Tuesday, April 20, 2010

দুই বিচারপতিকে যেভাবে বিতর্কিত করা হচ্ছে

দুই বিচারপতিকে যেভাবে বিতর্কিত করা হচ্ছে
ভুল তথ্য, ভুল ছবি
স্টাফ রিপোর্টার ॥ মিথ্যার ভিত্তিতে যে ২ বিচারপতির শপথ গ্রহণ এখন পর্যন্ত হয়নি, সে বিষয়ে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসছে। ভুল তথ্য এবং অন্য ভবনের ছবি ছাপিয়ে মিথ্যাকে সত্য করার চেষ্টা চলছে। রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ১৭ বিচারপতি নিয়োগ দেন। প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম ১৫ জনকে শপথ পড়ালেও অনিবার্যকারণবশত ২ জনকে শপথ গ্রহণ করাননি। এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলবেন। যে ২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তা অসত্য। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা নেই। তাঁরা সবাই দক্ষ ও অভিজ্ঞ। আমি আশা করি শীঘ্র ২ বিচারপতি শপথ নেবেন। আইন মন্ত্রণালয় হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক নিয়োগের জন্য একটি তালিকা তৈরি করে। ১৭ জনের ঐ তালিকায় সবাই আইন পেশায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ। অথচ কয়েকটি পত্রিকা এঁদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। পাশাপাশি ডিএজি মোহাম্মদ খসরুজ্জামান ও এ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস বাবুকে জড়িয়ে কয়েকটি পত্রিকা মিথ্যা খবর প্রকাশ করে। অবশ্য ইতোমধ্যে একটি সংবাদপত্র প্রথম পাতায় বড় বড় অক্ষরে ভুল স্বীকার করেছে। এ খবরকে পুঁজি করে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা কর্মসূচী ঘোষণা করেন। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সম্পাদকসহ বিএনপি-জামায়াতের আইনজীবীরা ২ বিচারপতিকে শপথ না গ্রহণের আহ্বান জানান। ১৭ এপ্রিল নতুন বিচারপতিদের মধ্যে ১৫ জনের কাছে শপথ গ্রহণের জন্য চিঠি পাঠানো হয়। ২ জনের নামে চিঠি পাঠানো হয়নি। রবিবার শপথ অনুষ্ঠানে বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত ২ জনের শপথ গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। ২ জনের শপথ গ্রহণ হবে কি হবে না এ ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি। যে দুই জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সত্য নয়। মোহাম্মদ খসরুজ্জামানের যে ছবি ছাপানো হয়েছে, তা প্রধান বিচারপতির দরজা নয়। সেটা ছিল এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের নিচতলার একটি রুম। প্রধান বিচারপতির দরজা থাই এ্যালুমিনিয়ামের নয়। অন্যদিকে এ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস বাবুর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা ছিল। যা বিচারপতি নিয়োগের অনেক আগেই প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন তাঁর বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন তখন সুপ্রীমকোর্ট এলাকায় আন্দোলন হয়। সাবেক মন্ত্রী সাজাহান ওমরের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় সুপ্রীমকোর্টের এক কর্মকর্তা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমীর-ইল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, সুব্রত চৌধুরী, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, মোঃ আওসাদসহ অনেকেরই নাম ছিল। তখন মোহাম্মদ খসরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। মামলা থেকে সবার নাম বাদ দেয়া হয়। মাত্র ২ আইনজীবী আসামি ছিলেন। এঁরা হলেন, সুব্রত চৌধুরী ও আওসাদ হোসেন। দু'মাস আগে নিম্নআদালত তাঁদেরও খালাস করে দেয়। তা ছাড়া ঐ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে মোহাম্মদ খসরুজ্জামানের কোন নাম ছিল না বা তাঁর সম্পৃক্ততার প্রমাণও পাওয়া যায়নি। অথচ মিথ্যা খবর ছাপিয়ে একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে ব্যস্ত। ২০০১ সালে বিএনপির অনেক সিনিয়র আইনজীবী প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথি মেরেছিলেন। তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে বিচারপতিও করা হয়। এ ছাড়া বর্তমান অনেক বিচারপতি আছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ছিল। এখন মামলা না থাকার কারণে মিথ্যা অজুহাতে ২ জনকে শপথ পড়ানো হয়নি। বিষয়টি সুপ্রীমকোর্ট অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয়, ১৫ বিচারপতির শপথ অনুষ্ঠানে আপীল বিভাগে কোন বিচারপতি যাননি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শপথের বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতি আপীল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতির সঙ্গে কোন আলোচনা করেননি। দীর্ঘদিনের রেওয়াজ প্রধান বিচারপতি আপীল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনা করে থাকেন। কিন্তু এবার তা করা হয়নি। রাকসুর সাবেক জিএস রুহুল কুদ্দুস বাবু সম্পর্কে যে সমস্ত খবর বেরিয়েছে, সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, তা সম্পুর্ণ মিথ্যা। আসামির নাম থেকে রহুল কুদ্দুস বাবুর নাম তড়িঘড়ি করে বাদ দেয়া হয়নি। ঘটনার বিবরণে জানা যায়। ১৯৮৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংঘর্ষে ছাত্রশিবিরের নেতা ও দুর্ধর্ষ ক্যাডার আসলাম নিহত হয়। এ ঘটনায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা দায়ের করা হয়। মামালাটি করে শিবির নেতা মোঃ নায়েব আলী। ১৯৮৮ সালে দেশব্যাপী এরশাদবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। এরশাদ ছাত্র আন্দোলনকে নস্যাত করতে ছাত্রশিবিরকে মাঠে নামান। তখন ছাত্রশিবিরের হাতে সিলেটে তপন মুনির জুয়েল, গাইবান্ধার রুবেল, চট্টগ্রামের শাহাদত, রাজশাহীর জামিল আখতার রতন, ইয়াসির আরাফাত টিপু, মুকিমসহ সারাদেশে শতাধিক ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতাকর্মী নিহত হয়। ১৯৮৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লতিফ হলে শিবির আক্রমণ করে। সে সময় ছাত্রনেতা রুহুল কুদ্দুস বাবু, জোহা হলের প্রোভাস্ট আবুল ফজল হকের সঙ্গে ছিলেন। তদানীন্তন ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মোঃ ইউনুসও সেখানে ছিলেন। ছাত্রনেতা বাবু আহতদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য তদারকি করছিলেন। শিবির নেতা আসলাম আহত অবস্থায় হাসপাতালে মারা যায়। এ ব্যাপারে বাবুসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। যা ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক হয়রানি। সে সময় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ২০০৯ সালে এপ্রিল মাসে মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হয়। জুলাই মাসে পিপির মতামত ছিল রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করা হোক। রাজশাহী সাব কমিটি, জেলা প্রশাসক ২০০৯ সালে মূল আবেদনপত্রসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠায়। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১২তম সভায় এ মমালা প্রত্যাহারের সিদ্ধানত্ম হয়। যখন প্রত্যাহার করা হয় তখন রম্নহুল কুদ্দুস বাবুর বিচারক নিয়োগের সম্ভাবনা ছিল না। ৮ এপ্রিল পিপি রাজশাহী আদালতে বিষয়টি উত্থাপন করলে শুনানি শেষে রম্নহুল কুদ্দুস বাবুসহ অন্যদের নাম প্রত্যাহারপূর্বক খালাসের আদেশ দেয়। এ ঘটনা প্রসঙ্গে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, আশা করছি, ২ বিচারপতিকে শীঘ্রই শপথ দেয়া হবে। রাষ্ট্রপতির আদেশ সর্বোচ্চ আদেশ।

No comments: