা দিনগুলো'র ছত্রে ছত্রে রয়েছে খালেক মজুমদারের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মনোভাব ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরম্নদ্ধে কুৎসা। '৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ঘোষণায় ৭ কোটি বাঙালী যখন আনন্দে উদ্বেলিত তখন খালেক মজুমদারের প্রতিক্রিয়া ছিল বিষাদময়। বইটির ১১ পৃষ্ঠায় লেখেন, 'তখনো নিশ্চিত হতে পারছিলাম না আমার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে। তবে লক্ষণ ভালো ঠেকলো না, উহ-আহ-এর দীর্ঘ নিঃশ্বাসের মধ্যদিয়েই কেটে গেলো রক্তিম দিনটা। দিনের শেষে নেমে এলো রাতের অন্ধকার। আমাদের ভাগ্যাকাশ থেকে বিদায় নিলো সৌভাগ্যের শুকতারা।' সূত্র : জাতীয় গণতদনত্দ কমিশন রিপোর্ট।
No comments:
Post a Comment