বাংলাদেশ সংবিধান ও পটভূমি(২) ।।এম. আমীর-উল ইসলাম
(পূব প্রকাশের পর)
১০ম ভাগ অনুযায়ী সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সংবিধান সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। একাদশ ভাগে প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তি। তার উপর নির্বাহী কর্তৃত্ব ও ব্যবস্থাপনা, চুক্তি ও দলিল, আন্তর্জাতিক চুক্তি বিষয়ে ও বাংলাদেশের পক্ষে বা বিপক্ষে মামলা, সাংবিধানিক পদধারীদের পারিশ্রমিক, পদের শপথ, প্রচলিত আইনের হেফাজত, ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী রহিতকরণ ও সংবিধানের ব্যবহৃত কিছু কিছু শব্দ, সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা।
আমাদের সংবিধান মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। একটি ভাগ প্রজাতন্ত্রের ল্য, উদ্দেশ্য, প্রতিশ্রুতি ও বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ জনগণের অধিকার, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, নাগরিকের মৌলিক অধিকার; এবং অন্য ভাগে এগুলো বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও সংসদ এবং রাষ্ট্রের অন্যান্য সাংবিধানিক কর্মকর্তা ও কর্ম বিভাগ কে কী ভূমিকা রাখবে তার বর্ণনা রয়েছে। স্থানীয় সরকারের কাঠামোতে সর্বস্তরে প্রশাসন জনগণের প্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে বলবত থাকবে। এগুলো বাস্তবায়ন ও মতার ভারসাম্য রার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির মূল নক্সা রচনা করা হয়েছে সংবিধানে। ঐসব উদ্দেশ্য সাধনে আইন প্রণয়নের মতা ও দিক নির্দেশনাও বিদ্যমান।
আমাদের সংবিধানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করবার জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে জনগণের সম্পদ ও মালিকানা এবং উৎপাদন ও বণ্টন প্রণালীসমূহ নিয়ন্ত্রণে জনগণের অধিকার; কৃষক, শ্রমিক ও জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে শোষণ থেকে মুক্তির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। মানুষের মৌলিক প্রয়োজন নিশ্চিত করবার জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণ নিশ্চিত করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও বেকারত্ব থেকে মুক্তি; ব্যাধিগ্রস্ত, পঙ্গু, বিধবা, এতিম, বৃদ্ধ ও ভাগ্যাহতদের জন্য রাষ্ট্রের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ রয়েছে। সেই সাথে গ্রামের উন্নয়ন, নগর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ, কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুত ব্যবস্থার সৃষ্টি; শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল পরিবর্তনের ব্যবস্থা, গণমুখী সর্বজনীন শিক্ষা, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, সময়ের সাথে শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করা এবং শিক্ষা ও প্রশিণের মাধ্যমে প্রকৃত দেশপ্রেমিক নাগরিক সৃষ্টি, নিরতা দূরীকরণ, পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য এবং নৈতিকতার উন্নয়ন, সকলের জন্য সুযোগের সমতা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবিচার থেকে মুক্তি, সম্পদের সুষম বণ্টন, কর্মের অধিকার ও কর্মকে কর্তব্যে পরিণত করা, নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ, নাগরিক ও সরকারী কর্মচারীদের কর্তব্য বিধান, জাতীয় সংস্কৃতির বিকাশ, ইতিহাস ও ঐতিহাসিক বস্তু এবং স্থানসমূহের বিকৃতি ও তিসাধন রোধ, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার উন্নয়ন_ সবই আমাদের সংবিধানের প্রত্যয় ও প্রতিশ্রুতি।
সেই সাথে প্রতিটি নাগরিকের জন্য মৌলিক অধিকার যথা, আইনের দৃষ্টিতে সমতা, নারী ও পুরম্নষের সমান অধিকার; ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণের কারণে বৈষম্য দূরীকরণ, সরকারী নিয়োগলাভে সুযোগের সমতা, আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার, জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার রা, গ্রেফতার ও অবৈধ আটক সমপর্কে অধিকারের রাকবচ, জবরদস্তি শ্রম ও নিবর্তনমূলক আটকের ব্যাপারে বিধিবদ্ধতা, বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে বিধিবদ্ধতা রাকরণ, ভ্রমণের স্বাধীনতা, সংগঠনের অধিকার, চিনত্মা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক্ স্বাধীনতা; পেশা, ধর্ম পালন ও সমপত্তি ভোগের অধিকার, গৃহ ও যোগাযোগের রণ, মৌলিক অধিকার বাসত্মবায়নের অধিকার_ এ সবই আমাদের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করে। সকল অধিকার বিশ্বজনীন মানবাধিকার সনদে এবং আন্তর্জাতিক দু'টি অঙ্গীকারনামায় সনি্নবেশিত। উপরন্তু মানবিক মর্যাদা ও মানবসত্তার মর্যাদা আমাদের সংবিধানেই শুধু স্থান লাভ করেছে। কারণ এ অধিকার কিভাবে স্বেচ্ছাচার, স্বৈরাচার ও শক্তিধরদের কাছে নিষ্পেষিত হয় বংশপরম্পরায়, তার সাক্ষী বাংলার মানুষ। স্বেচ্ছাচারী শাসকদের অত্যাচার ও দুঃশাসনের শিকার হয়েছে বাংলার নিরীহ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী। প্রতিটি মানুষ ও তাদের পরিবার বংশপরম্পরায় শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায় ও অত্যাচারের শিকার।
বাংলাদেশের বীর যোদ্ধাদের লড়াই ছিল জঘন্য গণহত্যার বিরুদ্ধে মানুষের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার। তাই বাংলাদেশের সকল মানুষই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার বীর যোদ্ধা। সেই গৌরবোজ্জ্বল বীরত্বের ঐতিহ্য নিয়ে বাঙালী তাই এগিয়ে চলেছে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা ও প্রতিটি মানুষ ও মানবসত্তার মর্যাদা নিশ্চিত করার ল্যে। স্বাধীনতার চেতনাবোধ আর স্বাধীন সত্তার গৌরবমণ্ডিত অধিকারের উচচারণ 'প্রজাতন্ত্রের সকল মতার মালিক জনগণ।' বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে এক রক্তয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে বাঙালী জাতি তার স্বাধীন সত্তা প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু 'প্রজাতন্ত্রের সকল মতার মালিক জনগণ'_ এ উপলব্ধি আজও বাস্তবায়িত হয়নি। সংবিধানের কর্তৃত্ব ও প্রাধান্য অণ্ন রাখার পবিত্র অঙ্গীকার বার বার ব্যর্থ হয়েছে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা, জাতীয় চার নেতাকে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে নৃশংসভাবে হত্যা বাঙালী জাতির ললাটে কলঙ্ক লেপন করেছে। এই কলঙ্কের সাথে যোগ হয়েছে একটার পর একটা ব্যর্থতা। সংবিধানে স্বাধীনতার প্রথম স্বারে জাতির পিতা উচ্চারণ করেছিলেন 'জনগণ সকল মতার মালিক' এবং "যে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির নিশ্চয়তা বিধান হবে আইনের আশ্রয়লাভের মাধ্যমে।" অথচ ৭১-এর গণহত্যার বিচার আজও অনুষ্ঠিত হয়নি। স্বাধীনতার প্রাণ-পিতাকে হত্যা করা হলো। তাঁর জীবন ও দেহের নিরাপত্তা ঘাতকরা ছিনিয়ে নিল। সেই জঘন্য অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নানাভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল প্রায় দীর্ঘ চার যুগ। বিচার হয়নি আরও অনেক হত্যা ও অপরাধের। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে কেউ বন্দীশালায়, কেউ পুলিশ হেফাজতে, কেউবা সভা বা মিছিলে, নিজের গৃহে বা শিক্ষাঙ্গনে। রাজনৈতিক ও সন্ত্রাসী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। হয়েছে ধর্মের নামে অধর্ম, হত্যা, বোমাবাজি, নরহত্যা, গণহত্যা, মৌলবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম। এমন অজস্র হত্যা, ধর্ষণের বিচার এখনও হয়নি। অনুসন্ধান বা তদন্ত থামিয়ে দেয়া হয়েছে অথবা ধামাচাপা পড়েছে নানাভাবে। এইভাবে অতীতে রাজনীতিকে অপরাধ আর সন্ত্রাসের সাথে যোগসূত্র সৃষ্টি করে সমাজকে ধ্বংসসীমায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আইনকে করা হয়েছিল নীরব দর্শক। আর জনগণের মৌলিক অধিকার ছিল বন্দী। আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার, জীবন এবং দেহের নিরাপত্তা_ এসব থেকে জাতির প্রাণ-পিতা ও তাঁর পরিবারকে যেমন বঞ্চিত করা হয়, জনগণও তেমনি একই ধারাবাহিকতায় আইনের শাসন থেকে বঞ্চিত। প্রাক্তন মন্ত্রী এসএএমএস কিবরিয়া গ্রেনেড হামলার শিকার হন। তারই প্রতিবাদে ২১ আগস্ট জনসভা। ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলার ল্য ছিল বঙ্গবন্ধু-তনয়া, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব। অলৌকিকভাবে শেখ হাসিনা প্রাণে রা পেলেন। কিন্তু আইভি রহমানসহ ২২ নেতাকর্মী নিহত ও শতাধিক নেতাকর্মী আহত। তার সঠিক তদন্ত করতে দেয়া হয়নি। তদন্তের নামে আসল আসামীদের আড়াল করা হয়েছে। আইন প্রক্রিয়ায় এ সীমাবদ্ধতা বা অমতা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আইনের শাসনের এমন অসহায় পরাজয় জনগণ মেনে নেয়নি। তাই বিপুল ভোটে বিজয়ী সরকারের কাছে বাংলার মানুষের সাংবিধানিক প্রত্যাশা আর এই সরকারের সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতির আনত্মরিক বাস্তবায়ন পন্থা ও উপযুক্ত কৌশল রচনা সময়ের সবচেয়ে জরুরী দাবি। এ ছাড়াও রয়েছে সংবিধানের স্খলন। পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মূলনীতির পরিবর্তন, রাষ্ট্রীয় ধর্ম সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি, অর্পিত ও শত্রু সম্পত্তি আইনকে অব্যাহত রাখার মাধ্যমে নাগরিকদের অধিকারের বৈষম্য সৃষ্টি, অবৈধ মতা দখল ও অসাংবিধানিক সকল ক্রিয়া-কর্ম ও পরিবর্তনকে বৈধতা দান_ এ সবই ঐরূপ স্খলনের উদাহরণ। সংবিধান রা করার অঙ্গীকার করে যাঁরা শপথ নিয়েছিলেন, তাঁদের স্খলন আর সেই সাথে সংবিধানকে রা করতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ব্যর্থতা এক ধরনের হতাশায় রূপ নিয়েছিল। এই অন্ধকারের অমানিশা থেকে বেরিয়ে এসে সংবিধানের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার দিন বদলের যে আহ্বান, সে আহ্বানে সাড়া দিয়েছে এদেশের জনগণ। ছিনিয়ে এনেছে নিরঙ্কুশ বিজয়। তাই বিজয় সংহত করে জনগণের সাংবিধানিক প্রত্যাশার বাস্তবায়ন সময়ের জরুরী দাবি।
বর্তমান সংসদে যে প্রাণচাঞ্চল্য ও কমিটি প্রথার মাধ্যমে জবাবদিহির যে জায়গাটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে তা জনমনে আশার সঞ্চার করে। পাশাপাশি তাদের দূরদৃষ্টি এবং নীতি নির্ধারণে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি জনগণ প্রত্যাশা করে সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বাস্তব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বর্তমান সংসদ। স্থানীয় সরকারকে সাংসদদের প্রতিপ বিবেচনায় না করে সংবিধান অনুযায়ী জনগণের মতার মূল বাহন হিসাবে সংসদ ও স্থানীয় সরকার একে অপরের পরিপূরক হিসাবে কাজ করবে। এটাই দায়িত্বশীল আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সক্রিয় অংশীদারিত্বের গণতন্ত্র ১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবেন_ এটাই জনগণের সাংবিধানিক প্রত্যাশা ও দেশবাসীর অঙ্গীকার।
সংবিধান রচনার ৩৮ বছর পর আজ পর্যন্ত সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় একটি নিরপে প্রশাসন গড়ে ওঠেনি। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদে সংসদে যে আইন প্রণয়ন করার কথা ছিল তা আজ পর্যন্ত করা হয়নি। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রণীত রুল ও রেগুলেশনের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের চাকরি সংক্রান্ত নীতিমালা এখনও চালু রয়েছে। অতীতে সংসদ এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোন আইন প্রণয়ন করেনি। সংবিধানে ন্যায়পাল সৃষ্টির বিধানও কার্যকর করা হয়নি। সর্বোচ্চ বিচারালয়ে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে গড়িমসি বা গাফিলতি এবং প্রধান বিচারপতির সাথে উপযুক্ত পরামর্শ ছাড়া বিচারক নিয়োগ_ অতীতে সবই ছিল সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতির বিরম্নদ্ধে। বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিচারকদের আইন ও সংবিধান, ন্যায়বিচার, মৌলিক অধিকারের বিষয়ে কতটুকু আনুগত্য তা নিরূপণ করার মাপকাঠি অনুপস্থিত। বিচারক হবার যোগ্যতার মাপকাঠি নিরূপণে এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনামূলক আইন করা হয়নি। সংবিধানের প্রতি আনুগত্য বিভিন্ন সময় হতাশায় পর্যবসিত হয়েছে তাদের দেয়া রায়েও। সংসদকে কেন্দ্র করে জনগণের যে প্রত্যাশা, অতীতে তার একটিও পূরণ হয়নি। সংসদকে কার্যকর করার জন্য যে নূ্যনতম সহনশীলতার প্রয়োজন এবং যে সমঝোতাপূর্ণ পরিবেশ অপরিহার্য তা ছিল চরমভাবে অনুপস্থিত। যার ফলে একটি অবাধ ও নিরপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রস্তুতি সংসদে মীমাংসা না হয়ে সমস্যাটি উপচে পড়েছিল রাজপথে-জনপদে। শত শত লোক প্রাণ দিল; দিনের পর দিন হরতাল-অবরোধ-আন্দোলনে জনগণকে আবার রাস্তায় নেমে এসে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছিল। নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম আর দ্রোহের সংস্রবে জনগণের মহান বিজয় সূচিত হয়েছিল। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল নিরপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। জনগণের সার্বভৌমত্ব এবং মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার চেতনায় উদ্বুদ্ধ জাতি মুক্ত চিন্তা-চেতনা ও বিবেকের স্বাধীনতার অপার স্রোতধারায় অংশ নিয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। মানবাধিকার সংগ্রামের প্রজ্বলত শিখাকে জনগণ আবারও তুলে দিল জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে। নির্বাচনে জনগণের বিপুল অংশগ্রহণ আবারও প্রমাণ করেছে গণতন্ত্র কার্যকরকরণে জনগণের অপরিসীম আগ্রহ। জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মহান ব্রত নির্বাচিত সরকার ও বিরোধী দলের ওপর সমান দায়ে ন্যস্ত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ আবারও স্বাধীনতা ও মুক্তি আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের সংগ্রামে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস পেয়েছে। কার্যকর সংসদ, সরকারের জবাবদিহিতা, আইনের শাসন, প্রশাসনের নিরপেতা, মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় উন্নয়নে পারস্পরিক শঙ্কামুক্ত সহযোগিতা_ এ সবই আজ বীর বাঙালী জাতির বহু দিনের প্রতীতি প্রত্যাশা। জাতির প্রত্যাশা ও অঙ্গীকারের দ্যোতনায় দৃপ্তমান জাতীয় নেতৃবৃন্দকে রাজনীতির প্রচলিত সীমাবদ্ধতাকে জয় করে ও জনপ্রতিনিধিরা সংবিধান, গণতন্ত্রকে উর্ধে তুলে ধরবেন_ এটাই মানুষের সাংবিধানিক প্রত্যাশা এবং গণতন্ত্রের চাহিদা।
জনগণের অর্জিত সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব জনগণ কখনও বিসর্জন হতে দেয়নি। পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানবহির্ভূত যে পরিবর্তন আনা হয়েছিল; হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে পঞ্চম সংশোধনীর ভিত্তিমূলের বিলুপ্তি ঘটেছে। একই সূত্রের ওপর ভিত্তি করে সপ্তম ও অষ্টম সংশোধনীর প্রয়োজনেরও বিলুপ্তি সাধন সম্ভব। তাই আমাদের মূল সংশোধনীতে ফেরার জন্য মাননীয় বিচারপতি খায়রুল হকের যুক্তি ও সূত্রগুলোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন। তাঁর রায়ের সারমর্মগুলো নিচে তুলে ধরছি। এগুলো সাংবিধানিক সার্বভৌমত্বের মূল সূত্র হিসাবে ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা দেবে। এ সাংবিধানিক মূল্যবোধকে পুনঃস্থাপন করতে যুক্তি হিসাবে এগুলো অতুলনীয় :
১। বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং এ দেশ শাসিত হবে আইনানুগ সরকারের মাধ্যমে।
২। বাংলাদেশের সংবিধানই হবে দেশের সর্বোচ্চ আইন। এটা জনগণের ইচ্ছারই প্রতিফলন। সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সকল আইন বাতিল এবং অসত্মিত্বহীন বলে পরিগণিত হবে।
৩। আইনসভা, নির্বাহী এবং বিচার বিভাগ প্রজাতন্ত্রের তিনটি মূল ভিত্তি হিসাবে পরিগণিত হবে। আইনসভা আইন প্রণয়ন করবে, নির্বাহী বিভাগ শাসনকার্য পরিচালনা করবে এবং বিচার বিভাগ সাংবিধানিক নীতিসমূহ বাস্তবায়ন করবে।
৪। প্রজাতন্ত্রের সকল কার্যক্রম সংবিধানের অধীনে পরিচালিত হবে।
৫। জরম্নরী অবস্থা একমাত্র রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবনের আসন্ন বিপদের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করতে পারবেন।
৬। কোন ব্যক্তি কর্তৃক (তার সামাজিক মর্যাদা নির্বিশেষে) নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত সকল কার্যক্রম দেশদ্রোহিতা বলে গণ্য হবে।
৭। ঘোষণাপত্র শুধু প্রচলিত আইন অথবা সংবিধানের অধীন প্রণীত হবে; কোন নতুন আইন অপরাধ অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে প্রণীত হবে না।
৮। বাংলাদেশে মার্শাল ল বলতে কোন আইন নেই। যে কোন ব্যক্তির সামরিক শাসনের ঘোষণা রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসাবে গণ্য হবে এবং অধীনস্থতার অজুহাতে এরূপ কাজে সহায়তার অপরাধ থেকে নিষ্কৃতি দেবে না।
৯। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর সকালে খন্দকার মোস্তাক আহম্মেদ কর্তৃক সামরিক শাসনের অধীনে মতা গ্রহণ ছিল অবৈধ, আইনগত কর্তৃত্ব ও এখতিয়ারবহির্ভূত।
১০। ৬ই নভেম্বর ১৯৭৫ এর বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম এর রাষ্ট্রপতি হিসাবে মনোনয়ন, রাষ্ট্রপতি হিসাবে মতা গ্রহণ এবং প্রধান সামরিক শাসক হিসাবে ৮ই নভেম্বর ১৯৭৫ সালে তার নিযুক্তি ছিল সংবিধান বহির্ভূত।
১১। ২৯শে নভেম্বর ১৯৭৬ সালে ৩য় ঘোষনার মাধ্যমে প্রধান সামরিক শাসকের পদ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নিকট হস্তান্তর ছিল সংবিধানের আওতা বহির্ভূত।
১২। বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম কর্তৃক রাষ্ট্রপতি হিসাবে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের মনোনয়ন এবং পরবর্তী কালে জিয়াউর রহমান কর্তৃক রাষ্ট্রপতি হিসাবে মতা গ্রহন ছিল অবৈধ এবং এখতিয়ার বহির্ভূত।
১৩। ১৯৭৭ সালের রেফারেন্ডাম অর্ডার (মার্শাল ল অর্ডার নং-১, ১৯৭৭) এর প্রকৃতি সংবিধানে অপরিচিত এবং এটি প্রনীত হয়েছে একমাত্র একজন ব্যক্তির সুবিধার্থে। তিনি হলেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান।
১৪। ১৫ইং আগষ্ট ১৯৭৫ থেকে ৯ইং এপ্রিল ১৯৭৯ পর্যন্ত প্রনীত সকল প্রকেমেশন, মার্শাল ল অর্ডার এবং রেগুলেশন সমূহ ছিল বে-আইনী এবং বাতিলযোগ্য।
১৫। অনুচ্ছেদ-৩ এ ছিল বে-আইনী। কারন, সকল প্রকেমেশন সমূহে বৈধতা দান, এম এল আর এবং এম এল ও সমূহের বৈধতা দানের জন্য প্রনীত হয়। সেগুলোও তাই বে-আইনী।
১৬। আইন সভা শুধু সংবিধানের অধীন যে কোন আইন প্রনয়ন করতে পারবে (পঞ্চম সংশোধনী আইন-১৯৭৯ আল্ট্রাভায়রার্স)।
১৭। ৪র্থ সিডিউলে অনুচ্ছেদ-৩ এবং ১৮ এর সংযোজন সংবিধানে ১৫০ অনুচ্ছেদের এখতিয়ার বহির্ভূত।
১৮। দেশের কোনও সংকট সংবিধান অবজ্ঞার ক্ষেত্রে অজুহাত হিসাবে গন্য হবে না।
১৯। Violation of the Constitution is a grave legal wrong and remains so for all time to come. It cannot be legitimized and shall remain illegitimate for ever, however, on the necessity of the State only, such legal wrongs can be condoned in certain circumstances, invoking the maxims, Id quod Alias Non Est Licitum, Necessitas Licitum Facit, salus populi est suprema lex and salus republicae est suprema lex.
২০। Past and closed transaction হিসাবে মা করা যাবে এজন্য নয় যে এগুলো আইনসিদ্ধ ছিল বরং প্রজতন্ত্রের স্বার্থে বিভ্রানত্মি এড়ানোর জন্য। যদিও এগুলো সব সময়ের জন্যই বে-আইনী এবং বাতিল।
২১। Condonations of provisions were made, among others, in respect of provisions, deleting the various provisions of the Fourth Amendment but no condonation of the provisions was allowed in respect of omission of any provision enshrined in the original Constitution. The Preamble, Article 6, 8, 9, 10, 12, 25, 38 and 142 remain as it was in the original Constitution. No condonation is allowed in respect of change of any of these provisions of the Constitution. Besides, Article 95, as amended by the Second Proclamation Order No. IV of 1976, is delcared valid and retained. (ক্রমশ)
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2010-04-14&ni=14793
১০ম ভাগ অনুযায়ী সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সংবিধান সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। একাদশ ভাগে প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তি। তার উপর নির্বাহী কর্তৃত্ব ও ব্যবস্থাপনা, চুক্তি ও দলিল, আন্তর্জাতিক চুক্তি বিষয়ে ও বাংলাদেশের পক্ষে বা বিপক্ষে মামলা, সাংবিধানিক পদধারীদের পারিশ্রমিক, পদের শপথ, প্রচলিত আইনের হেফাজত, ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী রহিতকরণ ও সংবিধানের ব্যবহৃত কিছু কিছু শব্দ, সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা।
আমাদের সংবিধান মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। একটি ভাগ প্রজাতন্ত্রের ল্য, উদ্দেশ্য, প্রতিশ্রুতি ও বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ জনগণের অধিকার, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, নাগরিকের মৌলিক অধিকার; এবং অন্য ভাগে এগুলো বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও সংসদ এবং রাষ্ট্রের অন্যান্য সাংবিধানিক কর্মকর্তা ও কর্ম বিভাগ কে কী ভূমিকা রাখবে তার বর্ণনা রয়েছে। স্থানীয় সরকারের কাঠামোতে সর্বস্তরে প্রশাসন জনগণের প্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে বলবত থাকবে। এগুলো বাস্তবায়ন ও মতার ভারসাম্য রার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির মূল নক্সা রচনা করা হয়েছে সংবিধানে। ঐসব উদ্দেশ্য সাধনে আইন প্রণয়নের মতা ও দিক নির্দেশনাও বিদ্যমান।
আমাদের সংবিধানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করবার জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে জনগণের সম্পদ ও মালিকানা এবং উৎপাদন ও বণ্টন প্রণালীসমূহ নিয়ন্ত্রণে জনগণের অধিকার; কৃষক, শ্রমিক ও জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে শোষণ থেকে মুক্তির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। মানুষের মৌলিক প্রয়োজন নিশ্চিত করবার জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণ নিশ্চিত করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও বেকারত্ব থেকে মুক্তি; ব্যাধিগ্রস্ত, পঙ্গু, বিধবা, এতিম, বৃদ্ধ ও ভাগ্যাহতদের জন্য রাষ্ট্রের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ রয়েছে। সেই সাথে গ্রামের উন্নয়ন, নগর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ, কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুত ব্যবস্থার সৃষ্টি; শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল পরিবর্তনের ব্যবস্থা, গণমুখী সর্বজনীন শিক্ষা, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, সময়ের সাথে শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করা এবং শিক্ষা ও প্রশিণের মাধ্যমে প্রকৃত দেশপ্রেমিক নাগরিক সৃষ্টি, নিরতা দূরীকরণ, পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য এবং নৈতিকতার উন্নয়ন, সকলের জন্য সুযোগের সমতা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবিচার থেকে মুক্তি, সম্পদের সুষম বণ্টন, কর্মের অধিকার ও কর্মকে কর্তব্যে পরিণত করা, নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ, নাগরিক ও সরকারী কর্মচারীদের কর্তব্য বিধান, জাতীয় সংস্কৃতির বিকাশ, ইতিহাস ও ঐতিহাসিক বস্তু এবং স্থানসমূহের বিকৃতি ও তিসাধন রোধ, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার উন্নয়ন_ সবই আমাদের সংবিধানের প্রত্যয় ও প্রতিশ্রুতি।
সেই সাথে প্রতিটি নাগরিকের জন্য মৌলিক অধিকার যথা, আইনের দৃষ্টিতে সমতা, নারী ও পুরম্নষের সমান অধিকার; ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণের কারণে বৈষম্য দূরীকরণ, সরকারী নিয়োগলাভে সুযোগের সমতা, আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার, জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার রা, গ্রেফতার ও অবৈধ আটক সমপর্কে অধিকারের রাকবচ, জবরদস্তি শ্রম ও নিবর্তনমূলক আটকের ব্যাপারে বিধিবদ্ধতা, বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে বিধিবদ্ধতা রাকরণ, ভ্রমণের স্বাধীনতা, সংগঠনের অধিকার, চিনত্মা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক্ স্বাধীনতা; পেশা, ধর্ম পালন ও সমপত্তি ভোগের অধিকার, গৃহ ও যোগাযোগের রণ, মৌলিক অধিকার বাসত্মবায়নের অধিকার_ এ সবই আমাদের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করে। সকল অধিকার বিশ্বজনীন মানবাধিকার সনদে এবং আন্তর্জাতিক দু'টি অঙ্গীকারনামায় সনি্নবেশিত। উপরন্তু মানবিক মর্যাদা ও মানবসত্তার মর্যাদা আমাদের সংবিধানেই শুধু স্থান লাভ করেছে। কারণ এ অধিকার কিভাবে স্বেচ্ছাচার, স্বৈরাচার ও শক্তিধরদের কাছে নিষ্পেষিত হয় বংশপরম্পরায়, তার সাক্ষী বাংলার মানুষ। স্বেচ্ছাচারী শাসকদের অত্যাচার ও দুঃশাসনের শিকার হয়েছে বাংলার নিরীহ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী। প্রতিটি মানুষ ও তাদের পরিবার বংশপরম্পরায় শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায় ও অত্যাচারের শিকার।
বাংলাদেশের বীর যোদ্ধাদের লড়াই ছিল জঘন্য গণহত্যার বিরুদ্ধে মানুষের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার। তাই বাংলাদেশের সকল মানুষই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার বীর যোদ্ধা। সেই গৌরবোজ্জ্বল বীরত্বের ঐতিহ্য নিয়ে বাঙালী তাই এগিয়ে চলেছে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা ও প্রতিটি মানুষ ও মানবসত্তার মর্যাদা নিশ্চিত করার ল্যে। স্বাধীনতার চেতনাবোধ আর স্বাধীন সত্তার গৌরবমণ্ডিত অধিকারের উচচারণ 'প্রজাতন্ত্রের সকল মতার মালিক জনগণ।' বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে এক রক্তয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে বাঙালী জাতি তার স্বাধীন সত্তা প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু 'প্রজাতন্ত্রের সকল মতার মালিক জনগণ'_ এ উপলব্ধি আজও বাস্তবায়িত হয়নি। সংবিধানের কর্তৃত্ব ও প্রাধান্য অণ্ন রাখার পবিত্র অঙ্গীকার বার বার ব্যর্থ হয়েছে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা, জাতীয় চার নেতাকে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে নৃশংসভাবে হত্যা বাঙালী জাতির ললাটে কলঙ্ক লেপন করেছে। এই কলঙ্কের সাথে যোগ হয়েছে একটার পর একটা ব্যর্থতা। সংবিধানে স্বাধীনতার প্রথম স্বারে জাতির পিতা উচ্চারণ করেছিলেন 'জনগণ সকল মতার মালিক' এবং "যে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির নিশ্চয়তা বিধান হবে আইনের আশ্রয়লাভের মাধ্যমে।" অথচ ৭১-এর গণহত্যার বিচার আজও অনুষ্ঠিত হয়নি। স্বাধীনতার প্রাণ-পিতাকে হত্যা করা হলো। তাঁর জীবন ও দেহের নিরাপত্তা ঘাতকরা ছিনিয়ে নিল। সেই জঘন্য অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নানাভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল প্রায় দীর্ঘ চার যুগ। বিচার হয়নি আরও অনেক হত্যা ও অপরাধের। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে কেউ বন্দীশালায়, কেউ পুলিশ হেফাজতে, কেউবা সভা বা মিছিলে, নিজের গৃহে বা শিক্ষাঙ্গনে। রাজনৈতিক ও সন্ত্রাসী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। হয়েছে ধর্মের নামে অধর্ম, হত্যা, বোমাবাজি, নরহত্যা, গণহত্যা, মৌলবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম। এমন অজস্র হত্যা, ধর্ষণের বিচার এখনও হয়নি। অনুসন্ধান বা তদন্ত থামিয়ে দেয়া হয়েছে অথবা ধামাচাপা পড়েছে নানাভাবে। এইভাবে অতীতে রাজনীতিকে অপরাধ আর সন্ত্রাসের সাথে যোগসূত্র সৃষ্টি করে সমাজকে ধ্বংসসীমায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আইনকে করা হয়েছিল নীরব দর্শক। আর জনগণের মৌলিক অধিকার ছিল বন্দী। আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার, জীবন এবং দেহের নিরাপত্তা_ এসব থেকে জাতির প্রাণ-পিতা ও তাঁর পরিবারকে যেমন বঞ্চিত করা হয়, জনগণও তেমনি একই ধারাবাহিকতায় আইনের শাসন থেকে বঞ্চিত। প্রাক্তন মন্ত্রী এসএএমএস কিবরিয়া গ্রেনেড হামলার শিকার হন। তারই প্রতিবাদে ২১ আগস্ট জনসভা। ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলার ল্য ছিল বঙ্গবন্ধু-তনয়া, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব। অলৌকিকভাবে শেখ হাসিনা প্রাণে রা পেলেন। কিন্তু আইভি রহমানসহ ২২ নেতাকর্মী নিহত ও শতাধিক নেতাকর্মী আহত। তার সঠিক তদন্ত করতে দেয়া হয়নি। তদন্তের নামে আসল আসামীদের আড়াল করা হয়েছে। আইন প্রক্রিয়ায় এ সীমাবদ্ধতা বা অমতা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আইনের শাসনের এমন অসহায় পরাজয় জনগণ মেনে নেয়নি। তাই বিপুল ভোটে বিজয়ী সরকারের কাছে বাংলার মানুষের সাংবিধানিক প্রত্যাশা আর এই সরকারের সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতির আনত্মরিক বাস্তবায়ন পন্থা ও উপযুক্ত কৌশল রচনা সময়ের সবচেয়ে জরুরী দাবি। এ ছাড়াও রয়েছে সংবিধানের স্খলন। পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মূলনীতির পরিবর্তন, রাষ্ট্রীয় ধর্ম সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি, অর্পিত ও শত্রু সম্পত্তি আইনকে অব্যাহত রাখার মাধ্যমে নাগরিকদের অধিকারের বৈষম্য সৃষ্টি, অবৈধ মতা দখল ও অসাংবিধানিক সকল ক্রিয়া-কর্ম ও পরিবর্তনকে বৈধতা দান_ এ সবই ঐরূপ স্খলনের উদাহরণ। সংবিধান রা করার অঙ্গীকার করে যাঁরা শপথ নিয়েছিলেন, তাঁদের স্খলন আর সেই সাথে সংবিধানকে রা করতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ব্যর্থতা এক ধরনের হতাশায় রূপ নিয়েছিল। এই অন্ধকারের অমানিশা থেকে বেরিয়ে এসে সংবিধানের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার দিন বদলের যে আহ্বান, সে আহ্বানে সাড়া দিয়েছে এদেশের জনগণ। ছিনিয়ে এনেছে নিরঙ্কুশ বিজয়। তাই বিজয় সংহত করে জনগণের সাংবিধানিক প্রত্যাশার বাস্তবায়ন সময়ের জরুরী দাবি।
বর্তমান সংসদে যে প্রাণচাঞ্চল্য ও কমিটি প্রথার মাধ্যমে জবাবদিহির যে জায়গাটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে তা জনমনে আশার সঞ্চার করে। পাশাপাশি তাদের দূরদৃষ্টি এবং নীতি নির্ধারণে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি জনগণ প্রত্যাশা করে সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বাস্তব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বর্তমান সংসদ। স্থানীয় সরকারকে সাংসদদের প্রতিপ বিবেচনায় না করে সংবিধান অনুযায়ী জনগণের মতার মূল বাহন হিসাবে সংসদ ও স্থানীয় সরকার একে অপরের পরিপূরক হিসাবে কাজ করবে। এটাই দায়িত্বশীল আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সক্রিয় অংশীদারিত্বের গণতন্ত্র ১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবেন_ এটাই জনগণের সাংবিধানিক প্রত্যাশা ও দেশবাসীর অঙ্গীকার।
সংবিধান রচনার ৩৮ বছর পর আজ পর্যন্ত সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় একটি নিরপে প্রশাসন গড়ে ওঠেনি। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদে সংসদে যে আইন প্রণয়ন করার কথা ছিল তা আজ পর্যন্ত করা হয়নি। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রণীত রুল ও রেগুলেশনের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের চাকরি সংক্রান্ত নীতিমালা এখনও চালু রয়েছে। অতীতে সংসদ এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোন আইন প্রণয়ন করেনি। সংবিধানে ন্যায়পাল সৃষ্টির বিধানও কার্যকর করা হয়নি। সর্বোচ্চ বিচারালয়ে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে গড়িমসি বা গাফিলতি এবং প্রধান বিচারপতির সাথে উপযুক্ত পরামর্শ ছাড়া বিচারক নিয়োগ_ অতীতে সবই ছিল সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতির বিরম্নদ্ধে। বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিচারকদের আইন ও সংবিধান, ন্যায়বিচার, মৌলিক অধিকারের বিষয়ে কতটুকু আনুগত্য তা নিরূপণ করার মাপকাঠি অনুপস্থিত। বিচারক হবার যোগ্যতার মাপকাঠি নিরূপণে এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনামূলক আইন করা হয়নি। সংবিধানের প্রতি আনুগত্য বিভিন্ন সময় হতাশায় পর্যবসিত হয়েছে তাদের দেয়া রায়েও। সংসদকে কেন্দ্র করে জনগণের যে প্রত্যাশা, অতীতে তার একটিও পূরণ হয়নি। সংসদকে কার্যকর করার জন্য যে নূ্যনতম সহনশীলতার প্রয়োজন এবং যে সমঝোতাপূর্ণ পরিবেশ অপরিহার্য তা ছিল চরমভাবে অনুপস্থিত। যার ফলে একটি অবাধ ও নিরপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রস্তুতি সংসদে মীমাংসা না হয়ে সমস্যাটি উপচে পড়েছিল রাজপথে-জনপদে। শত শত লোক প্রাণ দিল; দিনের পর দিন হরতাল-অবরোধ-আন্দোলনে জনগণকে আবার রাস্তায় নেমে এসে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছিল। নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম আর দ্রোহের সংস্রবে জনগণের মহান বিজয় সূচিত হয়েছিল। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল নিরপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। জনগণের সার্বভৌমত্ব এবং মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার চেতনায় উদ্বুদ্ধ জাতি মুক্ত চিন্তা-চেতনা ও বিবেকের স্বাধীনতার অপার স্রোতধারায় অংশ নিয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। মানবাধিকার সংগ্রামের প্রজ্বলত শিখাকে জনগণ আবারও তুলে দিল জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে। নির্বাচনে জনগণের বিপুল অংশগ্রহণ আবারও প্রমাণ করেছে গণতন্ত্র কার্যকরকরণে জনগণের অপরিসীম আগ্রহ। জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মহান ব্রত নির্বাচিত সরকার ও বিরোধী দলের ওপর সমান দায়ে ন্যস্ত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ আবারও স্বাধীনতা ও মুক্তি আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের সংগ্রামে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস পেয়েছে। কার্যকর সংসদ, সরকারের জবাবদিহিতা, আইনের শাসন, প্রশাসনের নিরপেতা, মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় উন্নয়নে পারস্পরিক শঙ্কামুক্ত সহযোগিতা_ এ সবই আজ বীর বাঙালী জাতির বহু দিনের প্রতীতি প্রত্যাশা। জাতির প্রত্যাশা ও অঙ্গীকারের দ্যোতনায় দৃপ্তমান জাতীয় নেতৃবৃন্দকে রাজনীতির প্রচলিত সীমাবদ্ধতাকে জয় করে ও জনপ্রতিনিধিরা সংবিধান, গণতন্ত্রকে উর্ধে তুলে ধরবেন_ এটাই মানুষের সাংবিধানিক প্রত্যাশা এবং গণতন্ত্রের চাহিদা।
জনগণের অর্জিত সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব জনগণ কখনও বিসর্জন হতে দেয়নি। পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানবহির্ভূত যে পরিবর্তন আনা হয়েছিল; হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে পঞ্চম সংশোধনীর ভিত্তিমূলের বিলুপ্তি ঘটেছে। একই সূত্রের ওপর ভিত্তি করে সপ্তম ও অষ্টম সংশোধনীর প্রয়োজনেরও বিলুপ্তি সাধন সম্ভব। তাই আমাদের মূল সংশোধনীতে ফেরার জন্য মাননীয় বিচারপতি খায়রুল হকের যুক্তি ও সূত্রগুলোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন। তাঁর রায়ের সারমর্মগুলো নিচে তুলে ধরছি। এগুলো সাংবিধানিক সার্বভৌমত্বের মূল সূত্র হিসাবে ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা দেবে। এ সাংবিধানিক মূল্যবোধকে পুনঃস্থাপন করতে যুক্তি হিসাবে এগুলো অতুলনীয় :
১। বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং এ দেশ শাসিত হবে আইনানুগ সরকারের মাধ্যমে।
২। বাংলাদেশের সংবিধানই হবে দেশের সর্বোচ্চ আইন। এটা জনগণের ইচ্ছারই প্রতিফলন। সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সকল আইন বাতিল এবং অসত্মিত্বহীন বলে পরিগণিত হবে।
৩। আইনসভা, নির্বাহী এবং বিচার বিভাগ প্রজাতন্ত্রের তিনটি মূল ভিত্তি হিসাবে পরিগণিত হবে। আইনসভা আইন প্রণয়ন করবে, নির্বাহী বিভাগ শাসনকার্য পরিচালনা করবে এবং বিচার বিভাগ সাংবিধানিক নীতিসমূহ বাস্তবায়ন করবে।
৪। প্রজাতন্ত্রের সকল কার্যক্রম সংবিধানের অধীনে পরিচালিত হবে।
৫। জরম্নরী অবস্থা একমাত্র রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবনের আসন্ন বিপদের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করতে পারবেন।
৬। কোন ব্যক্তি কর্তৃক (তার সামাজিক মর্যাদা নির্বিশেষে) নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত সকল কার্যক্রম দেশদ্রোহিতা বলে গণ্য হবে।
৭। ঘোষণাপত্র শুধু প্রচলিত আইন অথবা সংবিধানের অধীন প্রণীত হবে; কোন নতুন আইন অপরাধ অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে প্রণীত হবে না।
৮। বাংলাদেশে মার্শাল ল বলতে কোন আইন নেই। যে কোন ব্যক্তির সামরিক শাসনের ঘোষণা রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসাবে গণ্য হবে এবং অধীনস্থতার অজুহাতে এরূপ কাজে সহায়তার অপরাধ থেকে নিষ্কৃতি দেবে না।
৯। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর সকালে খন্দকার মোস্তাক আহম্মেদ কর্তৃক সামরিক শাসনের অধীনে মতা গ্রহণ ছিল অবৈধ, আইনগত কর্তৃত্ব ও এখতিয়ারবহির্ভূত।
১০। ৬ই নভেম্বর ১৯৭৫ এর বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম এর রাষ্ট্রপতি হিসাবে মনোনয়ন, রাষ্ট্রপতি হিসাবে মতা গ্রহণ এবং প্রধান সামরিক শাসক হিসাবে ৮ই নভেম্বর ১৯৭৫ সালে তার নিযুক্তি ছিল সংবিধান বহির্ভূত।
১১। ২৯শে নভেম্বর ১৯৭৬ সালে ৩য় ঘোষনার মাধ্যমে প্রধান সামরিক শাসকের পদ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নিকট হস্তান্তর ছিল সংবিধানের আওতা বহির্ভূত।
১২। বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম কর্তৃক রাষ্ট্রপতি হিসাবে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের মনোনয়ন এবং পরবর্তী কালে জিয়াউর রহমান কর্তৃক রাষ্ট্রপতি হিসাবে মতা গ্রহন ছিল অবৈধ এবং এখতিয়ার বহির্ভূত।
১৩। ১৯৭৭ সালের রেফারেন্ডাম অর্ডার (মার্শাল ল অর্ডার নং-১, ১৯৭৭) এর প্রকৃতি সংবিধানে অপরিচিত এবং এটি প্রনীত হয়েছে একমাত্র একজন ব্যক্তির সুবিধার্থে। তিনি হলেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান।
১৪। ১৫ইং আগষ্ট ১৯৭৫ থেকে ৯ইং এপ্রিল ১৯৭৯ পর্যন্ত প্রনীত সকল প্রকেমেশন, মার্শাল ল অর্ডার এবং রেগুলেশন সমূহ ছিল বে-আইনী এবং বাতিলযোগ্য।
১৫। অনুচ্ছেদ-৩ এ ছিল বে-আইনী। কারন, সকল প্রকেমেশন সমূহে বৈধতা দান, এম এল আর এবং এম এল ও সমূহের বৈধতা দানের জন্য প্রনীত হয়। সেগুলোও তাই বে-আইনী।
১৬। আইন সভা শুধু সংবিধানের অধীন যে কোন আইন প্রনয়ন করতে পারবে (পঞ্চম সংশোধনী আইন-১৯৭৯ আল্ট্রাভায়রার্স)।
১৭। ৪র্থ সিডিউলে অনুচ্ছেদ-৩ এবং ১৮ এর সংযোজন সংবিধানে ১৫০ অনুচ্ছেদের এখতিয়ার বহির্ভূত।
১৮। দেশের কোনও সংকট সংবিধান অবজ্ঞার ক্ষেত্রে অজুহাত হিসাবে গন্য হবে না।
১৯। Violation of the Constitution is a grave legal wrong and remains so for all time to come. It cannot be legitimized and shall remain illegitimate for ever, however, on the necessity of the State only, such legal wrongs can be condoned in certain circumstances, invoking the maxims, Id quod Alias Non Est Licitum, Necessitas Licitum Facit, salus populi est suprema lex and salus republicae est suprema lex.
২০। Past and closed transaction হিসাবে মা করা যাবে এজন্য নয় যে এগুলো আইনসিদ্ধ ছিল বরং প্রজতন্ত্রের স্বার্থে বিভ্রানত্মি এড়ানোর জন্য। যদিও এগুলো সব সময়ের জন্যই বে-আইনী এবং বাতিল।
২১। Condonations of provisions were made, among others, in respect of provisions, deleting the various provisions of the Fourth Amendment but no condonation of the provisions was allowed in respect of omission of any provision enshrined in the original Constitution. The Preamble, Article 6, 8, 9, 10, 12, 25, 38 and 142 remain as it was in the original Constitution. No condonation is allowed in respect of change of any of these provisions of the Constitution. Besides, Article 95, as amended by the Second Proclamation Order No. IV of 1976, is delcared valid and retained. (ক্রমশ)
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2010-04-14&ni=14793
No comments:
Post a Comment