Wednesday, April 14, 2010

নির্দেশদাতা গো.আযম ।। সেই রাজাকার থেকে যুদ্ধাপরাধী

বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল ২০১০, ১৮ চৈত্র ১৪১৬
নির্দেশদাতা গো.আযম ।। সেই রাজাকার থেকে যুদ্ধাপরাধী
মামুন-অর-রশিদ ॥ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারী উদ্যোগে দেশের মানুষের এখন প্রশ্ন, কতজন বিচারের মুখোমুখি হবেন। তদন্ত কমিটি এখনও তালিকা সম্পর্কে কোন ধারণা দেয়নি। বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে ১২/১৩ জন শীর্ষ পর্যায়ের যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। আবার অনেকে বলছেন, কমপক্ষে ২৫ জন শীর্ষ পর্যায়ের যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবে। সম্ভাব্য তালিকার শীর্ষ পর্যায়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত গোলাম আযম। এই পর্বে '৭১ সালে গোলাম আযমের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হবে। আগামীকালের পর্বে গোলাম আযম সম্পর্কে বিস্তারিত প্রকাশিত হবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও গোলাম আযম ইসলামাবাদে 'পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি'র নামে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছিল।
এরপর পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হবে বর্তমানে জামায়াতের আমির '৭১-এ আলবদর বাহিনী প্রধান মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী তথা মইত্যা রাজাকারের কাহিনী, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও '৭১-এ বদর বাহিনীর উপ-প্রধান আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান মীর কাশেম আলী, বদর বাহিনীর কমান্ডার মোঃ ইউনুস, বর্তমানে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও '৭১-এ বদর বাহিনীর জামালপুর জেলার কমান্ডার কামারম্নজ্জামান, ময়মনসিংহ জেলার কমান্ডার আশরাফ হোসাইন, বৃহত্তর ঢাকার কমান্ডার আ স ম রম্নহুল কুদ্দুস, ঢাকার প্রধান কমান্ডার ও বদর বাহিনীর তৎকালীন প্রশিৰক সরকার আব্দুস সালাম, চট্টগ্রাম অঞ্চলের আরেক কমান্ডার আব্দুল জাহের মোহাম্মদ আবু নাসের, রাজশাহী জেলা কমান্ডার আব্দুল হাই ফারম্নকী, ঢাকার অপারেশন গ্রম্নপের উপ-প্রধান মাঈন উদ্দিন, বরিশাল জেলা কমান্ডার সাবেক সচিব আইয়ুব মিয়া, সিলেট শহরের কমান্ডার ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, সিলেট জেলাপ্রধান চৌধুরী ফরিদ উদ্দিন, ঢাকা অঞ্চলের বদর বাহিনীর প্রধান মুহাম্মদ শামসুল হক, এটি এম আজহারম্নল ইসলাম, কাদের মোলস্না, এবি এম খালেক মজুমদার, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মাওলানা আব্দুস সোবহান, প্রকৌশলী আব্দুল জব্বার, মাওলানা মোঃ ইসহাক, এ্যাডভোকেট আনসার আলী, গিয়াস কাদের চৌধুরীসহ অনেকের কাহিনী। অন্যদিকে শীর্ষ পর্যায়ের যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে ফজলুল কাদের চৌধুরী, আব্বাস আলী খান, মাওলানা আব্দুল মান্নান, খান আব্দুস সবুরসহ শীর্ষ পর্যায়ের ১৮ জনের তালিকা রয়েছে যারা মৃতু্যবরণ করেছেন। প্রসঙ্গত, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (মইত্যা রাজাকার), আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কাদের মোলস্না, মাওলানা সোবহান, আজহারম্নল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, সাকা চৌধুরীসহ রাজাকার আলবদর আলশামস ও শানত্মি বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বদানকারীদের '৭১-এর অপকর্ম, গত চার দশক বাংলাদেশে তাদের অসত্মিত্ব অবস্থান, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্র, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সরকারী সিদ্ধানত্মে তাদের পরিবর্তিত গতিবিধি বিসত্মারিত ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হবে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন গো. আযম জামায়াতের আমির ছিলেন। তার নির্দেশেই দেশে রাজাকার আলবদর আলশামস বাহিনী গঠন করা হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে গোলাম আযম পাকিসত্মানের কথিত অখ-তার দোহাই দিতে থাকে। ধর্মের নামে পাকিসত্মানী হত্যা, নির্যাতন, গণধর্ষণ, অগি্নসংযোগ, লুটপাট সবকিছু জায়েজ বলতে থাকে। গোলাম আযম কেবল বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাই করেনি, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশে যখন লাখো বাঙালীর রক্তস্নাত বিজয়ের পতাকা উড়ছে ঠিক তখনও গোলাম আযম ইসলামাবাদে বসে পূর্ব পাকিসত্মান (সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ) পুনরম্নদ্ধার কমিটি গঠন করে। শুধু তাই নয়, পৃথিবীব্যাপী সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের বিরম্নদ্ধে অপপ্রচার চালাতে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেয় সেই অপচেষ্টা অব্যাহত রাখে।
সেই গোলাম আযম যিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন পাক বাহিনীর দোসর হিসেবে রাজাকার আলবদর আলশামস বাহিনী গঠনে নির্দেশনা দিয়েছেন। ধর্মের নামে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষকে রম্নখে দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, গোলাম আযমের নির্দেশেই নিজামী বদর বাহিনী প্রদানের দায়িত্ব পালন করেন।
জামায়াতী প্রচারপত্রে বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ৰমা ঘোষণার ভুল ব্যাখ্যা করে জামায়াত এখন আত্মরৰার চেষ্টা করছে। জামায়াতী প্রচারপত্রে এখনও বিভ্রানত্মি ছড়ানোর অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সময় ৭শ' ৫২ জনের যুদ্ধাপরাধের দায়ে শাসত্মি হয়। '৭৫-এর আগস্ট ট্র্যাজেডির পর জেনারেল জিয়া ঐ বছরের ৩১ ডিসেম্বর কলাবরেটর্স এ্যাক্ট বাতিল করলেও ১৯৭৩ সালের আনত্মর্জাতিক ট্রাইবু্যনাল আইনটি অব্যাহত রয়েছে-যেটি জামায়াত এড়িয়ে চলতে চায়। জেনারেল জিয়া এটি বাতিল করে যেতে পারেননি। পাক বাহিনীর দোসর এই জামায়াতীরা তাদের প্রচারপত্রে পাকবাহিনীর ১শ' ৯৫ যুদ্ধাপরাধীর বিচার চায়। তারা নিজেদের যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথাই অস্বীকার করছে। ৰেত্রবিশেষ নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা দাবি করার মতো ডাহা মিথ্যা বলতেও তাদের মুখ আটকাচ্ছে না।
দেশবাসী শীর্ষ পর্যায়ের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। বর্তমান সরকারের এটি নির্বাচনী অঙ্গীকার। দেশ-বিদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের এত তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, নির্যাতিত, ধর্ষিত, নিহতদের স্বজনদের কাছে এখনও অনেক তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। যাতে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ করাটা খুব কঠিন কাজ হবে না। তাই যুদ্ধাপরাধীরা সর্বোচ্চ দ-ে দ-িত হবে বলে দেশবাসী আশা ব্যক্ত করেন। দেশের একটি চিহ্নিত মহল বাদে সকলের দাবি অনত্মত শীর্ষ পর্যায়ের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক। এতে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বিরম্নদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের রাসত্মাও বন্ধ হবে। দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থেই শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতে হবে। শীর্ষ পর্যায়ের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে আমাদের এটিই নিশ্চিত হবে।
একাত্তরের শীর্ষ পর্যায়ের ঘাতকরা এবার বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লৰ্যে সরকার ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি কোলাবরেটর্স এ্যাক্ট নামে একটি আইন করে। এই আইনে এক লাখের মতো লোক গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে অভিযোগ আনা হয় ৩৭ হাজার ৪শ' ৭১ জনের বিরম্নদ্ধে। কিন্তু সাৰ্য-প্রমাণের অভাবে অভিযুক্তদের ৩৪ হাজার ৬শ' ২৩ জনের বিরম্নদ্ধে মামলা দায়ের সম্ভব হয়নি। ফলে ২ হাজার ৮শ' ৪৮ জনকে বিচারে সোপর্দ করা হয়। বিচারে ৭শ' ৫২ জনের বিরম্নদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। অবশিষ্ট ২ হাজার ৯৬ জন বেকসুর খালাস পায়। বিশেষভাবে উলেস্নখ্য, ১৯৭৩ সালে ১৯ জুলাই বাংলাদেশের পার্লামেন্টে 'ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইবু্যনাল) এ্যাক্ট ১৯৭৩ পাস হয়। ১৯৭৫ সালের আগস্ট ট্র্যাজেডিতে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে শুরম্ন হওয়া হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ধারায় সেনাশাসক জেনারেল জিয়া ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭২ সালে প্রণীত কোলাবরেটর্স এ্যাক্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। জিয়ার এই ঘোষণার পরই বিভিন্ন মেয়াদে সাজাভুক্ত ও অভিযুক্ত ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে এক নির্দেশে মুক্তি দেয় জেনারেল জিয়া। কথিত বহুদলীয় রাজনীতির নামে জেনারেল জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুদ্ধাপরাধী পুনর্প্রবেশের রাসত্মা উন্মুক্ত করে দেন। জেনারেল জিয়া ১৯৭৩ সালে ১৯ জুলাই বাংলাদেশের পার্লামেন্টে 'ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইবু্যনাল) এ্যাক্ট ১৯৭৩ বাতিল করে যেতে পারেননি। ফলে এই আইনেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে।

http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2010-04-01&ni=13300

No comments: