ট্রান্সকমের জমি জালিয়াতি ।। কালের কন্ঠ প্রতিবেদন।
এক-এগারোর পরপরই ভুয়া ব্যক্তিদের মালিক সাজিয়ে ৪০ কোটি টাকার প্লট সাড়ে ১৫ লাখ টাকায়!
তেজগাঁও শিল্প এলাকায় দুই বিঘা আয়তনের একটি শিল্পপ্লট মাত্র ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকায় হাতিয়ে নিয়েছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মালিকানাধীন ব্যবসায়ী গ্রুপ ট্রান্সকম। প্লটের ভারতীয় বংশোদ্ভূত মালিক স্বাধীনতার পর এ দেশে ফিরে না আসায় দীর্ঘদিন যাবৎ প্লটটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। ভুয়া ব্যক্তিদের মালিক সাজিয়ে কাগজপত্র বানিয়ে শুধু হস্তান্তর ফি দিয়ে অমূল্য প্লটটির মালিক হয়ে গেছে ট্রান্সকম গ্রুপ। অথচ তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এক কাঠা জমির বর্তমান বাজারমূল্য কমপক্ষে এক কোটি টাকা। এ হিসাবে ওই প্লটের দাম কোনো-ভাবেই ৪০ কোটি টাকার কম নয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই ঘটনা ঘটে। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে ট্রান্সকম গ্রুপের এই বিস্ময়কর জালিয়াতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সেই সূত্রে ট্রান্সকমের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক লতিফুর রহমানের সঙ্গেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। সরকারি প্রভাব খাটিয়ে জালিয়াতির কাজটি করাও তাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।
তেজগাঁও শিল্পপ্লটের দায়িত্ব পালনকারী ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, এই প্লটের কাগজপত্র দেখে কিছু অসংগতি আছে বলে মনে হয়। এ ধরনের দামি প্লট হস্তান্তরের ক্ষেত্রে অসংগতি থাকার কথা নয়। তার পরও আছে। এটা সন্দেহজনক।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৫৩ সালে ৪৩৭টি প্লট তৈরির মধ্য দিয়ে তেজগাঁও শিল্প এলাকার যাত্রা শুরু হয়। ১৯৫৬ সালে এ শিল্প এলাকার ১১২ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ পান মরহুম জাফর আলী আজানীর ছেলে আবুল হোসেন আজানী নামের একজন অবাঙালি। বরাদ্দের পর সেখানে লোহালক্কড়ের একটি কারখানা স্থাপন করেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আবুল হোসেন আজানী দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি আর ফিরে আসেননি।
দীর্ঘদিন যাবৎ ওই প্লটটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। কিছু প্রভাবশালী লোক প্লটটি দখল করে সাইকেল-ভ্যানের টায়ার তৈরির ছোট্ট কারখানা বানিয়ে চালু রাখে। লতিফুর রহমানের নজর পড়লে প্লটটি দখলের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি শুরু করেন তিনি।
তেজগাঁও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়, সেগুনবাগিচায় অবস্থিত তেজগাঁও শিল্প এলাকার গণপূর্ত বিভাগ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত ওই প্লটের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, বরাদ্দের পর ১৯৫৭ সালের ১৬ জানুয়ারি আবুল হোসেন আজানী প্লটের দখল পান। পরে সেখানে তিনি নাজ মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ নামের একটি কারখানা গড়ে তোলেন। স্বাধীনতার পর গণপূর্ত বিভাগের লোকজন একাধিকবার প্লটের খোঁজখবর নিতে যান। তাঁরা প্রকৃত মালিক আবুল হোসেন আজানীকে পাননি। দখলদাররাও গণপূর্তের লোকদের তথ্য দিয়ে কোনো সহযোগিতা করেনি। ১৯৯৭ সালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা 'শিল্পপ্লটগুলোর বর্তমান অবস্থার চিত্র সম্পর্কিত প্রতিবেদন'-এ উল্লেখ করা হয়, 'বেশ কয়েকবার ১১২ নম্বর প্লটে যাওয়ার পর মালিকদের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।' সরকারি নিয়মানুযায়ী এ ধরনের পরিত্যক্ত প্লট সরকারের দখলে নেওয়ার কথা।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আব্দুস সাত্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, এই প্লটের প্রকৃত মালিক কে, তা বের করার জন্য বেশ কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে লোক পাঠিয়েছিল। কিন্তু তখন কেউ এসে প্লটের মালিকানা দাবি করেননি। এখন দেখা যাচ্ছে, ট্রান্সকম মালিক। তিনিও স্বীকার করেন, এটার কাগজপত্রে স্বাভাবিকতার ঘাটতি আছে।
নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালের ৮ মার্চ আবুল হোসেন আজানীর ওয়ারিশ তাঁর তিন ছেলে হাসান আলী আজানী, আবদুল আমিন আজানী ও সেলিম আজানীর নামে প্লটটি তিন অংশ করে (১১২এ, ১১২বি ও ১১২সি) নামজারি করানো হয়। এ সময় মূল মালিক আবুল হোসেন আজানী ১৯৯২ সালের ৯ অক্টোবর মারা যান বলে উল্লেখ করা হয়। ওয়ান-ইলেভেনের পর ২০০৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান ওই ওয়ারিশদের কাছ থেকে প্লটটি নিজের নামে হস্তান্তর করে নেন বলে দেখানো হয়। নিয়মানুযায়ী পুরো প্লট নেওয়া যায় না বিধায় কাগজ-কলমে ১১২বি ও সি নম্বর অংশ তিনি নিয়ে নেন। অথচ ১১২এ, বি, সি_এই তিন অংশই একটি প্লট হিসেবে সীমানা-দেয়াল দেওয়া রয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্লট হস্তান্তরের কাগজপত্রে লতিফুর রহমানের ঠিকানা হিসেবে ৫২ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ ও আবুল হোসেন আজানীর ওয়ারিশদের ঠিকানা হিসেবে ১১২ বি/সি তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা বলে উল্লেখ করা হয়। উভয় পক্ষের চুক্তির কোথাও নিয়মমাফিক কারো স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু প্লটের হস্তান্তর অনুমতির (সেল পারমিশন) ক্ষেত্রে নেওয়া নাগরিকত্বের সনদপত্রে আবুল হোসেন আজানী ও তাঁর তিন ছেলের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে '৫৬/১, সিদ্ধেশ্বরী রোড, রমনা, ঢাকা-১২১৭' উল্লেখ রয়েছে।
নথিপত্র ঘেঁটে আরো দেখা গেছে, ওই নাগরিকত্বের সনদ দিয়েছেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় গত জানুয়ারিতে আটক হয়ে জেলে আছেন এই আরিফুল ইসলাম। এ কারণে তাঁর সঙ্গে কথা বলে বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
তবে গত বুধবার বিকেলে ৫৬/১, সিদ্ধেশ্বরী রোড, রমনায় গিয়ে দেখা যায়, ভিকারুননিসা নূন স্কুলের উত্তর-পূর্ব দিকে এই হোল্ডিং নম্বরে একটি ছিমছাম সাততলা আবাসিক ভবন। নিরাপত্তাকর্মী মো. করিম জানান, আবুল হোসেন আজানী নামে কোনো ব্যক্তি এখানে থাকেন না। এমনকি হাসান আলী আজানী, আমিন আলী আজানী বা সেলিম আজানী নামেরও কেউ এখানে নেই। বছর দশেক আগে ছয় বন্ধু মিলে এ ভবনটি তৈরি করে নিচতলায় গ্যারেজ বানিয়ে প্রত্যেকে একটি করে তলা ভাগ করে নিয়েছেন। এই ছয়জনকেই তিনি চেনেন। তাঁদের মধ্যে আজানী পদবির কোনো ব্যক্তি নেই।
গতকাল রবিবার রাতে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা হয়, দোতলার মালিক উত্তরা ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা কামালউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ ভবনে যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই বাংলাদেশি। তাঁদের চৌদ্দ পুরুষ বাংলাদেশি। জমিটা আগে আগা খানের সম্পত্তি ছিল। তাঁরা কিনে এখানে বাড়ি করেছেন। আজানী পদবির কাউকে তাঁরা চেনেন না। এ নামের সঙ্গে কখনো পরিচয়ও হয়নি।
অথচ আজানী পদবির তিন ব্যক্তির নামেই ২০০৬ সালের ৮ মার্চ নাম জারি করা হয়েছে এবং তাঁদের কাছ থেকেই ট্রান্সকম গ্রুপ প্লটটি হস্তান্তর করে নিয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। ট্রান্সকমের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক লতিফুর রহমান দলিলে স্বাক্ষর করেন এবং ২০০৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রান্সকম গ্রুপ প্লটটির মালিক হয় বলে নথিতে উল্লেখ আছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, এই প্লট হস্তান্তরের সময় মূল মালিকদের কেউ অফিসে আসেননি। তাঁদের কাউকেই তাঁরা চেনেন না। ট্রান্সকমের লোকজনই তখন এসেছেন।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ ধরনের শিল্প-প্লট বিক্রির নিয়ম নেই, তবে হস্তান্তরের নিয়ম আছে। এ ক্ষেত্রে কাউকে হস্তান্তর করতে হলে সরকার নির্ধারিত মূল্যের ২৭ শতাংশ অর্থ জমির মূল মালিককে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। সরকারি হিসাবে ২০০২ সালের পর থেকে তেজগাঁও শিল্প-প্লটের প্রতি বিঘার মূল্য ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। এ হিসাবে মূল্য দিতে হয়েছে মাত্র ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তবে এ ক্ষেত্রে এই টাকা ট্রান্সকম গ্রুপই পরিশোধ করেছে বলে জানা গেছে। আর এভাবে পানির দামেই প্লটের মালিক হয়ে গেছে ট্রান্সকম। এরপর প্রভাব খাটিয়ে ওই প্লটের অবৈধ দখলদারদের পুলিশ দিয়ে হটিয়ে সেখানে মালিকানার সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয় ট্রান্সকম।
মন্ত্রণালয়ের (সেকশন-৭) কর্মকর্তা আবুল বাশার বলেন, প্লট হস্তান্তর করলে মূল মালিক ওই প্লটে স্থাপিত শিল্পের অন্যতম পরিচালক হিসেবে থাকার নিয়ম। কিন্তু এই প্লটের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকৃত মালিক না থাকায় এই প্লটের মালিকানা দাবি করে আগেও কয়েকজন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁরা সবাই নিজেকে আবুল হোসেন আজানী হিসেবে পরিচয় দিতেন। কিন্তু কেউ-ই আসল ব্যক্তি ছিলেন না। অবশ্য এভাবে তেজগাঁওয়ে আরো কয়েকটি প্লট অতীতে অজ্ঞাতসারে ভুয়া লোককে মালিক বানিয়ে প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছেন। এই প্লটটির ঘটনা তাঁদেরও জানা ছিল। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর পর্যায়ের নির্দেশ থাকায় তাঁরা সবাই চুপ থাকতে বাধ্য হন।
সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে দেয়াল ঘেরা প্লটটির ভেতরে কয়েকটি জরাজীর্ণ টিনশেড। ভেতরে শেডের নিচে সাজানো রয়েছে কাগজের রোল। একজন কর্মী জানান, এই জায়গাটি ট্রান্সকম গ্রুপ কাগজের গুদামঘর হিসেবে ব্যবহার করছে। এখান থেকেই প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ছাপার জন্য কাগজ নিয়ে যাওয়া হয়। আবার এনে এখানে রাখা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, মূল ফটক ও পাশের দেয়ালে দুটি সাইনবোর্ড টাঙানো। তাতে লেখা_'ট্রান্সকম লিমিটেডের নিজস্ব সম্পত্তি, প্রধান কার্যালয়, ৫২ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০, ফোন ৯৫৬১৭৭০, ৮৮১৮৩২৭-৩০।'
এই নম্বরে যোগাযোগ করে দৈনিক কালের কণ্ঠের পরিচয় দিয়ে ট্রান্সকমের দায়িত্বশীল ব্যক্তির সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে বলা হয়, বসদের কেউ এখন নেই। পরে গত বুধবার সশরীরে ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন আকন্দের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে সিকিউরিটি ইনচার্জ ইব্রাহিম বলেন, 'স্যার আছেন'। তবে এ প্রতিবেদকের ভিজিটিং কার্ড নিয়ে ভেতরে ঘুরে এসেই তিনি আবার বলেন, 'স্যার কোথায় যেন গেছেন। একটু আগেও দেখেছিলাম।'
ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকার প্লট বরাদ্দ ও হস্তান্তরের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা রয়েছে। এই নীতিমালার ৪৫টি ধারা রয়েছে। এ ছাড়া কিছু উপধারাও রয়েছে। ৭ নম্বর ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, 'ইজারা গ্রহীতা শিল্প-প্লট দখলে নেওয়ার দুই বছরের মধ্যে শিল্প স্থাপন করে উৎপাদন শুরু করবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিল্প স্থাপনে ব্যর্থ হলে ইজারা বাতিল বলে গণ্য হবে।' অবশ্য যথাযথ ও পর্যাপ্ত কারণ থাকলে জরিমানা হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা পরিশোধ করে এক বছর সময় বাড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে। ২০০৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্লটটি দখলের দুই বছর পূর্ণ করেছে ট্রান্সকম গ্রুপ। তারপরও আরো এক বছর দুই মাস অতিবাহিত হতে চলেছে। এই দীর্ঘ সময়ে ট্রান্সকম গ্রুপ সেখানে কোনো শিল্প-কারখানা স্থাপন করেনি। এমনকি কোনো কারণ দেখিয়ে মেয়াদ বাড়ানোরও কোনো আবেদন করেনি। ফলে কোনো জরিমানাও পরিশোধ করেনি। এ ধরনের অনিয়মের দায়ে নিয়মানুযায়ী প্লটটি বাতিল হওয়ার কথা।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের তেজগাঁও অঞ্চলের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল হাশেম ভুঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এখানে ভুয়া মালিক সাজিয়ে এনে প্রভাব খাটিয়ে অনেক পরিত্যক্ত প্লট হস্তান্তরের ঘটনা ঘটেছে। তেজগাঁও এলাকায় দশ-পনেরটি প্লটের ক্ষেত্রে এ রকম হয়েছে।'
http://www.dailykalerkantho.com/?view=details&type=single&pub_no=133&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&news_id=47785
এক-এগারোর পরপরই ভুয়া ব্যক্তিদের মালিক সাজিয়ে ৪০ কোটি টাকার প্লট সাড়ে ১৫ লাখ টাকায়!
তেজগাঁও শিল্প এলাকায় দুই বিঘা আয়তনের একটি শিল্পপ্লট মাত্র ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকায় হাতিয়ে নিয়েছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মালিকানাধীন ব্যবসায়ী গ্রুপ ট্রান্সকম। প্লটের ভারতীয় বংশোদ্ভূত মালিক স্বাধীনতার পর এ দেশে ফিরে না আসায় দীর্ঘদিন যাবৎ প্লটটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। ভুয়া ব্যক্তিদের মালিক সাজিয়ে কাগজপত্র বানিয়ে শুধু হস্তান্তর ফি দিয়ে অমূল্য প্লটটির মালিক হয়ে গেছে ট্রান্সকম গ্রুপ। অথচ তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এক কাঠা জমির বর্তমান বাজারমূল্য কমপক্ষে এক কোটি টাকা। এ হিসাবে ওই প্লটের দাম কোনো-ভাবেই ৪০ কোটি টাকার কম নয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই ঘটনা ঘটে। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে ট্রান্সকম গ্রুপের এই বিস্ময়কর জালিয়াতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সেই সূত্রে ট্রান্সকমের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক লতিফুর রহমানের সঙ্গেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। সরকারি প্রভাব খাটিয়ে জালিয়াতির কাজটি করাও তাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।
তেজগাঁও শিল্পপ্লটের দায়িত্ব পালনকারী ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, এই প্লটের কাগজপত্র দেখে কিছু অসংগতি আছে বলে মনে হয়। এ ধরনের দামি প্লট হস্তান্তরের ক্ষেত্রে অসংগতি থাকার কথা নয়। তার পরও আছে। এটা সন্দেহজনক।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৫৩ সালে ৪৩৭টি প্লট তৈরির মধ্য দিয়ে তেজগাঁও শিল্প এলাকার যাত্রা শুরু হয়। ১৯৫৬ সালে এ শিল্প এলাকার ১১২ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ পান মরহুম জাফর আলী আজানীর ছেলে আবুল হোসেন আজানী নামের একজন অবাঙালি। বরাদ্দের পর সেখানে লোহালক্কড়ের একটি কারখানা স্থাপন করেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আবুল হোসেন আজানী দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি আর ফিরে আসেননি।
দীর্ঘদিন যাবৎ ওই প্লটটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। কিছু প্রভাবশালী লোক প্লটটি দখল করে সাইকেল-ভ্যানের টায়ার তৈরির ছোট্ট কারখানা বানিয়ে চালু রাখে। লতিফুর রহমানের নজর পড়লে প্লটটি দখলের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি শুরু করেন তিনি।
তেজগাঁও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়, সেগুনবাগিচায় অবস্থিত তেজগাঁও শিল্প এলাকার গণপূর্ত বিভাগ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত ওই প্লটের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, বরাদ্দের পর ১৯৫৭ সালের ১৬ জানুয়ারি আবুল হোসেন আজানী প্লটের দখল পান। পরে সেখানে তিনি নাজ মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ নামের একটি কারখানা গড়ে তোলেন। স্বাধীনতার পর গণপূর্ত বিভাগের লোকজন একাধিকবার প্লটের খোঁজখবর নিতে যান। তাঁরা প্রকৃত মালিক আবুল হোসেন আজানীকে পাননি। দখলদাররাও গণপূর্তের লোকদের তথ্য দিয়ে কোনো সহযোগিতা করেনি। ১৯৯৭ সালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা 'শিল্পপ্লটগুলোর বর্তমান অবস্থার চিত্র সম্পর্কিত প্রতিবেদন'-এ উল্লেখ করা হয়, 'বেশ কয়েকবার ১১২ নম্বর প্লটে যাওয়ার পর মালিকদের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।' সরকারি নিয়মানুযায়ী এ ধরনের পরিত্যক্ত প্লট সরকারের দখলে নেওয়ার কথা।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আব্দুস সাত্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, এই প্লটের প্রকৃত মালিক কে, তা বের করার জন্য বেশ কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে লোক পাঠিয়েছিল। কিন্তু তখন কেউ এসে প্লটের মালিকানা দাবি করেননি। এখন দেখা যাচ্ছে, ট্রান্সকম মালিক। তিনিও স্বীকার করেন, এটার কাগজপত্রে স্বাভাবিকতার ঘাটতি আছে।
নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালের ৮ মার্চ আবুল হোসেন আজানীর ওয়ারিশ তাঁর তিন ছেলে হাসান আলী আজানী, আবদুল আমিন আজানী ও সেলিম আজানীর নামে প্লটটি তিন অংশ করে (১১২এ, ১১২বি ও ১১২সি) নামজারি করানো হয়। এ সময় মূল মালিক আবুল হোসেন আজানী ১৯৯২ সালের ৯ অক্টোবর মারা যান বলে উল্লেখ করা হয়। ওয়ান-ইলেভেনের পর ২০০৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান ওই ওয়ারিশদের কাছ থেকে প্লটটি নিজের নামে হস্তান্তর করে নেন বলে দেখানো হয়। নিয়মানুযায়ী পুরো প্লট নেওয়া যায় না বিধায় কাগজ-কলমে ১১২বি ও সি নম্বর অংশ তিনি নিয়ে নেন। অথচ ১১২এ, বি, সি_এই তিন অংশই একটি প্লট হিসেবে সীমানা-দেয়াল দেওয়া রয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্লট হস্তান্তরের কাগজপত্রে লতিফুর রহমানের ঠিকানা হিসেবে ৫২ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ ও আবুল হোসেন আজানীর ওয়ারিশদের ঠিকানা হিসেবে ১১২ বি/সি তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা বলে উল্লেখ করা হয়। উভয় পক্ষের চুক্তির কোথাও নিয়মমাফিক কারো স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু প্লটের হস্তান্তর অনুমতির (সেল পারমিশন) ক্ষেত্রে নেওয়া নাগরিকত্বের সনদপত্রে আবুল হোসেন আজানী ও তাঁর তিন ছেলের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে '৫৬/১, সিদ্ধেশ্বরী রোড, রমনা, ঢাকা-১২১৭' উল্লেখ রয়েছে।
নথিপত্র ঘেঁটে আরো দেখা গেছে, ওই নাগরিকত্বের সনদ দিয়েছেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় গত জানুয়ারিতে আটক হয়ে জেলে আছেন এই আরিফুল ইসলাম। এ কারণে তাঁর সঙ্গে কথা বলে বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
তবে গত বুধবার বিকেলে ৫৬/১, সিদ্ধেশ্বরী রোড, রমনায় গিয়ে দেখা যায়, ভিকারুননিসা নূন স্কুলের উত্তর-পূর্ব দিকে এই হোল্ডিং নম্বরে একটি ছিমছাম সাততলা আবাসিক ভবন। নিরাপত্তাকর্মী মো. করিম জানান, আবুল হোসেন আজানী নামে কোনো ব্যক্তি এখানে থাকেন না। এমনকি হাসান আলী আজানী, আমিন আলী আজানী বা সেলিম আজানী নামেরও কেউ এখানে নেই। বছর দশেক আগে ছয় বন্ধু মিলে এ ভবনটি তৈরি করে নিচতলায় গ্যারেজ বানিয়ে প্রত্যেকে একটি করে তলা ভাগ করে নিয়েছেন। এই ছয়জনকেই তিনি চেনেন। তাঁদের মধ্যে আজানী পদবির কোনো ব্যক্তি নেই।
গতকাল রবিবার রাতে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা হয়, দোতলার মালিক উত্তরা ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা কামালউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ ভবনে যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই বাংলাদেশি। তাঁদের চৌদ্দ পুরুষ বাংলাদেশি। জমিটা আগে আগা খানের সম্পত্তি ছিল। তাঁরা কিনে এখানে বাড়ি করেছেন। আজানী পদবির কাউকে তাঁরা চেনেন না। এ নামের সঙ্গে কখনো পরিচয়ও হয়নি।
অথচ আজানী পদবির তিন ব্যক্তির নামেই ২০০৬ সালের ৮ মার্চ নাম জারি করা হয়েছে এবং তাঁদের কাছ থেকেই ট্রান্সকম গ্রুপ প্লটটি হস্তান্তর করে নিয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। ট্রান্সকমের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক লতিফুর রহমান দলিলে স্বাক্ষর করেন এবং ২০০৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রান্সকম গ্রুপ প্লটটির মালিক হয় বলে নথিতে উল্লেখ আছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, এই প্লট হস্তান্তরের সময় মূল মালিকদের কেউ অফিসে আসেননি। তাঁদের কাউকেই তাঁরা চেনেন না। ট্রান্সকমের লোকজনই তখন এসেছেন।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ ধরনের শিল্প-প্লট বিক্রির নিয়ম নেই, তবে হস্তান্তরের নিয়ম আছে। এ ক্ষেত্রে কাউকে হস্তান্তর করতে হলে সরকার নির্ধারিত মূল্যের ২৭ শতাংশ অর্থ জমির মূল মালিককে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। সরকারি হিসাবে ২০০২ সালের পর থেকে তেজগাঁও শিল্প-প্লটের প্রতি বিঘার মূল্য ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। এ হিসাবে মূল্য দিতে হয়েছে মাত্র ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তবে এ ক্ষেত্রে এই টাকা ট্রান্সকম গ্রুপই পরিশোধ করেছে বলে জানা গেছে। আর এভাবে পানির দামেই প্লটের মালিক হয়ে গেছে ট্রান্সকম। এরপর প্রভাব খাটিয়ে ওই প্লটের অবৈধ দখলদারদের পুলিশ দিয়ে হটিয়ে সেখানে মালিকানার সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয় ট্রান্সকম।
মন্ত্রণালয়ের (সেকশন-৭) কর্মকর্তা আবুল বাশার বলেন, প্লট হস্তান্তর করলে মূল মালিক ওই প্লটে স্থাপিত শিল্পের অন্যতম পরিচালক হিসেবে থাকার নিয়ম। কিন্তু এই প্লটের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকৃত মালিক না থাকায় এই প্লটের মালিকানা দাবি করে আগেও কয়েকজন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁরা সবাই নিজেকে আবুল হোসেন আজানী হিসেবে পরিচয় দিতেন। কিন্তু কেউ-ই আসল ব্যক্তি ছিলেন না। অবশ্য এভাবে তেজগাঁওয়ে আরো কয়েকটি প্লট অতীতে অজ্ঞাতসারে ভুয়া লোককে মালিক বানিয়ে প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছেন। এই প্লটটির ঘটনা তাঁদেরও জানা ছিল। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর পর্যায়ের নির্দেশ থাকায় তাঁরা সবাই চুপ থাকতে বাধ্য হন।
সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে দেয়াল ঘেরা প্লটটির ভেতরে কয়েকটি জরাজীর্ণ টিনশেড। ভেতরে শেডের নিচে সাজানো রয়েছে কাগজের রোল। একজন কর্মী জানান, এই জায়গাটি ট্রান্সকম গ্রুপ কাগজের গুদামঘর হিসেবে ব্যবহার করছে। এখান থেকেই প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ছাপার জন্য কাগজ নিয়ে যাওয়া হয়। আবার এনে এখানে রাখা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, মূল ফটক ও পাশের দেয়ালে দুটি সাইনবোর্ড টাঙানো। তাতে লেখা_'ট্রান্সকম লিমিটেডের নিজস্ব সম্পত্তি, প্রধান কার্যালয়, ৫২ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০, ফোন ৯৫৬১৭৭০, ৮৮১৮৩২৭-৩০।'
এই নম্বরে যোগাযোগ করে দৈনিক কালের কণ্ঠের পরিচয় দিয়ে ট্রান্সকমের দায়িত্বশীল ব্যক্তির সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে বলা হয়, বসদের কেউ এখন নেই। পরে গত বুধবার সশরীরে ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন আকন্দের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে সিকিউরিটি ইনচার্জ ইব্রাহিম বলেন, 'স্যার আছেন'। তবে এ প্রতিবেদকের ভিজিটিং কার্ড নিয়ে ভেতরে ঘুরে এসেই তিনি আবার বলেন, 'স্যার কোথায় যেন গেছেন। একটু আগেও দেখেছিলাম।'
ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকার প্লট বরাদ্দ ও হস্তান্তরের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা রয়েছে। এই নীতিমালার ৪৫টি ধারা রয়েছে। এ ছাড়া কিছু উপধারাও রয়েছে। ৭ নম্বর ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, 'ইজারা গ্রহীতা শিল্প-প্লট দখলে নেওয়ার দুই বছরের মধ্যে শিল্প স্থাপন করে উৎপাদন শুরু করবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিল্প স্থাপনে ব্যর্থ হলে ইজারা বাতিল বলে গণ্য হবে।' অবশ্য যথাযথ ও পর্যাপ্ত কারণ থাকলে জরিমানা হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা পরিশোধ করে এক বছর সময় বাড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে। ২০০৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্লটটি দখলের দুই বছর পূর্ণ করেছে ট্রান্সকম গ্রুপ। তারপরও আরো এক বছর দুই মাস অতিবাহিত হতে চলেছে। এই দীর্ঘ সময়ে ট্রান্সকম গ্রুপ সেখানে কোনো শিল্প-কারখানা স্থাপন করেনি। এমনকি কোনো কারণ দেখিয়ে মেয়াদ বাড়ানোরও কোনো আবেদন করেনি। ফলে কোনো জরিমানাও পরিশোধ করেনি। এ ধরনের অনিয়মের দায়ে নিয়মানুযায়ী প্লটটি বাতিল হওয়ার কথা।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের তেজগাঁও অঞ্চলের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল হাশেম ভুঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এখানে ভুয়া মালিক সাজিয়ে এনে প্রভাব খাটিয়ে অনেক পরিত্যক্ত প্লট হস্তান্তরের ঘটনা ঘটেছে। তেজগাঁও এলাকায় দশ-পনেরটি প্লটের ক্ষেত্রে এ রকম হয়েছে।'
http://www.dailykalerkantho.com/?view=details&type=single&pub_no=133&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&news_id=47785
No comments:
Post a Comment