চ্যালেঞ্জ... ষড়যন্ত্র...
মৃত্যুভয়... কাউন্সিল...
মন্ত্রিসভা... কর্তৃত্ব... জনপ্রত্যাশা...
সব দায় তাঁর...
শুভ কিবরিয়া
মন্ত্রিসভা পরিবর্তন নিয়ে কথা চলছে। মিডিয়ায় আলোচনা, আলোচনা জনমনেও। শেখ হাসিনার নতুন সরকারের ছয় মাস বয়সেই যেন পরিবর্তনটা জরুরি। দলের মধ্যে, দেশের মধ্যে সেই আলোচনাই চলছে। কে কে হবেন নতুন মন্ত্রী? পুরনো নেতারা কি ঠাঁই পাবেন মন্ত্রিসভায়? নাকি মাইনাস টু ঝড়ের ধূলিহাওয়ার ধূসর মলিন ভবিষ্যৎই থাকবে তাদের! নাকি, ফরগিভ আর ফরগেটের ক্ষমতাতত্বে ফিরে আসবেন তারাই। তোফায়েল আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক কি জায়গা পাবেন সহকর্মী হিসেবে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায়? নাকি নতুন তরুণ তুর্কীরাই শেখ হাসিনার চোখে ভবিষ্যৎ। তারাই হাল ধরবেন দেশের, দলের।
মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনÑ রদবদল আর দলের কাউন্সিল যেন এক সুতোয় বাঁধা। কে কোন পদ পাবেন, কার কার পদ ঝরে যাবে জানছেন না কেউ। কোনো সামষ্টিক আলোচনায় এসবের বালাই নেই। এসব জানেন শুধু তিনিই। তার হাতের কাগজেই লেখা আছে দলের নেতাদের রাজনীতির ভবিষ্যৎ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কিংবা মন্ত্রিসভার সদস্য, দুটোর কোনোটাই আর এখন দলীয় আলোচনার ভিত্তিতে স্থির হওয়ার নয়। পুরো ক্ষমতাই এক, একক নেত্রীর হাতে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন তিনিই।
২.
কিন্তু কেনো এমন হচ্ছে? বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো বড় দলের এ হাল কেন? বিএনপির গঠতন্ত্রই সর্বময় ক্ষমতা দিয়েছে চেয়ারপার্সনকে। গঠনতন্ত্র মোতাবেক তার ইচ্ছাই চূড়ান্ত। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাজনীতির মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা আওয়ামী লীগ তো তার ব্যতিক্রম। তাত্ত্বিক ভাষ্য তাই। বাস্তব এর উল্টো। স্বাধীন বাংলাদেশে দলের মধ্যে তো বটেই, সরকারেও বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছাই ছিল শেষ কথা। তার মৃত্যুর পর ১৯৭৫Ñ৮১ পর্যন্ত যাদের হাতে আওয়ামী লীগ ছিল তারাও দলে সামষ্টিক বা যৌথ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হন। বরং বঙ্গবন্ধু হত্যার পর হতচকিত, বিহব্ল, বিভ্রান্ত আওয়ামী লীগকে নিষ্ঠায়, ভালোবাসায়, শ্রমে যারা নতুন জীবন দিয়েছিলেন তারাই ছিটকে পড়েছেন। দলের মধ্যে উপদল আর কোন্দলকারীদের প্রাধান্যই জয়ী হয়েছে। ভাঙন এবং মনোমালিন্যতে কণ্টকময় হয়েছে আওয়ামী লীগের সেই সময়ের যাত্রা। কাঁটা-ভরা, দুর্গম, অনিশ্চিত যাত্রাপথে দলের ঐক্য অটুট রাখতে, দলে একদম আনকোরা শেখ হাসিনাকে আনতে হয়েছে। ভার দেয়া হয়েছে পুরো দলের। বঙ্গবন্ধু হত্যার অর্ধযুগ না পেরুতেই দল বাঁচাতে শেখ হাসিনার ডাক পড়েছে। তাই ১৯৮১-এর মে মাসে শেখ হাসিনার প্রত্যার্বতন এবং রাজনীতিতে দায়িত্ব পাওয়া দুটোই দলের জীয়নকাঠি হিসেবে কাজ করেছে।
শেখ হাসিনা এমন এক আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি হিসেবে যাত্রা শুরু করেন, যেখানে অনৈক্য আর বিভেদ ছিল দৃশ্যমান। উপদল, কোন্দল, আর দলের মধ্যে নেতৃত্বের অশোভন প্রতিযোগিতার সে সব দুর্দিন হাতে নিয়েই অনেক চড়াই উৎরাই পেরুতে হয়েছে তাকে। ১৯৮১-৯১, এই দশকময় যাত্রাদিনে রাজনীতির ঝড়োপথে অনেক অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষা তার হাতে-কলমে হয়েছে। তিনি কাছ থেকে চিনেছেন দলের নেতাদের। দেখেছেন তাদের ভেতর ও বাহির। এরশাদবিরোধী আন্দোলন থেকে ১৯৯১-এর নির্বাচন অনেক উথাল-পাতাল রাজনৈতিক দিন তার অভিজ্ঞতাকে পূর্ণ করেছে। দলের কর্মীদের অকুণ্ঠ ভালোবাসা এবং ভরসা তার পথচলাকে গতি দিয়েছে, তবুও দলের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় কোনো সমষ্টি বা পদ্ধতি তিনি গড়তে পারেননি। দলের ক্ষমতা ক্রমশ কুক্ষিগত হয়েছে তার হাতেই। সভানেত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা-অনিচ্ছাতেই চলেছে সব।
৩.
