Monday, April 5, 2010

এ দেশের মানুষকে আলবদরের খুনীরা হত্যা করে চোখ তুলে বসত্মা বোঝাই করে রেখেছিল।

মুজাহিদই একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল নির্দেশদাতা
সেই রাজাকার থেকে যুদ্ধাপরাধী
মামুন-অর-রশিদ ॥
ঢাকা শহরের বদরবাহিনী প্রধান মুজাহিদই বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনক্সা বাস্তবায়ন করেন। অথচ আজ জোর গলায় তিনি বলছেন, 'একাত্তরে কি করেছি মনে নেই। পাস্ট ইজ পাস্ট।' নবম জাতীয় নির্বাচনের আগে বলেছেন, 'দেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই।' খুনী মুজাহিদই ১৪ ডিসেম্বর বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে বাংলার স্বাধীনতাকে পঙ্গু ও ব্যর্থ করে দিতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের খতম করিয়েছে। শুধু সেখানেই নয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও টিকে থাকতে পারবে না_ জামায়াতের এ বক্তব্য প্রমাণের জন্যই বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় গিয়ে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র প্রমাণের জন্য জঙ্গীবাদসহ নানান উপসর্গ তৈরি করেছে মুজাহিদরা। একাত্তরে ফকিরাপুলে মুজাহিদের আশ্রয়স্থল ফিরোজ মিয়ার বাড়িতে হতো রাজাকারদের সশস্ত্র ট্রেনিং, হয়েছে খুনের পরিকল্পনা ও পরিকল্পিত গণহত্যা বাস্তবায়ন। মুজাহিদের বিরুদ্ধে ফকিরাপুল-আরামবাগ এলাকায় নারী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। নরহত্যায় পারদর্শী ঢাকা শহরের বদরবাহিনীর প্রধান মুজাহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের পর গা-ঢাকা দেয়। '৭৫-এর আগস্ট ট্রাজেডির পর ১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়ার হাত ধরে রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং স্বভাবসুলভ বৈশিষ্ট্যেই ১৯৭৮ সালে আলিয়া মাদ্রাসায় তাঁর প্রতি পক্ষ গ্রুপের নেতাকে নিজের গ্রুপ নিয়ে গিয়ে হত্যা করায়।
মুজাহিদের জবানীতেও স্বাধীনতার কঠোর বিরোধিতার তথ্য॥ জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ১৯৭১ সালের ১৭ অক্টোবর রংপুরে পাকিসত্মান ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সভায় আলবদর বাহিনী গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। তিনি তখন জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিসত্মান শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সভায় মুজাহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, ইসলামবিরোধী শক্তিদের প্রতিহত করতে হবে। তিনি যুবকদের সংগঠিত করে আলবদর বাহিনীতে যোগ দেয়ার ওপর গুরম্নত্ব দেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পূর্ব পাকিসত্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখনকার পরিস্থিতি নিয়ে ইয়াহিয়া সরকারকে মাসে দু'বার গোপন প্রতিবেদন পাঠাত। 'সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচু্যয়েশন ইন ইস্ট পাকিসত্মান' নামে অক্টোবরের দ্বিতীয় ভাগের প্রতিবেদনে (১৩ নবেম্বর ১৯৭১ স্বরাষ্ট্র সচিব স্বারিত) মুজাহিদের এ নির্দেশের কথা উলেস্নখ করা আছে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার পর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, 'বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী ছিল না, বর্তমানেও নেই। এটা বানোয়াট ও কল্পনাপ্রসূত।' তাহলে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের অবস্থান কী ছিল_ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সাংবাদিকদের তা মূল্যায়ন করতে বলেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক এএসএম সামছুল আরেফিনের লেখা মুক্তিযুদ্ধের প্রোপটে ব্যক্তির অবস্থান বইয়ের ৪২৮ পৃষ্ঠায় মুজাহিদকে পূর্ব পাকিসত্মান আলবদর বাহিনীর কেন্দ্রীয় সংগঠক বলে উলেস্নখ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিসত্মান সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য এদেশীয় দোসরদের নিয়ে গঠিত হয় শানত্মি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী। জামায়াতের নেতাকর্মীরাই মূলত এসব বাহিনীর সদস্য ছিলেন। আলবদর ও আলশামস বাহিনী ছিল জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীদের নিয়ে গঠিত। মুজাহিদ ইসলামী ছাত্রসংঘেরই নেতৃত্ব দিয়েছেন তখন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিসত্মান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল নিয়াজি তাঁর লেখা 'দি বিট্রেয়ার অব ইস্ট পাকিসত্মান' বইয়ের ২৩৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, 'আলবদর বাহিনীর সদস্যদের বিশেষায়িত কাজের জন্য প্রশিণ দেয়া হয়েছিল। আলশামস বাহিনীকে বিভিন্ন সেতু পাহারা দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। যেখানেই এ দুই বাহিনী দায়িত্ব পেয়েছে, সেখানেই তারা ভাল কাজ করেছে। যেখানে ডানপন্থী দলের শক্তি বেশি ছিল, সেখানে এরা আরও ভাল কাজ করেছে।
১৯৭২ সালের ১৯ জানুয়ারি দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে আলবদর বাহিনীর বিশেষায়িত কাজের নমুনা পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে লেখা হয়, হানাদার পাকবাহিনীর সহযোগী আলবদরের সদস্যরা পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের পর যখন পালিয়ে গেল তখন তাদের হেডকোয়ার্টারে পাওয়া গেল এক বসত্মা চোখ। এ দেশের মানুষকে আলবদরের খুনীরা হত্যা করে চোখ তুলে বসত্মা বোঝাই করে রেখেছিল।
পত্রিকার পাতায় '৭১-এর বিভিন্ন সময়ে মুজাহিদের বক্তব্য মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিজামী ও মুজাহিদ সারাদেশ সফর করে পাকি সেনাবাহিনীকে সহায়তা দিতে দলের কর্মী-সমর্থকদের আহ্বান জানান। তাঁদের নানা বক্তব্য সে সময় জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামে গুরম্নত্বসহকারে ছাপা হয়েছে।
'৭১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফরিদপুরের একই সমাবেশে তিনি (মুজাহিদ) বলেন, ঘৃণ্য শত্রম্ন ভারত দখল করার প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের আসাম দখল করতে হবে। এজন্য আপনারা সশস্ত্র প্রস্তুতি গ্রহণ করম্নন।
একই সালের ২৫ অক্টোবর এক বিবৃতিতে মুজাহিদ বলেছিলন, আমরা আজ ইসলামবিরোধী শক্তির এক কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। .....আমরা জাতির স্বার্থে এবং এ দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মোৎসর্গের শপথ গ্রহণ করব।
৭ নবেম্বর বদর দিবস পালন উপল েবায়তুল মোকারমের সামনে ঢাকা শহর ইসলামী ছাত্রসংঘের উদ্যোগে এক জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়। জমায়েতে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ছাত্রসংঘের প থেকে চার দফা ঘোষণা করেন। ঘোষণায় বলা হয়, ...... এ ঘোষণা বাসত্মবায়িত করার জন্য শির উঁচু করে, বুকে কোরান নিয়ে মর্দে মুজাহিদের মতো এগিয়ে চলুন। প্রয়োজন হলে নয়াদিলস্নী পর্যনত্ম এগিয়ে গিয়ে আমরা বৃহত্তর পাকিসত্মানের পতাকা উত্তোলন করব।
৪ ডিসেম্বর এক যুক্ত বিবৃতিতে মুজাহিদ বলেছিলেন, ..... পাকিসত্মানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের গতকালের বেতার ভাষণকে অভিনন্দন জানিয়ে আমরাও ঘোষণা করছি যে এ দেশের ছাত্র-জনতা '৬৫ সালের মতন এবারও ইস্পাতকঠিন শপথ নিয়ে পাকিসত্মান বাহিনীর সাথে সহযোগিতা করে যাবে। উলেস্নখ্য, পাকিসত্মান সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসজুড়ে এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছিল।
১৫ অক্টোবর ১৯৭১ সালে দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মুজাহিদের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়, রাজাকার, আলবদর ও অন্য স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর তরম্নণরা জাতিকে বিশ্বাসঘাতক ও ভারতীয় চরদের হাত থেকে রা করতে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু সমপ্রতি ভুট্টো (জুলফিকার আলী ভুট্টো), কাওসার নিয়াজি, মুফতি মামুদ ও আসগর খানের মতো রাজনৈতিক নেতারা এসব বাহিনী সম্পর্কে নানা আপত্তিকর মনত্মব্য করছেন। তিনি (মুজাহিদ) সরকারের কাছে একশ্রেণীর নেতার এ ধরনের কর্মকা- বন্ধের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
মুজাহিদ ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে সাংগঠনিক সফরে বের হন। ২৬ অক্টোবর দৈনিক সংগ্রামে ছাপা হওয়া তাঁর বক্তব্যে মুজাহিদ পাকিসত্মানের ছাত্র-জনতাকে দুষ্কৃতকারী (মুক্তিযোদ্ধা) খতম করার দৃঢ়অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ২৭ অক্টোবর মুজাহিদ রংপুর জেলা ছাত্রসংঘের কর্মী সম্মেলনে সবাইকে জিহাদী মনোভাব নিয়ে পাকিসত্মানী বাহিনীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান (দৈনিক সংগ্রাম, ২৮ অক্টোবর, '৭১)।
মুজাহিদ ছিলেন ঢাকা শহর আলবদর বাহিনীর প্রধান আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ একাত্তরে ছিলেন ছাত্রসংঘের নেতা এবং ঢাকা শহর আলবদর বাহিনীর প্রধান। কাজেই বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞে তাঁর ভূমিকা সহজেই বোঝা যায়। জামায়াত নেতারা আজকাল বলার চেষ্টা করেন যে, তাঁরা রাজাকার আলবদর বাহিনীতে ছিলেন না। অথচ আলী আহসান মুজাহিদ ১৫ অক্টোবর '৭১-এ প্রদত্ত এক বিবৃতিতে স্পষ্ট বলেছেন যে, তারা রাজাকার, আলবদর ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্য হিসেবে জাতির সেবা করছে। নিরপরাধ বাঙালীদের হত্যা করে, অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে জাতির কি সেবা তাঁরা করেছেন সেটা আজ আর কারও অজানা নেই। আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরম্নদ্ধে ছিলেন তাই নয়, তখন তিনি (এবং নিশ্চয়ই তাঁর মুরবি্বরা) খোয়াব দেখতেন দিলস্নী পর্যনত্ম পাকিসত্মানের বিজয় পতাকা ওড়ানোর। এ খোয়াব পূরণ না হলেও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ এবং তাঁর দলবল বাঙালীদের ওপর যে নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে তার কিছু ...... আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিসত্মান ইসলামী ছাত্রসংঘের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা এবং আলবদর বাহিনীর ঢাকা মহানগরীর প্রধান ছিলেন। আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ '৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দলীয় আদর্শ অনুযায়ী পাকবাহিনীর গণহত্যা, লুটপাট ও নারী নির্যাতনে সহযোগিতা করেছেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন আলবদর বাহিনী বিজয়ের আগমুহূর্তে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে এদেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের।
২৫ অক্টোবর '৭১ তারিখে এক বিবৃতিতে আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ১৭ রমজান বদর দিবস পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা আজ ইসলামবিরোধী শক্তির চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এ পবিত্র দিবসে আমরা জাতির স্বার্থে এবং এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মোৎসর্গের শপথ গ্রহণ করব। (সূত্র_ একাত্তরের ঘাতক দালালরা কে কোথায়)। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ফকিরাপুল, নয়াপল্টন এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে থাকতেন। তার মধ্যে একটি বাড়ি হলো শেখ ভিলা, ৩/৫, নয়াপল্টন। তবে আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের প্রধান আড্ডা ছিল ফকিরাপুল গরম পানির গলিতে ফিরোজ মিয়ার ১৮১ নং (বর্তমান ২৫৮ নং) বাড়িটি। একাত্তরে মতিঝিল ফকিরাপুর এলাকার মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার (বর্তমানে বিএনপি নেতা) আবদুস সালাম, মুক্তিযোদ্ধা ও কলামিস্ট মাহবুব কামালের সা্য অনুযায়ী, ফিরোজ মিয়া ছিলেন এ এলাকার রাজাকার কমান্ডার। তার বাড়িটি শুধু ফকিরাপুল এলাকার নয়, পুরো ঢাকা শহরের রাজাকারদের অন্যতম ঘাঁটি ছিল। এখানেই অনুষ্ঠিত হতো রাজাকারদের বিভিন্ন সভা, সশস্ত্র ট্রেনিং ইত্যাদি। এখান থেকেই পরিচালিত হতো রাজাকারদের বিভিন্ন অপারেশন, রাজাকার রিক্রুটমেন্ট। এখানে এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সপরে শক্তির লোকদের ধরে এনে নির্যাতন চালানো হতো। ফিরোজ মিয়া গংয়ের নীতিনির্ধারক ছিলেন আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ। কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে তাঁর নির্দেশেই পরিচালিত হতো ফকিরাপুল এলাকার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যাবতীয় তৎপরতা। জিএম গাউস (বর্তমানে মৃত) সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিলেন, '৭০-এর মাঝামাঝি সময় থেকেই আমরা ফকিরাপুল এলাকার ভাড়াটিয়া আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদকে চিনতাম জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রসংঘের লোক হিসেবে। তিনি এলাকায় দলের সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতেন। কেন্দ্রীয় সমাবেশে এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে যেতেন। এলাকার ছেলেদের ছাত্রসংঘে যোগদানের ব্যাপারে প্ররোচিত করতেন। '৭১-এর মার্চের পর মুজাহিদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ফকিরাপুলে রাজাকার বাহিনী সংগঠিত হয়। যার নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ফিরোজ মিয়াকে (ফিরোজ মেম্বর)। অবশ্য কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে মুজাহিদের অপতৎপরতা শুধু ফকিরাপুল এলাকায় নয়, বিসত্মৃত ছিল পুরো ঢাকা শহরে।
ফিরোজ মিয়ার বাড়িটিকে ষড়যন্ত্রের ঘাঁটি হিসেবে অভিহিত করে কলামিস্ট মাহবুব কামাল সংবাদ মাধ্যমকে বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, এ বাড়িতে বসেই আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও ফিরোজ মেম্বার বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের ঘুঁটি চালতেন। মুজাহিদের নির্দেশে ফিরোজ মিয়া গং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের বাড়িতে তলস্নাশি চালাত। তৎকালীন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোবেদ আলীর বাড়িতে বেশ কয়েকবার তলস্নাশি চালানো হয়। আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে নাজু নামে এক যুবক নিখোঁজ হয়ে যায়। ধারণা করা হয়, মুজাহিদের নির্দেশে ফিরোজ মিয়া গংই তাকে হত্যা করেছে। মুজাহিদ ফকিরাপুল এলাকায় ৩শ' সদস্যের একটি রাজাকার পস্নাটুন গড়ে তোলেন। ফকিরাপুল এলাকার পুরনো বাসিন্দাদের সা্য থেকে জানা যায়, ফিরোজ মিয়া গং যুদ্ধের সময় ফকিরাপুল ও আরামবাগ এলাকার শত শত বাঙালীকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। নির্যাতন চালিয়েছে এলাকার মেয়েদের ওপর। '৭১-এ ছাত্রসংঘ নেতা ও বদরবাহিনী প্রাধন মুজাহিদের অপতৎপরতার ছবিও প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকায়। '৭১-এর ১১ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদে প্রকাশিত একটি ছবির ক্যাপশন ছিল_ গতকাল গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরম্নদ্ধে হুঁশিয়ারি প্রদান করে আলবদর আয়োজিত পথসভায় বক্তৃতা করেছেন আলবদর প্রধান জনাব মুজাহিদ।
স্বাধীনতার পর ক'বছর এ নরঘাতকরা অন্য সহযোগীদের সঙ্গে পালিয়ে বেড়ালেও '৭৫ আগস্ট ট্রাজেডির পর জেনারেল জিয়ার হাত ধরে ১৯৭৭ সাল থেকে আবার স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হন। আবিভর্ূত হয়েই পুরনো অভ্যাস ও আদর্শ অনুযায়ী হত্যার রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সেই থেকে আজও অপ্রতিরোধ্য এ নরঘাতকরা। ১৯৮৮ সালের ১১ নবেম্বর অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে নরঘাতক মুজাহিদের কর্মকা-ের কিছু বিবরণ পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৮ সালে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় ভিন্নমতাবলম্বী ছাত্রনেতা মাওলানা আবদুস সোবহানকে শিবিরকর্মীরা কোরান পাঠরত অবস্থায় নির্মমভাবে হত্যা করে। বিশেষ সূত্রে জানা যায়, এ হত্যা অভিযানের নেতৃত্ব দেয় ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঘাতক আলবদর বাহিনী প্রধান আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ।

THE DAILY JANAKANTHA
04 04 2010

http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2010-04-04&ni=13702
---------------------
"জয় বাংলা বাংলার জয়"

No comments: