সরে দাঁড়ানোর পথ পেলেন না হাফিজ
হামলার অভিযোগ বিএনপির ॥ আওয়ামী লীগ বলছে আহতরা হাফিজের বাড়িতে কেন
মামুন-অর-রশিদ/হাসিব রহমান, লালমোহন থেকে ॥ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কাঁধে রাইফেল রেখে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছিলেন মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন। ভোলা-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রতিপক্ষ প্রার্থী শাওনের পক্ষে গণজোয়ার দেখে। মুখ রক্ষার চেষ্টা করছেন হাফিজ কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে ভোলায় জোটের সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন শাহজাহানের বাসায় কেন্দ্রীয় নেতা সেলিমা রহমান, আব্দুল্লাহ আল নোমানের উপস্থিতি ও কেন্দ্রীয় নির্দেশনার কারণে বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৪ এপ্রিলের নির্বাচনে তিনি অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, এর আগে গত বুধবার নির্বাচন সাত দিন পেছানোর দাবি এবং এই দাবি না মানলে চেয়ারপার্সনের সঙ্গে মতবিনিময় করে তিনি নির্বাচনে থাকা-না থাকার বিষয় সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানান। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিভিন্ন কেন্দ্রে স্থানীয়দের পরিবর্তে দূরদূরান্ত থেকে আগত দলীয় কর্মীদের এজেন্ড করার কথা জানান। এদিকে আওয়ামী লীগ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, নির্বাচন কেন্দ্রে গোলযোগ সৃষ্টি এবং নির্বাচন ভুল করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের লৰ্যে বহিরাগতদের পোলিং এজেন্ট করতে চান হাফিজ উদ্দিন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় এই পথ খোলা রাখতে চান তিনি বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের। শেষ পর্যন্ত দু'পক্ষের অংশগ্রহণেই নির্বাচন হচ্ছে।
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই হাফিজ উদ্দিন নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের পায়ে পায়ে দোষ খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি প্রতিদিন দলীয় নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে হামলা-মামলার অভিযোগ করেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার এই আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই শ' ছাড়িয়ে তিন শ'তে পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেন। তাঁর বাড়িতে একজন লোক শোয়া ছিল যার শরীরে কোন জখমের চিহ্ন ছিল না। হাফিজ উদ্দিন প্রায় ৪০ মিনিট ধরে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা বলছেন। নির্বাচনী প্রচারের শেষ মুহূর্তে এসে দু'প্রার্থী যেখানে ব্যাপক জনসংযোগে ব্যস্ত থাকার কথা ছিল, কিন্তু দু'পৰই ব্যস্ত ছিল সংবাদ সম্মেলনে। বিকাল সাড়ে তিনটায় শাহবাজ কলেজ মাঠে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে নেতৃত্ব দেন। বিকাল চারটায় নিজের প্রাসাদোপম বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন।
মেজর হাফিজ উদ্দিন এই আসন থেকে আটবার নির্বাচন করেন। এরমধ্যে ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। বাকি ছ'টি নির্বাচনে কখনও জাতীয় পার্টি, কখনও বিএনপি, স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচন করেন। এক এগারোর প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর তিনি খালেদা-তারেককে ছেড়ে রাতারাতি সংস্কারপন্থী হয়ে যান। এমনকি নতুন দল করে সেই দলের মহাসচিব হয়ে বসেন। বেগম জিয়া মুক্তির পর তিনি আবার নিজেকে বিএনপিতে ভেড়াতে সক্ষম হন। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮'র নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের নতুন প্রার্থী মেজর (অব) জসীমের কাছে ১৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। অবসরে যাওয়ার তিন বছর পার হওয়ার আগেই নির্বাচনে অংশ নেয়ায় আইনভঙ্গের কারণে নির্বাচন কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করে।
নতুন এই উপ-নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে হাফিজ খুবই আশাবাদী ছিলেন। হাফিজের ধারণা ছিল, ছয়বারের এমপি এবং এবার মেজর জসীমের ১৩ হাজার ভোটে হারলেও উপনির্বাচনে শাওনকে হারানো কোন ব্যাপার হবে না। কিন্তু বাংলা সিনেমার নবাগত মুখের মতো শাওন সর্বত্র বাজিমাত করে ফেলে। সরকার এ ব্যাপারে নীরব থাকলেও দল হিসাবে আওয়ামী লীগ তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে শাওনের সমর্থনে নামে। এতে মাথা খারাপ হয়ে যায় মেজর হাফিজের। তখন কি বলছেন, বলছেন না, আর স্বীকার করছেন, অস্বীকার করছেন কোন কিছুর হিসাব রাখতে পারছে না হাফিজ। সিইসির সঙ্গে বৈঠকে সকল সাংবাদিকের সামনে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পরদিনই বলেছেন, 'সিইসি আমার কোন কথাই রাখেননি। আবার বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে সাতদিন নির্বাচন পেছানোর দাবি তুলে বলেন, অন্যথায় দলীয় চেয়ারপার্সনের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিবেন তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন কিন। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে তিন বেমালুম অস্বীকার করে বলেন, সাতদিন সময় বাড়িয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের কথা বলেছি। নির্বাচনে থাকা না থাকা নিয়ে কিছু বলিনি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা ঢাকায় নাকি বলেছেন, লালমোহন-তজুমদ্দিনে আড়াই শ' লোক আহত হওয়ার অভিযোগ সত্য নয় জানিয়ে হাফিজ উদ্দিন বলেন, তাহলে কাদস্বিনীকে কি মরিয়াই প্রমাণ করতে হবে।
এলাকার মানুষের অভিযোগ, হাফিজ এতদিন 'মৌমাছি বাহিনী', 'মার্শাল বাহিনী', 'হকিস্টিক বাহিনীকে', কাজে লাগিয়ে এমপি হতেন। এবারের নির্বাচনে এসব বাহিনী কাজে না লাগাতে পারায় তিনি নির্বাচন বর্জনের নানা পথ খুঁজছেন। তবে নির্বাচনে যাতে গণ্ডগোল হয় এবং সেটি ইস্যু করে নির্বাচন পণ্ড করার ষড়যন্ত্র এখনও তাদের হাতে রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অমান্য করে এখনও পর্যন্ত বহিরাগত শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুল্লাহ আল নোমান, শাম্মী আখতারসহ অসংখ্য বহিরাগতের মেজর হাফিজের বাড়িতে অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার সকালে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন শাহজাহানের বাসভবনে নির্বাচন ভণ্ডুলের নীলনকশা চূড়ান্ত করা হয়। সেখানেই বহিরাগতদের পোলিং এজেন্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বাড়িতেই নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্বাচনী এলাকায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয় হাফিজ ইব্রাহিম। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর মৌমাছি বাহিনীর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়টি কোন ক্রমেই স্বীকার করছে না হাফিজ উদ্দিন। হাফিজ ইব্রাহিম পূর্বনির্ধারিত বিশাল সমাবেশ বাদ দিয়ে মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করে। এতে তেমন লোক সমাগম চোখে পড়েনি।
আওয়ামী লীগের সাংবাদিক সম্মেলন : ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সমন্বয়ক, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ এমপি বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনী এজেন্টের নামে শত শত বাহিরাগত লোক এখানে এনেছে। যারা ভোলা সদরের লোক এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মী। তোফায়েলের প্রশ্ন_আমরা যদি ৮৭ জন এমপি দিয়ে এজেন্ট করি? কিন্তু আমরা স্থানীয়দের দিয়ে এজেন্ট করছি। বিএনপির মূল উদ্দেশ্য নির্বাচন তারা ইস্যু করতে চায়। তারা বহিরাগত এনে নৈরাজ্য করতে চায়।
তোফায়েল আহমেদ বৃহস্পতিবার বিকালে ভোলার লালমোহন শাহাবাজপুর কলেজ মাঠে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির নেতারা ঢাকায় বসে প্রেস ব্রিফিং করে বলে, তাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। মাথায় পট্টি বেঁধে বাসায় এনেছে। কিন্তু জুডিশিয়াল তদন্ত টিমের সামনে তারা একজনকেও হাজির করতে পারেনি। তারা মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়। আমাদের যে সব নেতা নির্বাচনী প্রচারণায় এসেছে তারা আজ বৃহস্পতিবার চলে যাবে। এমনকি পাশের উপজেলার এমপি জ্যাকবও নির্বাচনের দিন থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের সামনে অবাধ, শান্তিপূর্ণ, নির্বাচন করতে যে সিদ্ধান্ত দু'প্রার্থীর সামনে নেয়া হয়েছে তা হাফিজ এখন মানছে না। হাফিজ এখন নতুন ষড়যন্ত্র করছে। তাই নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তাব করছে। কিন্তু এটা সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ বলেন, এলাকায় কোন লোক তাদের ভোটার নয়। তাই বাইরে থেকে এজেন্ট এনেছে। তারা নির্বাচন বিতর্কিত করতে চেষ্টা করছে। তারা ঢাকায় বসে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চায়। তারা কোন ইস্যু না পেয়ে যুদ্ধপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে নির্বাচন বানচাল করতে চায়। দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করাই তাদের উদ্দেশ্য। জাতি তাদের ভণ্ডামি বুঝে গেছে। নির্বাচনে হেরে যাবার ভয়ে তারা নিত্য নতুন মিথ্যা অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁরানোর পথ খুঁজছে। আওয়ামী নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন_ তোফায়েল আহমেদ, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাসিম, ওমর ফারুক চৌধুরী, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, লিয়াকত শিকদার, বলরাম পোদ্দার, খলিলুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, তিনি পাঁচ বার এখান থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন অথচ এখন এজেন্ট দিতে পারছেন না_ কেন? তাহলে তিনি জনগণের বিরুদ্ধে এমন কিছু করেছেন যাতে কেউ তাঁর এজেন্ট হতে চায় না। নির্বাচন বিতর্কিত করার জন্য তিনি যে নিত্যনতুন ষড়যন্ত্র করছেন এ বিষয়ে আজ আর কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। বক্তারা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভণ্ডুল করার জন্য তারা এখন ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। বহিরাগতদের ব্যাপারে হাফিজ উদ্দিনই প্রথম প্রশ্ন তুলেছেন, এখন নিজেই বহিরাগতদের পৰে বলছেন, সত্যিই বিচিত্র চরিত্রের লোক সে।
বিএনপির সাংবাদিক সম্মেলন : বিএনপির প্রার্থী মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার বিকালে তাঁর লালমোহন বাসভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এবার পুলিশ প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, রেবের পর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। মিডিয়াতে তাঁর কথা যথাযথভাবে প্রচার করা হয় না। অস্ত্র উদ্ধারের জন্য তিনি ৭ দিন নির্বাচন পিছানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু মিডিয়া তা ভুল প্রচার করেছে। তাঁর অভিযোগ_ আওয়ামী লীগ ২/১টি ছাড়া সব মিডিয়াকে ম্যানেজ করেছে।
হাফিজ বলেছেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের আহত করার সেঞ্চুরি হবে এক দিনেই। আমার বাড়িতে রগকাটা, মাথা ফাটা আহতরা এখনও রয়েছে। এখনও কি সিইসির সন্দেহ দূর হবে না। এখানে প্রচুর অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী ঘুরে বেড়াচ্ছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গ্রামে গ্রামে মাইকিং করে বিএনপির নেতাকর্মী, সমর্থক, ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে, যাতে ভোট দিতে না যায়। ভোট কেন্দ্রে গেলে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হবে। আগামী ৩ বছর এলাকায় শান্তিতে থাকতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে অত্যাধুনিক গাড়িতে করে এখানে সন্ত্রাসীরা এসেছে। তারা গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে।
হাফিজ বলেন, তাঁর বাসায় এখন ৮ জন আহত দলীয় কর্মী মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। তিনি এ সময় উল্লেখ করেন, বদরপুর আলতাব মেম্বারের বাড়িতে হামলা হয়েছে। ৪/৫টি বাড়ি লুট হয়েছে। র্যাবকে জানানো হলেও তারা যায়নি। রিটার্নিং অফিসার না বললে, র্যাব যাবে না। তালতলা বাজারে বিএনপির কর্মী মাহাবুবুর রহমানসহ ৬/৭ জনকে আহত করেছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। তজুমদ্দিন উপজেলার চাচড়া ইউনিয়নে মাইকিং করে বিএনপির নেতাকর্মীদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। লালমোহনের ধলিগরনগর ছাত্রদল নেতা মিঠুকে আটকে রেখেছিল। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। জনতা বাজারে মৌলভী নুরুল হক, জহির, আয়শাকে মারধর ও কুপিয়ে আহত করেছে। লালমোহন ইউনিয়নে বিএনপি কর্মী মজিবকে ধান ক্ষেতে নিয়ে পায়ের রগ কর্তন করেছে। এমন কি তার মাকেও কুপিয়েছে।
হাফিজ আরও অভিযোগ করেন, আমার দলের নেতাকর্মীদের ওপর প্রতিপক্ষ দলের সন্ত্রাসীরা শুধু হামলাই করছে না। তারা এখন পুলিশ দিয়ে বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে। দলের শীর্ষ নেতাকর্মীদেরকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করেছে। তিনি নির্বাচন বর্জন করার কথা নাকোচ করে বলেন, আমার কি মাথা খারাপ, আমি নির্বাচন বয়কট করব। আমি এখানে ৬ বার এমপি হয়েছি।
সংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি আইনকানুন সব জানি। যে সব এলাকায় ব্যাপক সন্ত্রাস হয়েছে ওই এলাাকয় অন্য উপজেলার লোক দিয়ে পোলিং এজেন্ট করা হবে। এ সময় সংসদ সদস্য এ্যানি বলেন, প্রয়োজনে আমরা এমপিরা, বিএনপি নেতৃবৃন্দ এজেন্ট হব। ভোটের দিন ২০ জন জাতীয় নেতা, এমপি থাকার জন্য নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছি। তারা দেখবে এলাকার চিত্র।
হাফিজ বলেন, আহতের সংখ্যা ২৫০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এক দিনেই আহতের সেঞ্চুরি হয়েছে। এত কিছুর পরও সিইসির না কি সন্দেহ যায়নি। কোন নেতাকর্মীর মৃত্যু না হলে তিনি বিশ্বাস করবেন না।
সাংবাদিক সম্মেলন চলাকালে বলা হয়, এইমাত্র একজন বিএনপির কর্মীকে আহত অবস্থায় তাঁর বাড়িতে আনা হয়েছে। ওই সময় সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, মিডিয়াতে বিএনপির নিউজ প্রচার ঠিকমতো হয় না। এ সময় খুব কর্কশ ভাষায় হাফিজ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এমপি, নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপি, নিলুফার চৌধুরী মনি এমপি, শামীমা আক্তার এমপি, রাশেদা বেগম হীরা এমপি, বিলকিস জাহান এমপি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিবুন নবী সোহেল, কৃষক দলের সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু, সাবেক এমপি সিরিন প্রমুখ।
বিএনপি বিকালে লালমোহন শহরে শেষ নির্বাচনী মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই হাফিজ উদ্দিন নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের পায়ে পায়ে দোষ খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি প্রতিদিন দলীয় নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে হামলা-মামলার অভিযোগ করেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার এই আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই শ' ছাড়িয়ে তিন শ'তে পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেন। তাঁর বাড়িতে একজন লোক শোয়া ছিল যার শরীরে কোন জখমের চিহ্ন ছিল না। হাফিজ উদ্দিন প্রায় ৪০ মিনিট ধরে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা বলছেন। নির্বাচনী প্রচারের শেষ মুহূর্তে এসে দু'প্রার্থী যেখানে ব্যাপক জনসংযোগে ব্যস্ত থাকার কথা ছিল, কিন্তু দু'পৰই ব্যস্ত ছিল সংবাদ সম্মেলনে। বিকাল সাড়ে তিনটায় শাহবাজ কলেজ মাঠে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে নেতৃত্ব দেন। বিকাল চারটায় নিজের প্রাসাদোপম বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন।
মেজর হাফিজ উদ্দিন এই আসন থেকে আটবার নির্বাচন করেন। এরমধ্যে ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। বাকি ছ'টি নির্বাচনে কখনও জাতীয় পার্টি, কখনও বিএনপি, স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচন করেন। এক এগারোর প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর তিনি খালেদা-তারেককে ছেড়ে রাতারাতি সংস্কারপন্থী হয়ে যান। এমনকি নতুন দল করে সেই দলের মহাসচিব হয়ে বসেন। বেগম জিয়া মুক্তির পর তিনি আবার নিজেকে বিএনপিতে ভেড়াতে সক্ষম হন। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮'র নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের নতুন প্রার্থী মেজর (অব) জসীমের কাছে ১৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। অবসরে যাওয়ার তিন বছর পার হওয়ার আগেই নির্বাচনে অংশ নেয়ায় আইনভঙ্গের কারণে নির্বাচন কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করে।
নতুন এই উপ-নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে হাফিজ খুবই আশাবাদী ছিলেন। হাফিজের ধারণা ছিল, ছয়বারের এমপি এবং এবার মেজর জসীমের ১৩ হাজার ভোটে হারলেও উপনির্বাচনে শাওনকে হারানো কোন ব্যাপার হবে না। কিন্তু বাংলা সিনেমার নবাগত মুখের মতো শাওন সর্বত্র বাজিমাত করে ফেলে। সরকার এ ব্যাপারে নীরব থাকলেও দল হিসাবে আওয়ামী লীগ তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে শাওনের সমর্থনে নামে। এতে মাথা খারাপ হয়ে যায় মেজর হাফিজের। তখন কি বলছেন, বলছেন না, আর স্বীকার করছেন, অস্বীকার করছেন কোন কিছুর হিসাব রাখতে পারছে না হাফিজ। সিইসির সঙ্গে বৈঠকে সকল সাংবাদিকের সামনে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পরদিনই বলেছেন, 'সিইসি আমার কোন কথাই রাখেননি। আবার বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে সাতদিন নির্বাচন পেছানোর দাবি তুলে বলেন, অন্যথায় দলীয় চেয়ারপার্সনের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিবেন তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন কিন। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে তিন বেমালুম অস্বীকার করে বলেন, সাতদিন সময় বাড়িয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের কথা বলেছি। নির্বাচনে থাকা না থাকা নিয়ে কিছু বলিনি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা ঢাকায় নাকি বলেছেন, লালমোহন-তজুমদ্দিনে আড়াই শ' লোক আহত হওয়ার অভিযোগ সত্য নয় জানিয়ে হাফিজ উদ্দিন বলেন, তাহলে কাদস্বিনীকে কি মরিয়াই প্রমাণ করতে হবে।
এলাকার মানুষের অভিযোগ, হাফিজ এতদিন 'মৌমাছি বাহিনী', 'মার্শাল বাহিনী', 'হকিস্টিক বাহিনীকে', কাজে লাগিয়ে এমপি হতেন। এবারের নির্বাচনে এসব বাহিনী কাজে না লাগাতে পারায় তিনি নির্বাচন বর্জনের নানা পথ খুঁজছেন। তবে নির্বাচনে যাতে গণ্ডগোল হয় এবং সেটি ইস্যু করে নির্বাচন পণ্ড করার ষড়যন্ত্র এখনও তাদের হাতে রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অমান্য করে এখনও পর্যন্ত বহিরাগত শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুল্লাহ আল নোমান, শাম্মী আখতারসহ অসংখ্য বহিরাগতের মেজর হাফিজের বাড়িতে অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার সকালে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন শাহজাহানের বাসভবনে নির্বাচন ভণ্ডুলের নীলনকশা চূড়ান্ত করা হয়। সেখানেই বহিরাগতদের পোলিং এজেন্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বাড়িতেই নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্বাচনী এলাকায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয় হাফিজ ইব্রাহিম। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর মৌমাছি বাহিনীর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়টি কোন ক্রমেই স্বীকার করছে না হাফিজ উদ্দিন। হাফিজ ইব্রাহিম পূর্বনির্ধারিত বিশাল সমাবেশ বাদ দিয়ে মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করে। এতে তেমন লোক সমাগম চোখে পড়েনি।
আওয়ামী লীগের সাংবাদিক সম্মেলন : ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সমন্বয়ক, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ এমপি বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনী এজেন্টের নামে শত শত বাহিরাগত লোক এখানে এনেছে। যারা ভোলা সদরের লোক এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মী। তোফায়েলের প্রশ্ন_আমরা যদি ৮৭ জন এমপি দিয়ে এজেন্ট করি? কিন্তু আমরা স্থানীয়দের দিয়ে এজেন্ট করছি। বিএনপির মূল উদ্দেশ্য নির্বাচন তারা ইস্যু করতে চায়। তারা বহিরাগত এনে নৈরাজ্য করতে চায়।
তোফায়েল আহমেদ বৃহস্পতিবার বিকালে ভোলার লালমোহন শাহাবাজপুর কলেজ মাঠে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির নেতারা ঢাকায় বসে প্রেস ব্রিফিং করে বলে, তাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। মাথায় পট্টি বেঁধে বাসায় এনেছে। কিন্তু জুডিশিয়াল তদন্ত টিমের সামনে তারা একজনকেও হাজির করতে পারেনি। তারা মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়। আমাদের যে সব নেতা নির্বাচনী প্রচারণায় এসেছে তারা আজ বৃহস্পতিবার চলে যাবে। এমনকি পাশের উপজেলার এমপি জ্যাকবও নির্বাচনের দিন থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের সামনে অবাধ, শান্তিপূর্ণ, নির্বাচন করতে যে সিদ্ধান্ত দু'প্রার্থীর সামনে নেয়া হয়েছে তা হাফিজ এখন মানছে না। হাফিজ এখন নতুন ষড়যন্ত্র করছে। তাই নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তাব করছে। কিন্তু এটা সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ বলেন, এলাকায় কোন লোক তাদের ভোটার নয়। তাই বাইরে থেকে এজেন্ট এনেছে। তারা নির্বাচন বিতর্কিত করতে চেষ্টা করছে। তারা ঢাকায় বসে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চায়। তারা কোন ইস্যু না পেয়ে যুদ্ধপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে নির্বাচন বানচাল করতে চায়। দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করাই তাদের উদ্দেশ্য। জাতি তাদের ভণ্ডামি বুঝে গেছে। নির্বাচনে হেরে যাবার ভয়ে তারা নিত্য নতুন মিথ্যা অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁরানোর পথ খুঁজছে। আওয়ামী নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন_ তোফায়েল আহমেদ, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাসিম, ওমর ফারুক চৌধুরী, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, লিয়াকত শিকদার, বলরাম পোদ্দার, খলিলুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, তিনি পাঁচ বার এখান থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন অথচ এখন এজেন্ট দিতে পারছেন না_ কেন? তাহলে তিনি জনগণের বিরুদ্ধে এমন কিছু করেছেন যাতে কেউ তাঁর এজেন্ট হতে চায় না। নির্বাচন বিতর্কিত করার জন্য তিনি যে নিত্যনতুন ষড়যন্ত্র করছেন এ বিষয়ে আজ আর কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। বক্তারা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভণ্ডুল করার জন্য তারা এখন ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। বহিরাগতদের ব্যাপারে হাফিজ উদ্দিনই প্রথম প্রশ্ন তুলেছেন, এখন নিজেই বহিরাগতদের পৰে বলছেন, সত্যিই বিচিত্র চরিত্রের লোক সে।
বিএনপির সাংবাদিক সম্মেলন : বিএনপির প্রার্থী মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার বিকালে তাঁর লালমোহন বাসভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এবার পুলিশ প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, রেবের পর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। মিডিয়াতে তাঁর কথা যথাযথভাবে প্রচার করা হয় না। অস্ত্র উদ্ধারের জন্য তিনি ৭ দিন নির্বাচন পিছানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু মিডিয়া তা ভুল প্রচার করেছে। তাঁর অভিযোগ_ আওয়ামী লীগ ২/১টি ছাড়া সব মিডিয়াকে ম্যানেজ করেছে।
হাফিজ বলেছেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের আহত করার সেঞ্চুরি হবে এক দিনেই। আমার বাড়িতে রগকাটা, মাথা ফাটা আহতরা এখনও রয়েছে। এখনও কি সিইসির সন্দেহ দূর হবে না। এখানে প্রচুর অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী ঘুরে বেড়াচ্ছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গ্রামে গ্রামে মাইকিং করে বিএনপির নেতাকর্মী, সমর্থক, ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে, যাতে ভোট দিতে না যায়। ভোট কেন্দ্রে গেলে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হবে। আগামী ৩ বছর এলাকায় শান্তিতে থাকতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে অত্যাধুনিক গাড়িতে করে এখানে সন্ত্রাসীরা এসেছে। তারা গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে।
হাফিজ বলেন, তাঁর বাসায় এখন ৮ জন আহত দলীয় কর্মী মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। তিনি এ সময় উল্লেখ করেন, বদরপুর আলতাব মেম্বারের বাড়িতে হামলা হয়েছে। ৪/৫টি বাড়ি লুট হয়েছে। র্যাবকে জানানো হলেও তারা যায়নি। রিটার্নিং অফিসার না বললে, র্যাব যাবে না। তালতলা বাজারে বিএনপির কর্মী মাহাবুবুর রহমানসহ ৬/৭ জনকে আহত করেছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। তজুমদ্দিন উপজেলার চাচড়া ইউনিয়নে মাইকিং করে বিএনপির নেতাকর্মীদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। লালমোহনের ধলিগরনগর ছাত্রদল নেতা মিঠুকে আটকে রেখেছিল। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। জনতা বাজারে মৌলভী নুরুল হক, জহির, আয়শাকে মারধর ও কুপিয়ে আহত করেছে। লালমোহন ইউনিয়নে বিএনপি কর্মী মজিবকে ধান ক্ষেতে নিয়ে পায়ের রগ কর্তন করেছে। এমন কি তার মাকেও কুপিয়েছে।
হাফিজ আরও অভিযোগ করেন, আমার দলের নেতাকর্মীদের ওপর প্রতিপক্ষ দলের সন্ত্রাসীরা শুধু হামলাই করছে না। তারা এখন পুলিশ দিয়ে বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে। দলের শীর্ষ নেতাকর্মীদেরকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করেছে। তিনি নির্বাচন বর্জন করার কথা নাকোচ করে বলেন, আমার কি মাথা খারাপ, আমি নির্বাচন বয়কট করব। আমি এখানে ৬ বার এমপি হয়েছি।
সংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি আইনকানুন সব জানি। যে সব এলাকায় ব্যাপক সন্ত্রাস হয়েছে ওই এলাাকয় অন্য উপজেলার লোক দিয়ে পোলিং এজেন্ট করা হবে। এ সময় সংসদ সদস্য এ্যানি বলেন, প্রয়োজনে আমরা এমপিরা, বিএনপি নেতৃবৃন্দ এজেন্ট হব। ভোটের দিন ২০ জন জাতীয় নেতা, এমপি থাকার জন্য নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছি। তারা দেখবে এলাকার চিত্র।
হাফিজ বলেন, আহতের সংখ্যা ২৫০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এক দিনেই আহতের সেঞ্চুরি হয়েছে। এত কিছুর পরও সিইসির না কি সন্দেহ যায়নি। কোন নেতাকর্মীর মৃত্যু না হলে তিনি বিশ্বাস করবেন না।
সাংবাদিক সম্মেলন চলাকালে বলা হয়, এইমাত্র একজন বিএনপির কর্মীকে আহত অবস্থায় তাঁর বাড়িতে আনা হয়েছে। ওই সময় সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, মিডিয়াতে বিএনপির নিউজ প্রচার ঠিকমতো হয় না। এ সময় খুব কর্কশ ভাষায় হাফিজ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এমপি, নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপি, নিলুফার চৌধুরী মনি এমপি, শামীমা আক্তার এমপি, রাশেদা বেগম হীরা এমপি, বিলকিস জাহান এমপি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিবুন নবী সোহেল, কৃষক দলের সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু, সাবেক এমপি সিরিন প্রমুখ।
বিএনপি বিকালে লালমোহন শহরে শেষ নির্বাচনী মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
No comments:
Post a Comment