সেই একক যাত্রা এবং নেতৃত্বের দায় নিয়েছেন নিজের কাঁধেই। ফলে ১৯৯১ সালে নির্বাচনের ফলাফলের ক্ষেত্রে ব্যর্থতাকে নিজের ব্যর্থতাই ভেবেছেন। সমালোচনা এবং চাপের মুখে সভানেত্রীর পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। দলে যৌথ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু নেত্রীর এ সিদ্ধান্ত দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মানেননি। তারা জানেন, দলের প্রাণভোমরা তিনিই। দল বাঁচাতে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। নেতাকর্মীদের আবেগ আর আকুলতায় শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত পাল্টেছেন । আবার দলে ফিরেছেন। দায়িত্ব নিয়েছেন। সফলও হয়েছেন। শেখ হাসিনাই দলকে ক্ষমতায় এনেছেন ২১ বছর পর। ব্যর্থতা মুছে সাফল্যের জয়গানে ভরে উঠেছে শেখ হাসিনার চারপাশ। তাই দলের সর্বশেষ কাউন্সিলে একক প্রার্থী হিসেবে তাকেই দেখা গেছে সভাপতির পদে। শুধু তাই নয়, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের ক্ষেত্রে কাউন্সিলরা তাদের ব্যালটের ক্ষমতা পরিত্যাগ করেছেন। তারা নেত্রীর হাতেই তুলে দিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের ক্ষমতা। কাউন্সিলরদের ভোটের চাইতে তার মতামতের মূল্যই বেড়েছে। এ সিদ্ধান্ত দলের মধ্যে ভিন্ন আমেজ এনেছে। নেত্রীর সান্নিধ্য, আনুগত্য, সুদৃষ্টিই মূল বিষয় হয়েছে। রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে তাকে ঘিরেই। দল এবং শেখ হাসিনা একীভূত হয়েছে। তার সিদ্ধান্তই দলের সিদ্ধান্ত বলে চলেছে। সেই ধারায় আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলে তোফায়েল আহমদ, আব্দুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমুকে পেছনে ফেলে আবদুল জলিল দলের সাধারণ সম্পাদক বনেছেন। দলের নেত্রীর ইচ্ছাতেই সেই পদ জুটেছে তার ভাগ্যে। আজ সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের যে যাতনাবর্বর জীবন কাটছে তাও ঘটেছে নেত্রীর সুদৃষ্টি থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণেই।
৪.
এসব পালাবদল যত ঘটেছে দলে শেখ হাসিনা ততই শক্তিশালী হয়েছেন। সর্বশেষ মাইনাস টুর ঝড়ও সামলেছেন তিনি এভাবেই। দলের বড় বড় নেতার ষড়যন্ত্রকে মাথায় নিয়েই এই দুর্যোগকাল কেটেছে শেখ হাসিনার। কারাগারে মৃত্যু আর অনিশ্চয়তাÑ এই দুই দুর্ভোগকে সামলেছেন একাই। বড় নেতারা তাকে ‘মাইনাস’ করতে চাইলেও দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই তাকে ‘প্লাস’ করেছে। ‘মাইনাস টু’ যত ব্যর্থতার দিকে এগিয়েছে দলের মধ্যে ততই শক্তিশালী হয়েছেন তিনি। নির্বাচনে বিজয়ের পর শেখ হাসিনা তাই দুর্দিনের সহযাত্রীদের বেছে নিয়েছেন। চারদিকে ঝড়ের নিঃশব্দ সঞ্চারণ শেষে ‘একক’ শেখ হাসিনাই দল এবং সরকারের কাণ্ডারি হয়েছেন। ফলে আজ কে সরকারে মন্ত্রী হবেন, কার মন্ত্রিত্ব চলে যাবে, দলের নেতৃত্বে কে আসবে এ আর অন্য কারও ভাবনার ওপর নির্ভর করে না। তিনি যা ভাবছেন, যা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাই-ই চূড়ান্ত।
৫.
দলের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিস্থাপন ঘটেছে শেখ হাসিনার আবির্ভাবে। বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি হিসেবে দলের মধ্যে তার মতোই একচ্ছত্র সর্বৈব ক্ষমতা লাভও ঘটেছে শেখ হাসিনার। তার কথাই আজ দলের কথা। তার ইচ্ছাই আজ দলের ইচ্ছা। সুতরাং কাউন্সিল যত ঘনঘটা করেই হোক না কেন, দলের নতুন নেতারা হবেন শেখ হাসিনার ইচ্ছা অনুসারেই। দলের ভেতরের পছন্দ, অপছন্দ এসব এখন গৌণ।
যে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দলে ঈশ্বররূপে আবির্ভূত হয়েছেন তার অনেক যৌক্তিকতা হয়ত আছে। ১৯৮১, ১৯৯১ তে, ২০০১-এ এবং সর্বশেষ ২০০৭-০৮-এ শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন দলে তিনিই শেষ মানুষ। যিনি মৃত্যুকে মোকাবিলা করেছেন কিন্তু বিচ্যুত হননি। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে তিনি আপোস করেননি। মৃত্যুপরোয়ানা মাথায় নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের লড়াইয়ে তিনি হেঁটেছেন একাই। লক্ষ্য স্থির পথে চলতে গ্রেনেড হামলার মতো বিপদকেও বরণ করেছেন। বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার দুর্যোগময় ক্ষণকে অতিক্রম করেছেন ধৈর্য এবং সুস্থিরতায়। একাই সামলাচ্ছেন চারপাশ। সমষ্টিকে ‘একক’ করে নিজেই হয়ে উঠেছেন সর্বৈব সিদ্ধান্তদাতা।
এই যে একক হয়ে ওঠা, এর কিছু বিপদাপন্ন দিকও আছে। এই অনুভূতি মানুষকে অধিকতর আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। নিয়ম বা প্রতিষ্ঠান গৌণ হয়ে যায়। সিস্টেম বা পদ্ধতিগত উন্নয়নের চাইতে ব্যক্তির চাওয়া-পাওয়া বড় হয়ে ওঠে। তার ইচ্ছা অনিচ্ছাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়।
দল বা রাষ্ট্র এতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কেননা, রাষ্ট্র একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে পদ্ধতিগত উন্নয়ন না ঘটলে বিপদ আসন্ন। ৩৮ বছর পরেও বাংলাদেশ যে বারংবার সংকট এবং দুর্যোগের মুখে পড়ছে, তারও বড় কারণ নিহিত হয়ে আছে এর সুসংগঠিত ‘রাষ্ট্র’ হিসেবে গড়ে না ওঠার ভেতরে। এখানে দেশের চাইতে দল বড় হয়েছে। দলের চাইতে ব্যক্তি আরও বড় হয়েছে। ফলে, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সংগঠনগুলো দাঁড়ায়নি। সংকট, দুর্যোগ, বিপদের দিনে সংগঠনগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা দাঁড়ায়নি। ব্যক্তি দাঁড়িয়েছে কেবল। ফলশ্রুতিতে ব্যক্তিই টার্গেটে পরিণত হয়েছে। ব্যক্তিকে আঘাত করে পরাভূত করার মধ্য দিয়েই রাষ্ট্রকে আঘাত করা সহজতর হয়েছে। দুজন রাষ্ট্রপতির হত্যাকাণ্ডই সে কথা প্রমাণ করে।
ব্যক্তি বড় হয়ে ওঠার বিপদ মাথায় নিয়ে যে রাষ্ট্র বাড়ছে, তার ‘গণতন্ত্র’ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। ফলে এখানে সামরিক শাসন, ছদ্মবেশী সামরিক শাসন রাষ্ট্রযন্ত্রকে কুক্ষিগত করেছে। রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠানের বদলে ‘ব্যক্তিকেই’ পরিচর্যা করেছে। ফলে ব্যক্তিতুষ্টির আকাক্সক্ষাই প্রবল হয়েছে এখানকার আমলাতন্ত্রের মনোজগতে। শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া তাই প্রধানমন্ত্রী হয়ে প্রথম খপ্পরে পড়েছে আমলাতন্ত্রের। দলে যৌথ নেতৃত্বের বিকাশ ঘটলে ‘আমলাতন্ত্র’ বড় হয়ে উঠতে পারত না। এখন এখানে ঘটেছে উল্টোটা ।
শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার সেই বিবর্তনের ধারাকেই শক্তিমান করেছে। এখানে উপদেষ্টা পরিষদের নামে পুরনো আমলাতন্ত্র মন্ত্রিপরিষদকে চেপে ধরেছে। সরকারের রাজনৈতিক কাঠামোর ওপরে উপদেষ্টারূপী আমলাতন্ত্র আর নিচে প্রশাসনিক আমলাতন্ত্র Ñএই দুই যাঁতাকলে সরকারের সকল কার্যক্রমে তাই চলছে স্থবিরতা। রাজনৈতিক সরকারের চাইতে আমলাতন্ত্র বড় হয়েছে। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সকল দায় পড়েছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। সব সিদ্ধান্তের জন্যই চাতকপাখির মতো তার দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে সবাইকে।
৬.
শেখ হাসিনার ১৯৯৬-২০০১ মন্ত্রিসভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা অনেকেই মন্ত্রী ছিলেন। তাই সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ার এসব নেতার মতামত কখনো কখনো দলীয় নেত্রীর মতামতকে পাল্টে দিত। বর্তমান মন্ত্রিসভার সেই সমস্যা নেই। ১/১১-উত্তর শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্র আর কূটকৌশলীদের উতরে এমন এক মন্ত্রিসভা উপহার দিয়েছেন যেখানে তার মতকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। শেখ হাসিনার দুর্যোগের দিনে যারা আস্থাবান ছিলেন তাদের কাছে টেনেছেন তিনি। ষড়যন্ত্রকারীরা তার মনোজগতে যে পরিবর্তন এনেছেন, তার ফলে নিকট অতীতের আস্থাবানদের ওপরই তাকে ভরসা করতে হচ্ছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, মৃত্যুঝুঁকি, ষড়যন্ত্র আর জনপ্রত্যাশার ভার কাঁধে নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভার ওপর যে দায়ভার বর্তেছে তারও চাপ নিতে হচ্ছে তাকেই।
তার সরকারের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে পিলখানায় ঘটেছে ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড। অসম্ভব দক্ষতায় একাই সামলেছেন সবকিছু। একক সিদ্ধান্তে দল এবং দেশ পরিচালনা তাকে করেছে আরও আত্মবিশ্বাসী। শেখ হাসিনা হয়ত ভাবছেন এত বড় বিপদ যখন মোকাবিলা করতে পেরেছেন, তখন সবই পারবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী না থাকলেও তিনি মন্ত্রণালয় চালাতে পারবেন। অনেকটা স্বাধীনতার পরের বঙ্গবন্ধু সরকারের চিন্তাভাবনার মতোই। পারমিট থেকে কার কোথায় চাকরি হবে সবই দেখতেন বঙ্গবন্ধু। এখন সব কিছু দেখছেন শেখ হাসিনা।
কিন্তু একাকী মানুষের চারপাশে অনেক সমস্যা, বিপদ জড়ো হতে থাকে। ক্ষমতায় থাকলে ঠিক সময়ে যা অনুধাবন করা যায় না। ইতিহাসে এর অনেক নজির আছে। শেখ হাসিনা একক নেতৃত্বে যদি পাঁচ বছর সফলভাবে চালিয়ে নিতে পারেন তবে ইতিহাস তাকে মূল্যায়ন করবে বিশালভাবে। ষড়যন্ত্র চক্রান্তকারীরা মুখ থুবড়ে পড়বে। যদি একক নেতৃত্বে সমস্যা তৈরি হয়, ষড়যন্ত্রকারীরা যদি তার চারপাশে জাল বিস্তার করতে সক্ষম হয়Ñ কী হবে পরিণতি? শেখ হাসিনার, ‘দেশের’ গণতন্ত্রের?
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, স্বাধীনতার মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ইতিহাসের বিকৃতি রোধ ও সত্য ইতিহাস প্রতিষ্ঠার লড়াই, গণতন্ত্রকে সুভিত্তি দেয়া, গরিব মানুষের জীবন ও জীবিকার সুবন্দোবস্ত করা, দেশের সম্পদের ওপর জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মতো অত্যন্ত কঠিন এবং বিপদসঙ্কুল দায়িত্ব বর্তেছে প্রধানমন্ত্রীর কাঁধে। এর ওপরে রয়েছে পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনৈতিক আবহ। আছে আঞ্চলিক রাজনীতির নানান কূটকৌশল। আছে দেশের জ্বালানি সম্পদ নিয়ে নানান আন্তর্জাতিক ও দেশীয় চক্রান্ত। ষড়যন্ত্র। আছে মৃত্যুভয় এবং জীবনহানির আশঙ্কা। এসব চক্রান্তের মধ্যে দুর্বল হয়েছে সিস্টেম, যৌথ নেতৃত্ব। বেড়ে উঠেছে প্রধানমন্ত্রী, দলের সভানেত্রী একাই। দুই শীর্ষপদ তাকে বসিয়েছে প্রত্যাশা ও বিপদের সর্বচূড়ায়। এসব বহুমুখিন সমস্যা, সংকট মাথায় নিয়ে একাই হাঁটছেন তিনি। একাকী নিঃসঙ্গ।
http://www.shaptahik.com/v2/?DetailsId=2790
No comments:
Post a Comment