Wednesday, April 21, 2010

ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল এবং সম্ভাব্য ঢাকা ট্রায়ালের মধ্যে পার্থক্য কী?

কালান্তরের কড়চা

ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল এবং সম্ভাব্য ঢাকা ট্রায়ালের মধ্যে পার্থক্য কী?
আবদুল গাফফার চৌধুরী।।

আমার জার্মান বন্ধু ইভা স্যান্ডার্স একজন তরুণী আইনজীবী। তিনি বামঘেঁষা এবং মাঝে মাঝে বার্লিন থেকে লন্ডনেও আসেন। সৈয়দ মুজতবা আলীর চাচাকাহিনীখ্যাত বিপ্লবী নরেন গুপ্তের ভাইপো সুনীল গুপ্তের (এখন জার্মানির বাঙালি মাত্রেরই সুনীল দা) জার্মান স্ত্রীর সৌজন্যে সম্ভবত ইভার সঙ্গে আমার পরিচয়। সে বেশ কয়েক বছর আগের কথা। এই ইভা আমাকে একটি বই উপহার দিয়েছিলেন। নাম 'ট্রায়াল অব ন্যুরেমবার্গ'_একটি জার্মান বইয়ের ইংরেজি অনুবাদ।
এই বইটি পাঠ করেই যুদ্ধবন্দি, যুদ্ধাপরাধী এবং মানবতাবিরোধী কাজের অপরাধীদের মধ্যে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা এবং পার্থক্য সম্পর্কে আমার মনে একটা ধারণা জন্মেছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে মিত্রপক্ষের হাতে বন্দি জার্মান বা ইতালিয়ান সৈন্যদের যখন মুক্তি দেওয়া হয়, তখন তাদের যুদ্ধবন্দি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে; যুদ্ধাপরাধী হিসেবে নয়। তারা তাদের সেনাপ্রধানদের নির্দেশে যুদ্ধ করেছে; নিজেদের ইচ্ছায় নয়।
অন্যদিকে, এই নির্দেশদাতা ফ্যাসিস্ট সেনাপতি এবং ফ্যাসিস্ট রাজনীতিকদের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী কাজের অপরাধী হিসেবে বিচারে সোপর্দ করা এবং শাস্তি দেওয়া হয়েছে। প্রথম কোরিয়া-যুদ্ধের পর পানমুনজন বৈঠকে মার্কিন এবং উত্তর কোরীয় যুদ্ধবন্দি বিনিময়কালেও একই নীতি অনুসৃত হয়। বাংলাদেশের '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পর আটক ৯০ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যকে যুদ্ধাপরাধী নয়, যুদ্ধবন্দি হিসেবে মুক্তি দিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকার সঠিক কাজই করেছিল। কিন্তু পাকিস্তানি হানাদারদের সেনাপ্রধান জেনারেল টিক্কা খান, নিয়াজি এবং রাও ফরমান আলীসহ গণহত্যার নির্দেশদাতা শতাধিক ব্যক্তিকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বাংলাদেশ সরকার তখনই চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু তাদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
এর কারণ ছিল তখনকার আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি। পাকিস্তান তখন বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ঘটিয়ে কার্যত তার স্বাধীন অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে যেসব দেশ তখন বাংলাদেশকে সমর্থন ও সাহায্য দিয়েছে, সেই ভারত এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নও মুজিব সরকারকে পাকিস্তানের নয়া ভুট্টো সরকারের সদিচ্ছা মেনে নিতে পরামর্শ দিচ্ছিল। ভুট্টো সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বাংলাদেশে পাকিস্তানি জেনারেলদের মধ্যে যারা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছে, তাদের পাকিস্তান সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হলে পাকিস্তানেই তাদের অপরাধের বিচার ও শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা হবে। পরবর্তী সময়ে জুলফিকার আলী ভুট্টো এই প্রতিশ্রুতি তো পালন করেনই নি, বরং টিক্কা খানসহ অনেক যুদ্ধাপরাধীকে সেনা বিভাগে প্রোমোশন দিয়েছিলেন। তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সিমলা চুক্তিও মানেননি। এর পরিণতি তিনি নিজেই কিছুদিন পর মর্মান্তিকভাবে বরণ করেছেন। সে আরেক কেচ্ছা।
বাংলাদেশের বাসিন্দা হয়ে যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তি ও দল যুদ্ধাপরাধ করেছে, মুজিব সরকার তাদের কোনো ক্ষমা প্রদর্শন করেনি। সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়েছিল সাধারণ কোলাবরেটরদের। ওয়ার ক্রিমিনাল এবং কোলাবরেটরদের মধ্যে পার্থক্য কী, তাও 'ট্রায়াল অব ন্যুরেমবার্গ' বইটি পাঠ করলে ভালোভাবে জানা যায়। এই ট্রায়ালেও সাধারণ নাৎসি কোলাবরেটরদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়নি। কিন্তু পালের গোদাদের রেহাইও দেওয়া হয়নি। যেমন, যুদ্ধকালীন ব্রিটেনের চার্চিল মন্ত্রিসভার একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী স্যার জন এমেরির ছেলে জুনিয়র এমেরি জার্মানিতে পালিয়ে গিয়ে নাৎসি কোলাবরেটর হয়েছিলেন। তার শুধু নাগরিকত্বই হরণ করা হয়নি, বরং তাকে বিচার করে কঠোর শাস্তিও দেওয়া হয়েছিল। আমাদের দেশেও মুক্তিযুদ্ধ শেষে গোলাম আযমদের মতো পলাতক শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের এক শ্রেণীর 'ন্যায়পরায়ণ' বিচারপতি সেই নাগরিকত্ব পুনর্বহাল করতে 'বিব্রত' বোধ করেননি।
বাংলাদেশ হানাদারমুক্ত হওয়ার পরপরই দেশি যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে সঙ্গে বিচারে সোপর্দ করাও সম্ভব ছিল না। কারণ, দেশি যুদ্ধাপরাধীদের শীর্ষস্থানীয়রা যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই পাকিস্তান ও সৌদি আরবে পালিয়ে গিয়েছিল। সুতরাং নাগরিকত্ব বাতিল করা ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে তখন আর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি। অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীর নাম ও অপরাধের তালিকা প্রস্তুতকরণ এবং বিচারের প্রক্রিয়া পূর্ণ করার কাজটি ছিল সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তথাপি এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর সরকার দালাল আইন প্রণয়নসহ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তা শেষ করার সুযোগ ও সময় সেই সরকার পায়নি। ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুর সরকারকে উৎখাত করা হয়। সেই উৎখাতের ষড়যন্ত্রেও এসব যুদ্ধাপরাধী জড়িত ছিল।
যেসব যুদ্ধাপরাধী এখন দাবি করেন, বঙ্গবন্ধু তাঁদের ক্ষমা করেছিলেন, তাঁদের মিথ্যাচারের একটাই জবাব_এসব যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা করার ইচ্ছা থাকলে বঙ্গবন্ধু তাঁদের নাগরিকত্ব বাতিল করেছিলেন কেন? আর পরবর্তীকালে ক্ষমা করে থাকলে তাঁদের নাগরিকত্ব পুনর্বহাল করেননি কেন? বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবদ্দশায় এসব যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা করে দিয়ে থাকলে গোলাম আযম কেন তখন দেশে ফিরে আসেননি? তাঁর দেশে ফেরার ওপর তো কোনো সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল না।
গোলাম আযম দেশে ফিরেছেন, তবে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রটি সফল হওয়ার পর। ক্ষমতা দখলের পর জিয়াউর রহমান তখন অবৈধভাবে দালাল আইন বাতিল করেছেন এবং গোলাম আযমকে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে এসে রাজনীতি করার অনুমতি ও সুযোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল-সংগঠনের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, জিয়াউর রহমান তাঁর কলমের খোঁচায় সেই আইন বাতিল করার ফলে জামায়াতের মতো যুদ্ধাপরাধী ঘাতক দলটি আবার দেশের মাটিতে মাথা তোলার সুযোগ পায়। এই সত্যটিকে ধামাচাপা দিয়ে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীরা এখন দাবি করছে, বঙ্গবন্ধু তাঁদের ক্ষমা করে গিয়েছিলেন। কিন্তু মুখের কথায় তো সরকারিভাবে ক্ষমা প্রদর্শন হয় না। যেমন, পাকিস্তানের জামায়াত নেতা মাওলানা মওদূদীর ফাঁসির আদেশ রাষ্ট্রপতি তাঁর প্রাণভিক্ষা দানের সাংবিধানিক অধিকার বলে বাতিল করেছিলেন; এবং তা সরকারি গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছিল। বাংলাদেশে জামায়াতি যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা প্রদর্শনের সেই গেজেট নোটিফিকেশন কই?
আমি আইনবিদ নই। আইনের চুলচেরা বিচার করার ক্ষমতা এবং অধিকারও আমার নেই। তাই বাংলাদেশের সেরা আইনবিশারদ ড. কামাল হোসেন, বিচারপতি হাবিবুর রহমান (শেলী), ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ প্রমুখের কাছে আমার একটি অজ্ঞতাপ্রসূত জিজ্ঞাসা, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল এবং '৭২-এর সংবিধান কার্যত পুনর্বহাল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জিয়াউর রহমানের গোটা শাসনামল এবং সেই আমলের আইন, অর্ডিন্যান্স ও সংশোধনী অবৈধ ঘোষিত হওয়ার পর জিয়াউর রহমানের সাম্প্রদায়িক ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পুনর্বহালের আইনটিও কি অবৈধ হয়ে যায়নি? আর অবৈধ হয়ে গিয়ে থাকলে বাংলাদেশে জামায়াত এবং জামায়াতের মতো ধর্মান্ধ ও সাম্প্রদায়িক দলগুলো কি এখনো বৈধ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য; এবং তাঁরা রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোর অধিকার কি রাখে? আমাদের বিজ্ঞ আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদই বা এ সম্পর্কে কী বলেন?
বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভবত ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে এবং তা ট্রায়াল অব ঢাকা বা ঢাকা ট্রায়াল নামে অভিহিত হবে। যদিও ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের আদলেই সম্ভাব্য ঢাকা ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হবে, তথাপি এই দুই ট্রায়ালের মধ্যে একটা কালগত এবং অবস্থানগত যে পার্থক্য আছে, এ কথাটি যেন সরকার এবং আইনজীবীরা না ভোলেন। ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের আগে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হয়েছে; এবং হিটলারের আত্দহত্যা ও মুসোলিনি নিহত হওয়ার পর হিমলার, হেস, গোয়েরিং, তোজো প্রমুখ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী তখন ইতিমধ্যেই বন্দি হয়েছে এবং কারাকক্ষে বন্দিজীবন যাপন করছে। তাদের পক্ষে আদালতে দাঁড়ানোর জন্য ইউরোপ-আমেরিকায় কোনো খ্যাতনামা আইনজীবীকেও পাওয়া যাচ্ছিল না।
সারা বিশ্ব তখন এই পরাজিত ও বন্দি ফ্যাসিস্ট যুদ্ধাপরাধীদের ধিক্কার দিচ্ছে এবং বিচারের দাবি জানাচ্ছে। এদের জন্য প্রকাশ্যে সহানুভূতি প্রকাশ তো দূরের কথা, গোপনে অশ্রু বিসর্জনেরও কেউ ছিল বলে জানা যায় না। যুদ্ধাপরাধীদের ঘনিষ্ঠ আত্দীয়স্বজনরাও এই আত্দীয়তার কথা অস্বীকার, এমনকি অনেকে নামের পদবি পর্যন্ত বদলাতে শুরু করেছিল। আমার জানা মতে, বিশ্বের একটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানও এদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ রদ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দানের সুপারিশ জানায়নি। একমাত্র ফ্রান্সের নাৎসি কোলাবরেটর মার্শাল গেঁতাকে তার বয়স বিবেচনা করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের সঙ্গে সম্ভাব্য ঢাকা ট্রায়ালের পরিবেশ-পরিস্থিতিগত একটা বড় পার্থক্য এই যে, একাত্তরের এসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার হতে যাচ্ছে দীর্ঘ ৩৯ বছর পর। এই চার দশকের মধ্যে সভ্য গণতান্ত্রিক দুনিয়ায় যা ঘটেনি, তা বাংলাদেশে ঘটেছে। অর্থাৎ, এসব যুদ্ধাপরাধী ক্ষমতায় বসেছে এবং ক্ষমতার অনুগ্রহ বিতরণ করে তারা দেশ-বিদেশে সাংবাদিক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবীসহ অন্যান্য পেশার লোকজনের মধ্যেও সমর্থক সৃষ্টি করেছে; এবং তাদের যুদ্ধাপরাধের অনেক নথিপত্র গোপন করে, মিথ্যা প্রচার চালিয়ে সাধারণ জনমনেও কিছুকালের জন্য এই যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে একটা বিভ্রান্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।
এই যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক ও সাহায্য দানকারী কিছু দেশও আছে (যেটা ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের আসামিদের ছিল না)। এসব দেশ হলো পাকিস্তান ও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো মুসলিম দেশ। 'ইসলাম রক্ষার' ধূর্ত স্লোগান তুলে এই দেশগুলোকে যুদ্ধাপরাধীরা বিভ্রান্ত করেছে এবং তাদের একাত্তরের ভূমিকা পাকিস্তান ও সৌদি আরবের শাসকদের স্বার্থ ও রাষ্ট্রীয় নীতির অনুকূল ছিল বলে তখন তারা যেমন এই দুই শাসককুলের মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে, তেমনি এখনো পাচ্ছে। পেট্রো-ডলারের সাহায্যেই এসব যুদ্ধাপরাধী সারা বিশ্বে বিরাট-বিপুল প্রচারণার মাধ্যমে জনমতকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের পক্ষে সহানুভূতিশীল করে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং অনুগত মিডিয়ার প্রচারণার জোরেই নিজেদের অপরাধ ঢাকা দেওয়ারও চেষ্টা করছে।
তাই সম্ভাব্য ঢাকা ট্রায়ালের পথ অতীতের ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের মতো সহজ এবং সুগম নয়। একদিকে শক্তিশালী যুদ্ধাপরাধীরা এবং তাদের প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মিত্ররা, অন্যদিকে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এবং দেশের সচেতন জনমত। এই সচেতন এবং ঐক্যবদ্ধ জনমত এবং বহির্বিশ্বেরও সচেতন মানুষের সমর্থনই বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের একমাত্র শক্তি। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়েই এই বিচারের উদ্যোক্তাদের সাবধানে সামনে এগোতে হবে। বহির্বিশ্বে যুদ্ধাপরাধীদের শক্তিশালী প্রোপাগান্ডা ব্যর্থ করার জন্য দেশের জনগণের প্রতিনিধিস্থানীয় ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত টিম বিভিন্ন দেশে পাঠাতে হবে। এক শ্রেণীর মিডিয়ার প্রাত্যহিক অপপ্রচারের জবাব দেওয়ার জন্য দক্ষ মিডিয়া টিম গঠন করতে হবে। দলীয় আনুগত্যের বিচার-বিবেচনা না করে দেশপ্রেমিক এবং যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ আইনজীবীদের এই বিচার প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হবে।
আমার বিশ্বাস, অর্থবলে এবং প্রোপাগান্ডার শক্তিতে যুদ্ধাপরাধীরা যতই বলীয়ান হোক, মানবতা ও ন্যায়বিচারের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ বিশ্ববাসীকে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা আর বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হবে না। তাদের আন্তর্জাতিক মিত্রদের অনেকে ইতিমধ্যেই তাদের প্রকাশ্য সমর্থন দান থেকে বিরত থাকছে। দেশের জনমতেও এখন পর্যন্ত চিড় ধরাতে পারেনি তারা। তাই শুরু হয়েছে ক্রমাগত প্রলাপোক্তি। সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর অবস্থান নিক। ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের সঙ্গে সম্ভাব্য ঢাকা ট্রায়ালের পরিস্থিতিগত অনেক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এই ট্রায়ালও অবশ্যই অনুষ্ঠিত হবে এবং সফল হবে।
লন্ডন, ১৯ এপ্রিল, সোমবার, ২০১০

No comments: