Sunday, April 18, 2010

মুজিবনগর দিবস ছুটি ঘোষণা করুন

মুজিবনগর দিবস ছুটি ঘোষণা করুন
মুহম্মদ শফিকুর রহমান
১৭ এপ্রিল, আমাদের জাতীয় জীবনের অন্যতম স্মরণীয় বরণীয় দিন- 'মুজিবনগর দিবস।' ১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননকে মুজিবনগর নাম দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম বিপ্লবী সরকার শপথ গ্রহণ করেন। বাঙালী জাতির অবিসংবাদী নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে সে সরকার গঠিত হয়। প্রধান সেনাপতি ছিলেন জেনারেল (অব) এমএজি ওসমানী। পরবর্তীতে সে সরকার 'মুজিবনগর সরকার' নামে পরিচিতি লাভ করে।
এই মুজিবনগর সরকারের পরিচালনায় মাত্র ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে দখলদার পাকি সামরিক জান্তাকে পরাজিত ও আত্মসমর্পণে বাধ্য করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। কিন্তু দিবসটি না সরকারী ছুটির দিন না রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যাপিত হয়।
এবার সরকার মুজিবনগর দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনগণ এতে আনন্দিত, কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের স্বার্থে এতসব বড় কাজ করছেন যে, তাঁকে ধন্যবাদ দিলে ছোট করা হবে বরং তাঁর জন্য দোয়া করছি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হবার (১৯৯৬-২০০১) পর মুজিবনগরকে জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে গড়ে তোলার ল্যে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে হাত দেন। কাজ অনেকাংশ বাস্তবায়িতও হয়। কিন্তু পরবর্তী রাজাকারবেষ্টিত খালেদা-নিজামী সরকার (২০০১-২০০৬) মতায় আসার পর কাজ আর এগোয়নি। যেমন করে তারা বাংলাদেশকে পরাজিত পাকিস্তানী ধ্যান-ধারণায় ফিরিয়ে নেয়ার নীল-নকশা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের স্মারক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্মাণাধীন স্বাধীনতা স্তম্ভের এবং সেগুনবাগিচায় নির্মাণাধীন আন্তর্জাতিক ভাষা ইনস্টিটিউটের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। এই ২টি প্রতিষ্ঠানের কাজও শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হবার পর পরই শুরু করেন। স্বাধীনতা স্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে অংশ নেন আফ্রিকার কালো মানুষের অবিসংবাদী নেতা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের প্রিয় মুখ নেলসন ম্যান্ডেলা, ফিলিস্তিনী জনগণের স্বদেশভূমি শত্রুমুক্ত করার লড়াইয়ের অবিসংবাদী নেতা ও মুসলিম বিশ্বসহ তাবত মুক্তিকামী মানুষের প্রিয় মুখ ইয়াসির আরাফাত এবং কামাল আতাতুর্কের তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী সুলেমান ডেমিরেল।
১৭ এপ্রিলের পেছনে রয়েছে ১০ এপ্রিল। এ দিন জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গণপরিষদের বৈঠক ডেকে স্বাধীনতার ঘোষণা (The Proclamation of independence) অনুমোদন এবং স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম বিপ্লবী সরকার গঠন করেন। ১৭ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণা আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ করা হয় এবং বিপ্লবী সরকার শপথ গ্রহণ করে। বৈদ্যনাথতলার নাম দেয়া হয় মুজিবনগর। এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, ১৭৫৭ সালের পলাশীর আম্রকাননে সিরাজ উদদ্দৌলার পতনের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল সেই পলাশীর আম্রকাননেরই মাত্র ২৩ মাইল অদূরে মুজিবনগরের আরেক আম্রকাননে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলার স্বাধীনতার সেই অস্তমিত সূর্য আবার উদিত হলো। ইতিহাস এভাবেই প্রতিশোধ নেয়।
কিন্তু এ মুজিবনগরকে স্বমহিমায় গড়ে উঠতে দেয়া হয়নি। বিএনপি-জামায়াত জোট যতবার ক্ষমতায় এসেছে মুজিবনগরের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কাজ এগোয়নি। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকার মুজিবনগরে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে এবং আধুনিকভাবে গড়ে তোলার কাজ হাতে নেয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে আর কাজ এগোতে দেননি। তবে এরশাদও জিয়ার মতোই সামরিক স্বৈরাচার হলেও স্মৃতিস্তম্ভটি নতুন করে বৃহদাকারে এবং দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যকলায় পুনর্নির্মাণ করেন।
মুজিবনগর দিবস দলমতের উর্ধে একটি জাতীয় দিবস। একদল ক্ষমতায় এলে উদযাপন করবে আরেক দল অবহেলা করবে তা তো হতে পারে না। এটা হীনমানসিকতা, সঙ্কীর্ণ রাজনীতি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মুজিবনগরকে স্বমহিমায় গড়ে তোলার জন্য যে সব প্রকল্প হাতে নেন তার মধ্যে রয়েছে স্কুল-কলেজ, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জাদুঘর, রেস্টহাউজ, পাঠাগার, সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র, অডিটরিয়াম প্রভৃতির সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স কাজ অনেকখানি এগিয়ে ছিল। ২০০১ সালের প্রশাসনিক কারচুপি, ভোটার তালিকা জালিয়াতি ও ভোটার নির্যাতনের নির্বাচনে হারিয়ে দেয়া না হলে মুজিবনগর সত্যিকার অর্থেই দর্শনীয় স্থানে পরিণত হতো।
একটা কথা ভুললে চলবে না যে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে এই মুজিবনগর ও সরকার বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের নামে ও নির্দেশিত পথে বিপ্লবী সরকারের পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। বাঙালীর হাজার বছরের স্বপ্নসাধ নিজস্ব জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অথচ আজকের প্রজন্মের বেশিরভাগই জানে না এ সম্পর্কে। বাংলাদেশের একজন স্কুল বা কলেজ ছাত্র বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বঙ্গসন্তান মুজিবনগর সম্পর্কে জানেন না, এটা কি মেনে নেয়া যায়? এর জন্য দায়ী কে? কারা? দায়ী বিকৃত রাজনীতি, হীনম্মন্যতা।
আর এই বিকৃত রাজনীতির আবর্ত থেকে মুজিবনগরকে বের করে আনার জন্যই একে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনায় আনতে হবে। সেই জন্যই দরকার সরকারী ছুটি ঘোষণা, সে জন্যই দরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসূচী নিয়ে উদযাপন।
আমাদের জাতীয় জীবনে ১৭ এপ্রিলের মতো আরও যে সব দিন রয়েছে সেগুলোর মধ্যে যেমন :
৭ মার্চ- ১৯৭১-এর এই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স) বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করার যুগান্তকারী দিকনির্দেশনা প্রদানের পাশাপাশি ঘোষণা করেন 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।'
২৬ মার্চ- ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালীর ওপর অতর্কিত হামলা চালালে এবং রাত দেড়টায় গ্রেফতার হবার পূর্ব মুহূর্তে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি ছিল : : This may be my last message, from today Bangladesh is independent, I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved.
বাংলা করলে দাঁড়াবে : "এটাই সম্ভবত আপনাদের কাছে (বাঙালি জাতি) আমার শেষ মেসেজ বা ঘোষণা, এই মুহূর্ত থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার আকুল আবেদন আপনারা যে যেখানে আছেন এবং যার কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়ে দখলদার পাকিস্তানী সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করতে হবে। এবং যতক্ষণ না দখলদার বাহিনীর সর্বশেষ সৈন্যটি বাংলার মাটি থেকে বিতাড়িত হচ্ছে এবং আমাদের চূড়ান্ত বিজয় সূচিত হচ্ছে, যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।"
বঙ্গবন্ধু ইংরেজীতে ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার মাধ্যমে তিনি সরাসরি বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছাতে চেয়েছেন এবং সফল হয়েছেন। যেমন ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ 'দি টাইমস' পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত খবরের শিরোনাম ছিল : : Heavy fight as Sheikh Mujib declares E. Pakistan independent. অনুরূপভাবে একই দিন 'দি গার্ডিয়ান' পত্রিকা লিখেছিল Shortly before his arrest, Mujib had issued a proclamation of his people which inform them you are citizens of a free county.
১৬ ডিসেম্বর- বিজয়ের দিন। অর্থাৎ ৯ মাসের রক্তয়ী মুক্তিযুদ্ধে তথাকথিত পাকিস্তানী সামরিক জান্তার ৯৩ হাজার সদস্যকে পরাজিত ও আত্মসমর্পণে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে এই বিজয় সূচিত হয়। এই মুক্তিযুদ্ধে আমাদের ৩০ লাখ শহীদ ও পৌনে তিন লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন, জীবন উৎসর্গ করেছেন। পাশাপাশি ১৭ হাজার ভারতীয় সেনা সদস্য শহীদ হন। ১৭ মার্চ- বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। ১৯২০ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন যাঁর জন্ম না হলে আজকের আলোচিত বিষয় ১৭ এপ্রিলেরও জন্ম হতো না। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে ৭ মার্চ, ২৬ মার্চ হতো না, মুজিবনগর বিপস্নবী সরকার হতো না, ১৬ ডিসেম্বর, ১০ জানুয়ারি (বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস) হতো না, আমরা স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হতে পারতাম না।
মূলত ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে পঠিত স্বাধীনতার ঘোষণা বা Proclamation of independence-এর ভিত্তিতেই মুজিবনগর বিপ্লবী সরকার গঠিত হয় এবং সেই সরকারের পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এবং এমনকি বিজয়ের পর আমাদের যে সংবিধান ১৯৭৩ সালে প্রণীত হয়েছে তাও এই ঘোষণার ভিত্তিতেই। এই ঘোষণার মাধ্যমে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণাও বৈদ্যনাথতলার পার্লামেন্ট অনুমোদন (Ratify) করে। যেমন :
যেহেতু বাংলাদেশে ৭ ডিসেম্বর হতে ১৭ জানুয়ারি ১৯৭১ পর্যন্ত সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, এবং
" যেহেতু এই নির্বাচনে জনগণ ১৬৯ জনের মধ্যে ১৬৭ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেন যারা আওয়ামী লীগের সদস্য, (এ ছাড়া প্রাদেশিক পরিষদে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে) এবং
"যেহেতু জেনারেল ইয়াহিয়া খান একটি সংবিধান প্রণয়নের নিমিত্তে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকে মিলিত হওয়ার জন্য ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ আমন্ত্রণ জানান, এবং
" যেহেতু সে মত আহূত সভাটি অযৌক্তিক ও বেআইনীভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয় এবং
" .......... বাংলাদেশের জনগণের সহিত আলোচনায় রত থাকিয়াও পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ একটি অনৈতিক ও বিশ্বাসহন্তা যুদ্ধ ঘোষণা করে, এবং
"যেহেতু এহেন বিশ্বাসহন্তা আচরণের ঘটনায় ও পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি জনগণের অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের বৈধ অধিকার পূরণের জন্য ঢাকায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার একটি যথোচিত ঘোষণা দেন ................. এবং

" .......... যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ তাহাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী ঐকান্তিকতা দ্বারা বাংলাদেশের এলাকায় কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন,

"জনগণ কর্তৃক অর্পিত নির্দেশের প্রতি, যাঁদের নির্দেশই চূড়ান্ত, সশস্ত্র অনুগত থাকায় আমরা বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ আমাদের নিজেদেরকে লইয়া যথাযথভাবে সংবিধান রচনার গণপরিষদ গঠন করিলাম, এবং
".................. ঘোষণা দিতেছি এবং প্রতিষ্ঠা করিতেছি যে, বাংলাদেশ হইবে সার্বভৌম জনগণের প্রজাতন্ত্র এবং এতদ্বারা ইতোপূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাকে নিশ্চিত করিতেছি এবং
"................সংবিধান যে সময় পর্যনত্ম প্রণীত না হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি থাকিবেন ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রজাতন্ত্রের উপ-রাষ্ট্রপতি থাকিবেন, এবং
" রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের সকল সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হইবেন,
"............ আমরা আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি, স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্র ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হইতে কার্যকর হইয়াছে বলিয়া বিবেচিত হইবে।"
স্বাধীনতার ঘোষণার একটি বড় অংশ এখানে উদ্ধৃত করলাম। এ জন্য যে, সাম্প্রতিক প্রজন্মের অনেকেই Proclamation of independence বা স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে জানেন না। এমনকি বৈদ্যনাথতলার নামটি কেন মুজিবনগর হলো, এই মুজিবনগর কি কি কাজ করল, কারা কারা গুরু দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তার কিছুই অনেকে জানেন না।
জনগণকে অবহিত করা বা নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্য পাঠ্য বইতে মুজিবনগর দিবস সন্নিবেশিত করা দরকার অথবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। মুজিবনগরকে যদি দর্শনীয় করে তোলা যায় তাহলে বিকৃত ইতিহাসের বিরুদ্ধে তা নিজেই জবাব হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে।
মনে পড়ে ১৯৯১ সালে বেশ কয়েক মাস জার্মানিতে ছিলাম। তার আগেই বার্লিন ওয়াল ভেঙ্গে পূর্ব ইউরোপের পতন ঘটেছে। সে সময় পোজডমে দেখেছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর তিন নেতার কার্যালয়টি সংরণ করা হয়েছে। এই তিন নেতা হলেন রাশিয়ার স্ট্যালিন, ইংল্যান্ডের চার্চিল, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রুজভেল্ট। যুদ্ধশেষে তারা যে চুক্তি করেন এবং যে ঘরে বসে আলোচনা করেন- যেমন একটি গোলটেবিলের তিন পাশে তিন নেতা স্ব-স্ব দেশের জাতীয় পতাকা সামনে উড্ডীন রেখে কথা বলেছেন, এইসব তখনও ঠিক সেভাবেই আছে। তাদের ব্যবহৃত কলমসহ অন্যান্য জিনিসও সংরণ করা।
ঢাকা-১৫/০৪/২০১০
লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2010-04-17&ni=15007

No comments: