Friday, April 23, 2010

অপরাধ '৭১: প্রশ্ন খণ্ডন করলেন একদল আইনজীবী

ঢাকা, এপ্রিল ২২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- '৭১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ বিচারে দেশে-বিদেশে ওঠা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছে আইনজীবীদের একটি দল।

'৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগীদের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ বিচারে গঠিত তদন্ত সংস্থা, আইনজীবী প্যানেল এবং ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে সম্প্রতি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর তোলা বিভিন্ন 'প্রশ্ন' ও সম্ভাব্য প্রশ্ন মিলিয়ে ৪৮টি প্রশ্নের 'উত্তর' দেয় দলটি।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে '৭১-এর গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার : দেশে-বিদেশে প্রশ্ন' শীর্ষক এক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে এমত দেন দলটির আইনজীবীরা।

অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে যুদ্ধাপরাধ বিচার বিষয়ক নাগরিক কমিশন এবং ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি।

আইনজীবী দলে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকট সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি সৈয়দ আমীরুল ইসলাম, আইন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক এম শাহ আলম, সাবেক রাষ্ট্রদূত সৈয়দ ওয়ালি-উর-রহমান, সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব অ্যাডভান্সড লিগাল এইড অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান খান, আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, অপরাধ বিচারে গঠিত আইনজীবী প্যানেলের প্রধান গোলাম আরিফ টিপু ও ড. তুরীন আফরোজ সদস্য হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।

নির্মূল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক কবীর চৌধুরী।

দলটির মতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগীদের করা অপরাধের বিচার ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনালস) আইনেই স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের হবে।

গত ১৬ এপ্রিল একটি সেমিনারে 'একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত ট্রাইবুনালে আসামিদের আপিলের সুযোগ নেই' অভিযোগ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন সংশোধনের দাবি জানায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থক আইনজীবীরা।

দি ন্যাশনাল ফোরাম ফর প্রোটেকশন অব হিউম্যান রাইটসের (এনএফপিএইচআর) ওই সেমিনারে বলা হয়, ১৯৭৩ সালের ওই আইনে সঠিক বিচার সম্ভব নয়।

সাবেক স্পিকার ও বিএনপির সংসদ সদস্য মুহাম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার ওই সংগঠনটির প্রধান।

প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর তোলা বিভিন্ন প্রশ্ন 'বিভ্রান্তিকর' বলে বৃহস্পতিবার মন্তব্য করেন আইনজীবীরা।

"আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অবস্থান থেকে সরে এসেছে� এই অভিযোগ ঠিক নয়," মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, "আমরা আগেই বলেছি মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে আমরা তাদেরই বিচার করবো।"

এ বিচারে সাক্ষীদের নিরাপত্তা সরকার আইন করার কথা ভাবছে বলেও জানান তিনি।

শফিক বলেন, "তদন্ত সংস্থা, আইনজীবী প্যানেল এবং ট্রাইবুনালের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মান্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিয়েছে।"

ড. শাহদীন মালিক বলেন, "ট্রাইবুনাল নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলা হচ্ছে এটি আন্তর্জাতিক মানের নয়। আইন সম্পর্কে আমার ধারণা থেকে বলতে পারি যারা এটি বলছেন তারা হয় অজ্ঞ না হয় জেনেশুনেই মিথ্যা বলছেন।

"কেননা এই ট্রাইবুনালে একজন অভিযুক্ত আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারবেন, আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন, সাক্ষীদের জেরা করতে পারবেন, এমনকি অভিযোগ প্রমাণিত হলে আপিলও করতে পারবেন।"

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, "আইন কখনো তামাদি হয় না। ৩৯ বছর পর এই বিচার হতে যাচ্ছে। এটা খুব বেশি সময় পর নয়, কারণ দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের অপরাধের বিচার এখনো হচ্ছে।"

বঙ্গবন্ধু রাজাকার, আলবদরদের সাধারণ ক্ষমা করেননি বলে জানান তিনি।

সুরঞ্জিত বলেন, "তিনি দালাল আইনে ৬০ হাজার অপরাধীর বিচারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

"কিন্তু ৭৫-এর পরে সেনাপতি-বিচারপতি আর ভগ্নিপতিরা দেশ এবং দেশের সংবিধানকে ছিন্নভিন্ন করে রাজাকারদের পুনর্বাসিত করেছেন।"

স্বাধীনতার পর কোন যুদ্ধাপরাধী আওয়ামী লীগে আশ্রয় নিয়ে থাকলে তারও বিচার হবে বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

অধ্যাপক মিজানুর রহমান খান বলেন, "অভিযুক্তদের পছন্দমত বিচারক নিয়োগ দিতে হবে এমন আবদার পৃথিবীর কোন দেশেই নেই। কাকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে সে বিষয়ে রাষ্ট্রের একচ্ছত্র অধিকার রয়েছে।"

পৃথিবীর কোন দেশই জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে না� দলটির আমির মতিউর রহমান নিজামীর এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে বিচারপতি সৈয়দ আমীরুল ইসলাম বলেন, "দেশের সব মানুষই জানে '৭১-এ তারা কী অপকর্ম করেছে।"

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক কবীর চৌধুরী বলেন, "ঘটনায় জড়িতরাই এসব প্রশ্ন তুলেছেন।" তিনি বিচারের দোষি প্রমাণিত অপরাদীদের সাজা দ্রুত কার্যকর করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/পিসি/পিডি/২২২৪ ঘ.

No comments: