Tuesday, April 20, 2010

৮০ টাকায় মোটা চাল খেতে হতো

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে ৮০ টাকায় মোটা চাল খেতে হতো
ভাঙ্গা স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি থেকে কিভাবে এত টাকা এল_ প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসতে ব্যর্থ হয়েই বিরোধী দল সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের এত ভোটপ্রাপ্তি বিরোধী দলের পছন্দ হয়নি। তাই সরকারকে আর সময় দেয়া হবে না বলে হুমকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ৰমতায় না এলে মোটা চাল ৮০ টাকায় খেতে হতো। বিএনপি এলে চালের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি হতো।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারী বাসভবন গণবভনে সোমবার সকালে কৃষক লীগ নেতারা সাক্ষাত করতে এলে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, জনগণ তাঁদের বিশাল ম্যান্ডেট দিয়েছে। জনগণের দেয়া এই বিশাল দায়িত্বের প্রতি লৰ্য রেখে দেশের অর্থনীতিকে উন্নত করতে হবে। বাংলাদেশ আর গরিব থাকবে না, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে- এই বিশ্বাস তাঁর আছে। বর্তমান সরকারের রূপকল্প অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে সোনার বাংলা গড়ার লৰ্যে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে জোরদার করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কৃষক লীগের সভাপতি ড. মীর্জা এমএ জলিল ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মোল্লার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এ সময় কৃষক লীগের নেতারা ছাড়াও খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান এবং কৃষকদের পণ্য বাজারজাতকরণের স্বার্থে কৃষক লীগের সারাদেশের নেতা ও কর্মীদের তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় সমবায় গঠনের আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আগে সকালে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলৰে কৃষক লীগ নেতারা বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
বিএনপির অপশাসন ও দুর্নীতির কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবার ও তাঁর দলের সমর্থকরা ৰমতায় থেকে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, দুর্নীতি করে হাজার হাজার টাকা জমিয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এত স্বল্প সময়ের মধ্যে তাঁরা কীভাবে টাকার পাহাড় জমিয়েছে? ভাঙ্গা স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি থেকে কীভাবে এত টাকা এলো? তিনি বলেন, বিএনপি প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নিজেসহ তাঁর পরিবার কোটি কোটি কালো টাকা সাদা করেছে। তাঁরা কীভাবে এত অর্থ আয় করেছে, জনগণ তা জানেন।
বিডিআর বিদ্রোহের বিচার সঠিক পথে এগুচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই বিদ্রোহের সময় বিরোধীদলীয় নেত্রী কালো কাঁচে ঘেরা গাড়িতে করে কোথায় গিয়েছিলেন? পরের তিনদিন কেন তাঁর খোঁজ ছিল না- এসব বিষয়ের গভীরে যেতে হবে। খুঁজে দেখতে হবে, তিনি কেন এবং কোথায় পালিয়ে গিয়েছিলেন? তিনি আসলে কী চেয়েছিলেন?
বর্তমান সরকারকে কৃষকবান্ধব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ডিজেলে ভর্তুকি দিচ্ছে। সারের দাম তিন দফা কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। গরিব কৃষক যাতে সেচ পায়, খাদ্য উৎপাদন করতে পারে- সেদিকেই সরকারের আগ্রহ। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সার ও নগদ ভর্তুকি দেয়া ছাড়াও কৃষিউপকরণ কৃষকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। সেচের জন্য গ্রামীণ এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে কৃষকরা গুলি খেয়ে মরে। তাদের নীতিই ছিল দেশকে খাদ্যঘাটতির দেশ বানিয়ে রাখা। চাল-ডাল আমদানি করে পয়সা কামানো। বিএনপি-জামায়াত জোট ৰমতায় এসে ১০ টাকার চাল ৪৫ টাকায় নিয়েছিল। বিরোধীদলীয় নেত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কেন চালের দাম ৪৫ টাকা হবে? এর জবাব বিরোধীদলীয় নেত্রীকেই দিতে হবে।
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কৃষিক্ষেত্রে গবেষণার ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরও কৃষিক্ষেত্রে গবেষণার জন্য ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। দেশের কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় উৎপাদন বৃদ্ধিতে নতুন নতুন গবেষণা ও কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। গ্রামে গ্রামে সমবায়ের মাধ্যমে কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে হবে। তাহলেই কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন চাহিদা মেটাতে খাদ্যশস্য মজুদের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ইতোমধ্যে খাদ্যশস্য মজুদ বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েছে। এ লক্ষে সরকার আরও খাদ্যগুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের কৃষকরা কিছু পায়। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় আসলে কৃষকরা কিছুই পায় না। আওয়ামী লীগের শাসনামলে সারের জন্য কৃষক গুলি খেয়ে মরে না, সার পৌঁছে যায় কৃষকের কাছে, কৃষকদের কৃষি উপকরণ খোঁজার প্রয়োজন হয় না।
বর্তমান বিদ্যুত সঙ্কটের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেচের জন্য সরকারকে গ্রামে প্রতিদিন ১৫শ' মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করতে হচ্ছে। এর ফলে নগরবাসী লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। শীঘ্রই পরিস্থিতির পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৩৯ বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগ মাত্র ১০ বছর ক্ষমতায় থাকলেও এ সময়েই অর্থনীতি, শিৰা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

No comments: