"জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বৈঠক না হলেও চারদলীয় জোটের শরিক হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এবং থাকাটাই স্বাভাবিক।" স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকাচৌ
বিশেষ প্রতিনিধি
যুদ্ধাপরাধ বিচারের 'বিপক্ষে' অবস্থান নিচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি! তবে সরাসরি নয়, 'পরোক্ষভাবে' এবং কিছুটা 'কৌশলে'। রাজনৈতিক কারণে 'প্রকাশ্যে' যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা না করলেও কৌশলী ভূমিকা নিয়ে 'বিচার প্রক্রিয়া' অর্থাৎ 'ট্রাইব্যুনালের বৈধতা' নিয়ে প্রশ্ন তুলছে দলটি। মুখে 'প্রকৃত' যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে 'রাজনৈতিক স্বার্থে' ভেতরে ভেতরে দলটি এই বিচারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
বিএনপি নেতাদের ভাষায়, 'স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে মহাজোট সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে 'ঘায়েল' করার কৌশল নিয়েছে'। অবশ্য 'স্পর্শকাতর' এই ইস্যুতে দলের ভেতর কিছুটা দ্বিধাবিভক্তিও রয়েছে। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অধিকাংশ নেতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে। কিন্তু দলের 'চেইন অব কমান্ড' রক্ষার স্বার্থে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না তারা।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দাবি করছেন, বিএনপি 'প্রকৃত' যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে নয়। তবে তার মতে, যে আইনে যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। এতে আত্মপক্ষ সমর্থন করার কোনো সুযোগ থাকছে না। তিনি মনে করেন, এই আইনের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
১ এপ্রিল বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পরের দিন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়ায় একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে গঠিত ট্রাইব্যুনাল নিয়ে আপত্তি জানান নেতারা। দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামীসহ নিজ দলের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ওঠায় এই 'কৌশলী' অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
দলের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, চারদলীয় জোটের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় যেতে ইচ্ছুক বিএনপির এসব কট্টর ডানপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে অবস্থান নিতে দলের হাইকমান্ডকে চাপ দিচ্ছেন। তারা হাইকমান্ডকে বুঝিয়েছেন, এই ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামী ক্ষতিগ্রস্ত হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে আওয়ামী লীগ। চারদলীয় জোটকে 'দুর্বল' করতে পারলে আওয়ামী লীগের আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়া 'নিশ্চিত' হয়ে যাবে। অন্যদিকে নির্বাচনী হিসাব-নিকাশে জামায়াতে ইসলামীর ভোট ছাড়া এককভাবে বিএনপির পক্ষে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়াও 'কঠিন'। এসব নানামুখী চিন্তা-ভাবনা থেকে যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিরোধিতা।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, চারদলীয় জোটের শরিক জামায়াতের ইসলামীর চাপ ও ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাওয়ার হিসাব-নিকাশসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে কৌশলী অবস্থান নেয় বিএনপি। তবে কৌশলগত কারণে এত তাড়াতাড়ি যুদ্ধাপরাধের ইস্যুকে কেন্দ্র করে জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামবে না তারা। আপাতত বিচার প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে সরকারকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করার কৌশল নিয়েছে দলটি। দলীয়ভাবে না হলেও বিএনপি ও জামায়াত সমর্থক আইনজীবী ও বুদ্ধিজীবী নেতারা একমঞ্চে বিচারের বিরোধিতা করে যাওয়ার কৌশল নেন।
বিএনপির হাইকমান্ডের এমন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে দলের আইনজীবী নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা আগের চেয়ে এখন 'জোর গলায়' যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করতে শুরু করেছেন। শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে ট্রাইব্যুনালে আসামিদের নিয়মিত আপিলের সুযোগ রাখার দাবি জানিয়েছেন সাবেক স্পিকার ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার।
ওই সেমিনারে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন বলেন, 'আইনটির প্রতিটি ধারাই মানবাধিকার ও সংবিধান পরিপন্থী। এ আইনের বিচার করা যাবে না। গায়ের জোরে বিচার করতে গেলে উল্টো বিচারের উদ্যোক্তারাই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন।' দলের বিএনপির ভাইস চেয়ারমান বিচারপতি টিএইচ খান বলেন, 'আইনে আন্তর্জাতিক শব্দ থাকলেও এর ভেতরে আন্তর্জাতিক কিছু নেই। শুধু ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার করলেই হবে না।' তিনি আইনটি সংশোধনের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, 'মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের যদি উদ্যোগ নিতেই হয়, তাহলে রক্ষীবাহিনী ও তাদের নেতাদের বিচার আগে হতে হবে। জঙ্গল আইন ও সংবিধান পরিপন্থী আইন দিয়ে বিচার করতে গেলে প্রতিরোধ করা হবে।' সেমিনারে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী বুদ্ধিজীবী সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুর রউফ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, জামায়াতের নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকও বক্তব্য রাখেন।
তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নেতারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার ও আলবদরের ভূমিকা পালনকারী পাকিস্তানি দোসরদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করার পক্ষে। এক্ষেত্রে তারা বিএনপির ভেতর যদি কোনো যুদ্ধাপরাধী থাকে তাদেরও বিচারের পক্ষে রয়েছেন তারা। তবে দলের 'চেইন অব কমান্ড' রক্ষার্থে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ মুক্তিযোদ্ধা ওই নেতারা। এ অংশের নেতারা সমকালকে জানান, জামায়াতে ইসলামীকে আর সামনের দিকে এগোতে দেওয়া সঠিক হবে না। নির্বাচনী জোট করার ফলে পরোক্ষভাবে বিএনপির ক্ষতি হচ্ছে, যা ইতিমধ্যে দলের তৃণমূল নেতারা ঢাকায় সিরিজ সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছেও অভিযোগ করেছেন। এমনকি ভবিষ্যতে জামায়াতের সঙ্গে জোট না করার দাবি জানিয়েছেন তারা। জামায়াতনির্ভর না হয়ে বিএনপিকে নিজের পায়ের ওপর দাঁড়াতে প্রস্তুত করার পক্ষে তারা।
দলের স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, তারাও চান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। তবে সরকারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করা থেকে বিরত থাকতে হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক নেতাদের হয়রানির চেষ্টা করলে সরকার ভুল করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বৈঠক না হলেও চারদলীয় জোটের শরিক হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এবং থাকাটাই স্বাভাবিক।
http://www.samakal.com.bd/details.php?news=13&action=main&option=single&news_id=60124&pub_no=311
বিশেষ প্রতিনিধি
যুদ্ধাপরাধ বিচারের 'বিপক্ষে' অবস্থান নিচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি! তবে সরাসরি নয়, 'পরোক্ষভাবে' এবং কিছুটা 'কৌশলে'। রাজনৈতিক কারণে 'প্রকাশ্যে' যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা না করলেও কৌশলী ভূমিকা নিয়ে 'বিচার প্রক্রিয়া' অর্থাৎ 'ট্রাইব্যুনালের বৈধতা' নিয়ে প্রশ্ন তুলছে দলটি। মুখে 'প্রকৃত' যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে 'রাজনৈতিক স্বার্থে' ভেতরে ভেতরে দলটি এই বিচারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
বিএনপি নেতাদের ভাষায়, 'স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে মহাজোট সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে 'ঘায়েল' করার কৌশল নিয়েছে'। অবশ্য 'স্পর্শকাতর' এই ইস্যুতে দলের ভেতর কিছুটা দ্বিধাবিভক্তিও রয়েছে। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অধিকাংশ নেতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে। কিন্তু দলের 'চেইন অব কমান্ড' রক্ষার স্বার্থে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না তারা।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দাবি করছেন, বিএনপি 'প্রকৃত' যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে নয়। তবে তার মতে, যে আইনে যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। এতে আত্মপক্ষ সমর্থন করার কোনো সুযোগ থাকছে না। তিনি মনে করেন, এই আইনের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
১ এপ্রিল বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পরের দিন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়ায় একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে গঠিত ট্রাইব্যুনাল নিয়ে আপত্তি জানান নেতারা। দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামীসহ নিজ দলের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ওঠায় এই 'কৌশলী' অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
দলের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, চারদলীয় জোটের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় যেতে ইচ্ছুক বিএনপির এসব কট্টর ডানপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে অবস্থান নিতে দলের হাইকমান্ডকে চাপ দিচ্ছেন। তারা হাইকমান্ডকে বুঝিয়েছেন, এই ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামী ক্ষতিগ্রস্ত হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে আওয়ামী লীগ। চারদলীয় জোটকে 'দুর্বল' করতে পারলে আওয়ামী লীগের আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়া 'নিশ্চিত' হয়ে যাবে। অন্যদিকে নির্বাচনী হিসাব-নিকাশে জামায়াতে ইসলামীর ভোট ছাড়া এককভাবে বিএনপির পক্ষে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়াও 'কঠিন'। এসব নানামুখী চিন্তা-ভাবনা থেকে যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিরোধিতা।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, চারদলীয় জোটের শরিক জামায়াতের ইসলামীর চাপ ও ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাওয়ার হিসাব-নিকাশসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে কৌশলী অবস্থান নেয় বিএনপি। তবে কৌশলগত কারণে এত তাড়াতাড়ি যুদ্ধাপরাধের ইস্যুকে কেন্দ্র করে জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামবে না তারা। আপাতত বিচার প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে সরকারকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করার কৌশল নিয়েছে দলটি। দলীয়ভাবে না হলেও বিএনপি ও জামায়াত সমর্থক আইনজীবী ও বুদ্ধিজীবী নেতারা একমঞ্চে বিচারের বিরোধিতা করে যাওয়ার কৌশল নেন।
বিএনপির হাইকমান্ডের এমন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে দলের আইনজীবী নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা আগের চেয়ে এখন 'জোর গলায়' যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করতে শুরু করেছেন। শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে ট্রাইব্যুনালে আসামিদের নিয়মিত আপিলের সুযোগ রাখার দাবি জানিয়েছেন সাবেক স্পিকার ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার।
ওই সেমিনারে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন বলেন, 'আইনটির প্রতিটি ধারাই মানবাধিকার ও সংবিধান পরিপন্থী। এ আইনের বিচার করা যাবে না। গায়ের জোরে বিচার করতে গেলে উল্টো বিচারের উদ্যোক্তারাই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন।' দলের বিএনপির ভাইস চেয়ারমান বিচারপতি টিএইচ খান বলেন, 'আইনে আন্তর্জাতিক শব্দ থাকলেও এর ভেতরে আন্তর্জাতিক কিছু নেই। শুধু ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার করলেই হবে না।' তিনি আইনটি সংশোধনের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, 'মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের যদি উদ্যোগ নিতেই হয়, তাহলে রক্ষীবাহিনী ও তাদের নেতাদের বিচার আগে হতে হবে। জঙ্গল আইন ও সংবিধান পরিপন্থী আইন দিয়ে বিচার করতে গেলে প্রতিরোধ করা হবে।' সেমিনারে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী বুদ্ধিজীবী সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুর রউফ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, জামায়াতের নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকও বক্তব্য রাখেন।
তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নেতারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার ও আলবদরের ভূমিকা পালনকারী পাকিস্তানি দোসরদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করার পক্ষে। এক্ষেত্রে তারা বিএনপির ভেতর যদি কোনো যুদ্ধাপরাধী থাকে তাদেরও বিচারের পক্ষে রয়েছেন তারা। তবে দলের 'চেইন অব কমান্ড' রক্ষার্থে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ মুক্তিযোদ্ধা ওই নেতারা। এ অংশের নেতারা সমকালকে জানান, জামায়াতে ইসলামীকে আর সামনের দিকে এগোতে দেওয়া সঠিক হবে না। নির্বাচনী জোট করার ফলে পরোক্ষভাবে বিএনপির ক্ষতি হচ্ছে, যা ইতিমধ্যে দলের তৃণমূল নেতারা ঢাকায় সিরিজ সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছেও অভিযোগ করেছেন। এমনকি ভবিষ্যতে জামায়াতের সঙ্গে জোট না করার দাবি জানিয়েছেন তারা। জামায়াতনির্ভর না হয়ে বিএনপিকে নিজের পায়ের ওপর দাঁড়াতে প্রস্তুত করার পক্ষে তারা।
দলের স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, তারাও চান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। তবে সরকারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করা থেকে বিরত থাকতে হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক নেতাদের হয়রানির চেষ্টা করলে সরকার ভুল করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বৈঠক না হলেও চারদলীয় জোটের শরিক হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এবং থাকাটাই স্বাভাবিক।
http://www.samakal.com.bd/details.php?news=13&action=main&option=single&news_id=60124&pub_no=311
No comments:
Post a Comment