বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের তকমা
'ব্যর্থ রাষ্ট্র'র ষড়যন্ত্র থেমে নেই!
ব্যর্থ রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাদেশকে ঘিরে। এ অভিযোগ পুরনো। মাঝখানে জরুরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তাত্তি্বকেরা নিশ্চুপ ছিলেন বলে মনে হয়। অথচ জরুরি তত্ত্বাবধায়ক আমলেই রাষ্ট্র দুই বছর ব্যর্থ ছিল। তাত্তি্ব্বকেরা এক অর্থে সফলকাম। জরুরি অবস্থার অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনের পর গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে বেশ কিছু দিন। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের আমলে আবারও দেশের বিরুদ্ধে ব্যর্থ রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত প্রভাবশালী সাপ্তাহিক 'নিউজ উইক' চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করে 'দ্য নেক্সট আল-কায়েদা' বা পরবর্তী আল-কায়েদা শিরোনামে। এরই ধারাবাহিকতায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন দেয় চলতি বছরের ১ মার্চে 'The Threat from Jamaat-ul Mujahideen Bangladesh' শীর্ষক শিরোনামে। সেখানে আইসিজি দেখিয়েছে জামাতুল মুজাহিদিন বা জেএমবি মূলত লস্কর-ই-তৈয়বার হয়ে কাজ করে। যেখানে দেখানো হয় পরবর্তী আল-কায়েদার অন্যতম বাসস্থান বা চারণ ভূমি বাংলাদেশ। নিউজ উইক ও আইসিজি প্রতিবেদনে ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীর কজের অন্যতম জায়গা হিসেবে বাংলাদেশকে দেখানো হয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিয়ে অনন্তকালের এক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। এই যুদ্ধ মূলত ভেঙে পড়া পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সচল করার চেষ্টা। পশ্চিমা পুঁজিবাদীদের অর্থনৈতিক মন্দা কাটানোর যুদ্ধের ক্ষতি নিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়া দরিদ্র কমজোর সামরিক শক্তির মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ও দেশের জনসাধারণ। তবে এ যুদ্ধের সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও ধর্মীয় উগ্রবাদের নামেই যুদ্ধটা শুরু হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতি এবং তার অবসম্ভাবী ফল বিশ্ব রাজনীতির সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কারণ নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান তুহিনদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল মূলত বিশ্ব মন্দা কাটানোর জন্যই। সে সময় শিল্প কারখানাগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে বিশ্ব এক ভয়াবহ অর্থ সংকটের মধ্যে পড়েছিল। ১৯৩০ সালের সে মন্দাকে ইতিহাসে গ্রেট ডিপ্রেশন বা মহামন্দা বলে অভিহিত করা হয়। সে সময় কোটি কোটি গাড়ি উৎপাদন নষ্ট করতে হয়েছিল গাড়ি কম্পানিগুলোকে। আজকের মন্দায় সেই প্রভাব লক্ষণীয় ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে মার্কিনিদের গর্ব বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্র টুইন টাওয়ারে বিমান হামলার ফলে পৃথিবীর রাজনীতি পাল্টে যায়। ওই হামলায় আল-কায়েদাকে দায়ী করা হয়। প্রথমে আল-কায়েদা হামলার দায়িত্ব অস্বীকার করলেও পরবর্তী সময়ে তারা সাননন্দে তা স্বীকার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী আক্রমণের স্বীকার_এই অজুহাতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশ 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' ঘোষণা করে। প্রথম দিকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এই শব্দগুচ্ছ শুনতে ভালো লাগলেও পরবর্তী সময়ে এই যুদ্ধের প্রত্যক্ষ শিকার হতে থাকে একের পর এক তেল, খনিজসম্পদ অথবা ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলো। তবে দুর্ভাগ্য মুসলিম ধর্মালম্বী মানুষের জন্য, কারণ বুশের যুদ্ধ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নয়, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বিরুদ্ধে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মার্কিনিরা এক কুৎসিত বর্ণবাদী যুদ্ধেরও অবতারণা করেছে। তবে অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করেন, ভেঙে পড়া মার্কিন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনেই এই রকম একটি যুদ্ধের দরকার ছিল। যারা মাইকেল মুরের 'ফারেনাইট নাইন ইলেভান' তথ্যচিত্রটি দেখেছেন, তাঁরা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন টুইন টাওয়ারে হামলার মধ্য দিয়ে মার্কিন অস্ত্র কম্পানিগুলোর জন্য অসম্ভব এক লোভনীয় বাজার তৈরি করেছে। ইরাকে যেসব অস্ত্র দিয়ে হামলা হচ্ছে, তার মধ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র জজ বুশের কম্পানি কার্লাইল অন্যতম।
কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলে যেসব মুসলিম সন্ত্রাসী গ্রুপকে অস্ত্র, অর্থ ও তথ্যপ্রযুক্তি দিয়ে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা পরিচালনা করত, এই জমানার ঘোষিত সন্ত্রাসীরা কিন্তু সাবেক সেই বন্ধুরাই। আর এ কারণে অনেকে মনে করেন, আল-কায়েদা বলে বাস্তবে কোনো মার্কিনবিরোধী শক্তি নেই, যা আছে তা হলো দেশে দেশে আল-কায়েদা নামে মার্কিনিদের হামলা জায়েজ করার একটি প্রক্রিয়া। বিষয়টি আরো খোলামেলাভাবে বললে এভাবে বলতে হয়, যতদিন আল-কায়েদা থাকবে, ততদিন মার্কিন সৈন্যবাহিনী ও তার মিত্রশক্তি আল-কায়েদা ধ্বংস করার নামে দেশে দেশে হামলা চালানোর বৈধতা তৈরি করবে।
বিশ্ব আজ ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। এই সংকট মোকাবিলার শান্তিপূর্ণ কোনো সমাধান নেই। শান্তিপূর্ণ সমাধান না থাকায় তাকে যুদ্ধ বাধাতেই হবে। আর এ কারণে মার্কিন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক অনন্ত যুদ্ধ ঘোষণা করে তাদের মন্দা কাটানোর চেষ্টা করছে। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে বিশ্ব মন্দার একটি সংক্ষিপ্ত চালচিত্র দেখা যাক।
ধসে পড়ছে পুঁজিবাদী বিশ্ব অর্থনীতি
পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার সারকথা হলো মুক্তবাজার অর্থনীতি। অর্থনীতিতে বাজার হবে অবাধ এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণহীন। এই নিয়ন্ত্রণহীনতাই জন্ম দিয়েছে সাম্প্রতিক বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার। এই মন্দা ইতিমধ্যেই মুক্তবাজারকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ও রাজনীতিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
এবারের বিশ্ব মন্দায় রাষ্ট্রকে তার মুক্তবাজার চরিত্র ভেঙে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা একে পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড় ত্রুটি হিসেবে দেখছেন। পুঁজিবাদী অর্থনীতি তার নীতির বাইরে গিয়ে বাজার ব্যবস্থার রাষ্ট্রীয়করণ করছে। কিন্তু তার পরও বিশ্ব মন্দা কাটেনি। চলমান এই বিশ্ব মন্দা এই পর্যায় পেঁৗছেছে যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার গৃহনির্মাণ খাতে ঋণদানকারী সর্ববৃহৎ দুটি কম্পানি Freddie Mac, Fannie Mae-কে ২০ হাজার কোটি ডলারের বিনিময়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। আর্থিক বিনিয়োগ ব্যাংক 'লেহম্যান ব্রাদার্স' নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। মার্কিন সরকার এই ধস থামানোর জন্য মার্কিন কংগ্রেসে বেইল আউট কর্মসূচির জন্য ৭০০ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন দিয়েছে। এই অবস্থায়ও যখন ধস থামছে না তখন জি-৭-এর অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে সংকট মোকাবিলায় আরো বৃহত্তর পরিসরে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশ বিস্তারিত কর্মসূচির নেওয়ার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।
এই মন্দার পরিসর আরো গভীরতর হয়ে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু মার্কিন অর্থনীতি নয়, ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশেও মন্দা চলছে। অস্থিতিশীল বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে ইউরো অঞ্চল নামে পরিচিত ইউরোপের ১৫টি দেশ প্যারিসে বৈঠক করেছে। ইইউর প্রেসিডেন্সি ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী নিকোলাই সারকোজি ওই বৈঠকে বলেন, 'আর কোনো ব্যাংকের পতন তাঁরা চান না এবং এ জন্য ২০০৯ সাল পর্যন্ত ব্যাংকগুলোয় অর্থ ঢালা হবে। তবে যেসব ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপকেরা দায়ী, তাঁদের অবশ্যই চলে যেতে হবে।'
ব্রিটেনে এই সংকট থাবা বসিয়েছে রয়েল ব্যাংক অব স্কটল্যান্ড (আরবিএস), লয়েডস টিএসবি ও এইচবিওএসের ওপর। এ কারণে সংকটে থাকা ব্যংকগুলোকে দেওয়া হবে তিন হাজার ৭০০ কোটি পাউন্ড।
জার্মান সরকার ৫০ হাজার কোটি ইউরোর একটি প্যাকেজ পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে। ফ্রান্স ব্যয় করবে ৩৫ হাজার কোটি ইউরো আর স্পেন সরকার ১০ হাজার কোটি ইউরোর প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছে। ইতালি, অস্ট্রিয়াও তাদের মন্দা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
খাতওয়ারি লোকসানের একটি চিত্র এবারের মন্দায় ধসে পড়েছে সেবা খাত। হাজার হাজার মানুষের কাছে বিক্রি করা ফ্লাটের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না গ্রাহকেরা। তাই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন এই মন্দার গোড়ার কথা হলো রিয়েল এস্টেট ব্যবসার ধস। অথচ কেউ একবার বলছে না যেসব গ্রাহক রিয়েল এস্টেটের কাছ থেকে ফ্লাট বা জমি কিনেছিলেন, তারাই তো প্রথমে কিস্তি শোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁরা কেন হলো? অর্থাৎ মন্দার গোড়ার কথা রিয়েল এস্টেট নয়। সামগ্রিকভাকে মন্দা পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে ছোবল দিয়েছে। ফলে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় একটি সামগ্রিক ধস নেমেছে, যা বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সেবা খাতকে। ২০০৮ সালের অক্টোবরে Realty Track-এর সূত্রে জানা গেছে, ওই বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ ৮১ হাজার ৩০০ বাড়ি নিলামে তোলা হয়েছে, আগস্ট ২০০৭ থেকে এ পর্যন্ত মোট আট লাখ ৫১ হাজার বাড়ি ঋণদাতারা অধিগ্রহণ করার জন্য অগ্রসর হয়েছে। এই তথ্য আরো ভাবনায় ফেলে দেয় যখন জানা যায়, মার্কিনিদের ঘর-বাড়ি হারানোর আরো করুণ কাহিনী। Credit Suisse-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর Rod Dubitsky এক শীর্ষস্থানীয় বিজনেস উইককে জানিয়েছেন, '২০১২ সাল নাগাদ ৫০ লাখেরও বেশি আমেরিকান পরিবার তাদের বাড়ি হারাবে, আর ২০০৮ সালেই বাড়ি হারানো পরিবারের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১৬ লাখ ৯০ হাজার।'
এই মন্দার প্রভাব বিশ্বজুড়ে অন্য খাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। তৈরি করেছে পরস্পরের প্রতি এক অদৃশ্য কিন্তু বাস্তব টিকে থাকার সম্পর্ক। মার্কিন মন্দা তাই চীনের বাজার ব্যবস্থায়ও হানা দিয়েছে। মার্কিনিদের রিয়েল এস্টেটের ধস চীনের পিভিসি পাইপ ম্যানুফ্যাকচারিং কমিয়ে দিয়েছে ৩০ শতাংশ উৎপাদন। শুধু পিভিসি নয়, চীনের চারটি বৃহত্তম ইস্পাত কম্পানি ২০ শতাংশ উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে দেশটি। ইউরোপেও এই প্রভাব পড়ায় ইউরোপিয়ান গৃহনির্মাণ সামগ্রী প্রস্তুতকারকেরা হয় ফ্যাক্টরি বন্ধ নতুবা উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে।
মোটরযান কেনার লোক নেই GM, Ford, Toyota, BMW, Daimler, Volkswagen, Audi, Porsche-এর ইউরোপের কার্যক্রম সংকুচিত করেছে। এই সংকচনের ফলে শুধু গাড়িশিল্প নয়, এর প্রভাব গিয়ে পড়েছে অন্য শিল্পেও। ইস্পাত, গ্লাস, রাবার, ইলেকট্রনিক পার্টস, রাবারসহ একাধিক শিল্পে। আরো অসংখ্য খাতের ওপরও তার প্রভাব ফেলছে। তাৎক্ষণিক ফল হচ্ছে বিভিন্ন প্ল্যান্ট ও ফ্যাক্টরি বন্ধ অথবা লে-অফ ঘোষণা। General Motors-এর মধ্যেই তার ছয়টি ফ্যাক্টরি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে, যার পাঁচটি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত (জর্জিয়া, মিশিগান, নিউইয়র্ক, ওহিও ও উইসকনসিন), সেই সঙ্গে মেক্সিকোর Toluca এবং কানাডার Ontario-তেও প্ল্যান্ট বন্ধের ঘোষণা এসেছে। শুধু তা-ই নয়, জার্মানি, স্পেন, ব্রিটেন, পোল্যান্ড, সুইডেন ও বেলজিয়ামেও ফ্যাক্টরি সাময়িক বন্ধ করছে।
ইউএস গাড়ি-প্রস্তুতকারকেরা দেউলিয়াত্বের কিনারে এসে অটো শ্রমিকদের চাকরির ওপর খৰহস্ত হচ্ছে। জেনারেল মোটর (এগ) গত ১৬ অক্টোবর তাদের তিনটি প্ল্যান্টে (একটি দেলাওয়ার ও বাকি দুটি মিশিগানে-পনটিয়াক ও ডেট্রোইট) এক হাজার ৬০০ কর্মীর লে-অফ ঘোষণা করেছে। ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত তার অর্ধেক লোকবলকে ছাঁটাই করেছে, শ্রমিকের সংখ্যা এক লাখ ৩৩ হাজার থেকে এখন ৭২ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে।
Chrysler এবং এগ ফাইনান্সিয়াল সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে মার্জারের জন্য ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করেছে। Chrysler অবশ্য Renault-Nissan-এর সঙ্গেও মার্জার তথা পার্টনারশিপ অপশন বিবেচনা করছে বা খতিয়ে দেখছে। এটি ২০০৭ সালের শুরু থেকে এর মধ্যেই ২২ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করেছে, আগামী বছরে আরো কমপক্ষে চার হাজার ছাঁটাই করবে।
এ রকম ছাঁটাই শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, অন্যান্য শিল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশেও শুরু হয়েছে। ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানির দুই বৃহৎ অটো-পার্টস প্রস্তুতকারক কম্পানি 'উল্লেখযোগ্য' সংখ্যায় লে-অফের ঘোষণা দিয়েছে। জার্মান অটো-Daimler-এর স্টার্লিং ট্রাক ডিভিশন বন্ধ এবং অন্টারিও, কানাডা ও অরেগন রিজিয়নে প্ল্যান্ট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে, যাতে তিন হাজার ৫০০ শ্রমিক কাজ হারাবে।
পাল্টে গেছে বিশ্বযুদ্ধের কৌশল?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল মূলত বিশ্ব মন্দা কাটানোর জন্যই। সে সময় শিল্প কারখানাগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে বিশ্ব এক ভয়াবহ অর্থ সংকটের মধ্যে পড়েছিল। ১৯৩০ সালের সে মন্দাকে ইতিহাসে গ্রেট ডিপ্রেশন বা মহামন্দা বলে অভিহিত করা হয়। সে সময় কোটি কোটি গাড়ি উৎপাদন নষ্ট করতে হয়েছিল গাড়ি কম্পানিগুলোকে। আজকের মন্দায় সেই প্রভাব লক্ষণীয়। বাজার দখলকে কেন্দ্র করে তখন অক্ষশক্তি বনাম মিত্রশক্তির মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়, যা বিশ্বযুদ্ধ নামে পরিচিত। সে যুগের মন্দায় যেসব বিষয় স্পষ্ট ছিল, আজকের বিশ্ব মন্দায় সে বিষয়গুলো স্পষ্ট। তবে কি বিশ্ব একটি সামগ্রিক বিশ্বযুদ্ধের অপেক্ষায়? যেহেতু অর্থনৈতিক লক্ষণগুলো প্রায় কাছাকাছি।
লক্ষণগুলো কাছাকাছি হলেও আজকের যুগে বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা প্রায় নেই। কারণ আজকের যুগে বৈশ্বিক মন্দায় এক দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই একই কারণে অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যদি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার করার কোনো উপায় বেছে নেয়, তাহলে কম আক্রান্ত অন্য দেশগুলো সে বিষয়ে বিশেষ কোনো বাধা দেয় না। এমনকি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য যুদ্ধের রাস্তা বেছে নিলেও।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন ২০০০ সালের নাইন-ইলেভেনে কথিত সন্ত্রাসী আক্রমণের শিকার হওয়ার আগ থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার আগুন লাগা শুরু করেছে। ওয়ার্ল্ডকম, এনরনের মতো জায়ান্ট কম্পানিগুলো লোকসানের দায়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল তখনই। মার্কিনিদের মন্দার সঙ্গে নাইন-ইলেভেন হামলার একটি সম্পর্ক রয়েছে।
ট্ইন টাওয়ারে হামলার পরে মার্কিনিরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার একটি অজুহাত দাঁড় করাতে পেরেছিল। অথচ এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছিল তাদের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের যুদ্ধ। একটি অন্যায় যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বযুদ্ধ বেধে যাওয়ার অনেক কারণ ছিল। বিশ্বযুদ্ধ বাধেনি, কারণ না বাধার মতো বাস্তবিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে শুধু মার্কিনিরাই নয়, চীনের মতো মার্কিনবিরোধী দেশও এই মন্দায় আক্রান্ত হয়। ফলে অর্থনৈতিকভাবে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই মন্দা দ্বারা আক্রান্ত হলে তাদের স্বার্থ কাছাকাছি। বর্তমান বিশ্বে যারা শিল্পোন্নত দেশ, তাদের স্বার্থ অন্যান্য শিল্পন্নোত দেশের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। ফলে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ ঘোষণা করে অন্যায়ভাবে দেশ আক্রমণ করেছিল, তখন কোনো দেশের জোরালো প্রতিবাদ শক্তি-সামর্থ্য কম হওয়ার কারণে করেনি তা নয়, বরং পরোক্ষে হলেও এই যুদ্ধে তাদের একটি অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে।
ব্যর্থ রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র এখনো চলছে
বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এই ষড়যন্ত্রে পশ্চিমাদের সঙ্গে এ দেশীয় কিছু ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ জড়িত_বারবার দেশের সচেতন মহল থেকে এ প্রতিবাদ এসেছে। ব্যর্থ রাষ্ট্রের প্রবক্তারা দেশকে একটি অচল অবস্থায় নিয়ে যেতে চায়। এক অর্থে রাষ্ট্র কিন্তু বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ব্যর্থই ছিল। সে অর্থে রাষ্ট্র বিগত সেনা সমর্থিত দুই বছরে ব্যর্থ ছিল। যারা এই তত্ত্ব বাংলাদেশে তাদের পত্রিকা মিডিয়া দিয়ে প্রচার করেছিল, তারা কিন্তু সফল। কিন্তু বিপুল আকারে রাষ্ট্রের ব্যর্থতার রোগ সেবারে স্থায়ীকরণ হয়নি। আর এ কারণে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি সর্বাত্দক মিডিয়া যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে বিশ্বব্যাপী। তারই প্রতিধ্বনি মূলত নিউজ উইকে দেখা গেছে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এবং আইসিজির ১ মার্চের প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশের ওপর সন্ত্রাসবাদের তকমা লাগানোর যে চেষ্টা প্রথমবার আন্তর্জাতিক শক্তি করেছিল, তা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে আফগানিস্তান কিংবা পাকিস্তানের পার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি মাত্র দেশ, যে দেশ সশস্ত্র যুদ্ধ করে মুক্ত হয়েছে, স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের অভ্যুদয় ঘটিয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের দর্শন হিসেবে বাঙালিরা অসাম্প্রদায়িকতাকে বেছে নিয়েছিল। এখনো বাংলাদেশে স্বাধীনতার চেতনা গভীরভাবে হাজির। আর এ কারণে বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিবাদ নামে যে রাষ্ট্রের ব্যর্থ হওয়ার যড়যন্ত্রের আয়োজন করেছিল দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, তা ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশে জঙ্গি আছে_এই বিষয়টি হলে চলবে না, প্রমাণ করতে হবে বাংলাদেশের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জঙ্গি মনোভাবাপন্ন। যদি জনগোষ্ঠী হিসেবে মুসলিম জঙ্গি_এটা প্রমাণ করা যায়, তাহলে বাংলাদেশ হবে পশ্চিমাদের পরবর্তী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অন্যতম আক্রমণের জায়গা।
তবে বাংলাদেশে যে জঙ্গি নেই, এটাও সত্য নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে জঙ্গিবাদের রাজনৈতিক বিষয়টি কিভাবে হাজির-নাজির থাকে, তা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
গোয়েন্দা সূত্র জানাচ্ছে, বাংলাদেশে যত জঙ্গি আছে, তাদের নেতারা সব আফগান ফেরত তালেবান মুজাহিদ। এই জঙ্গি নেতাদের স্বপ্ন কোনো না কোনোভাবেই আফগানিস্তানের তালেবান রাষ্ট্র। এই তালেবান আমদানিতে একটি বিশেষ দেশের গোয়েন্দা সংস্থার দিকে বারবার আঙুল উঠেছে, এখনো উঠছে। অর্থাৎ এ দেশের মানুষের মধ্যে জঙ্গিবাদ নেই, যা আছে তা হলো যড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গি মনোভাবাপন্ন নয়, তাই এ জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে শেকড় গেড়ে বসতে পারেনি। এ দেশের মানুষ ধার্মিক, তারা শান্তিকামী। ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কিছুসংখ্যক মানুষকে বিভ্রান্ত করা গেলেও জনগোষ্ঠীর মূল অংশ কখনোই সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করবে না।
ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের গুরুত্ব
যদি অর্থনীতির হাল চিত্রে ধরেন রাষ্ট্রের গরিব আর বড়লোকের হিসাব-নিকাশে, তাহলে বাংলাদেশ দরিদ্র দেশের তালিকায় পড়বে। তবে আধুনিক ব্যবসা-বাণিজ্য হিসাবের তারতম্য পাল্টে দিচ্ছে। সে হিসেবে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশে রয়েছে পৃথিবীর ব্যাপক জনসংখ্যা। বাংলাদেশের চারপাশে রয়েছে পৃথিবীর উদীয়মান পরাশক্তিগুলো। পশ্চিমা বিশ্ব যদি এশিয়া মহাদেশকে নিজেদের কবজায় রাখতে চায়, তবে বাংলাদেশের মতো ভৌগোলিক গুরুত্বপূর্ণ দেশ আর একটিও নেই। বাংলাদেশের নিকট প্রতিবেশী ভারত, বাংলাদেশ থেকে চীনের দূরত্ব খুব বেশি নয়। বাংলাদেশের রয়েছে এক উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সমুদ্র অঞ্চল। এই ভৌগোলিক বাস্তবতা বাংলাদেশকে দিয়েছে_এশিয়া পশ্চিমা পরাশক্তিগুলোর জন্য করে তুলেছে আদর্শস্থানীয়। এই কারণে মার্কিন পরাশক্তি থেকে শুরু করে উদীয়মান শক্তিগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে নানা ধরনের চুক্তি করে এ দেশকে তাদের ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তুলতে চায়। এই চেষ্টা যখন সফল হয় না, তখনই তাকে ভিন্নভাবে চেষ্টা করতে হয়। ব্যর্থ রাষ্ট্র তত্ত্ব রপ্তানি করতে হয়। আজকের জমানায় ব্যর্থ রাষ্ট্রের সব থেকে বড় অনুষঙ্গ হলো ইসলামী জঙ্গিবাদ। ভারত ইতিমধ্যে তাদের দেশের অভ্যন্তরে পরিচালিত সব ইসলামী জঙ্গিবাদকে প্রতিহত করেছে এবং করছে। ভারত পশ্চিমাদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আকর্ষণীয় ক্ষেত্র হতে পারত, অন্তত মুম্বাই হামলার পরে; কিন্তু দেশটি শেষ পর্যন্ত তা হতে দেয়নি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষেত্র যদি সেখানে শুরু হয়ে যেত, তাহলে ভারত তার উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার কোনোভাবেই ধরে রাখতে পারত না।
নিউজ উইক লস্কর-ই-তৈয়বাকে পৃথিবীর পরবর্তী আল-কায়েদা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আর সেই পরবর্তী আল-কায়েদার চারণভূমি হবে এশিয়া ছাড়িয়ে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত। এশিয়ায় লস্কর-ই- তৈয়বার অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করেছে নিউজ উইক।
লস্কর-ই-তৈয়বা পাকিস্তানভিত্তিক একটি সশস্ত্র রাজনৈতিক দল, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কাছ থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আসছে। লস্কর-ই-তৈয়বা মূলত ভারতের বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোয় হামলা করে থাকে। ভারতের দাবি, লস্কর-ই-তৈয়বা পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার মদদে এগুলো করে থাকে। ভারতের মুম্বাই হামলার পরও কিন্তু ভারত সরকার সে দেশের প্রধান শত্রু বা সমস্যা কিন্তু ইসলামী জঙ্গিবাদকে চিহ্নিত করেনি। আরো অবাক বিষয়, তারা দেশের মধ্যে চলমান মাওবাদী সমস্যাকেই নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কারণ ভারতের শাসকশ্রেণী জানে, ইসলামী জঙ্গিবাদের বিপদ হলো বাইরের রাষ্ট্রের আক্রমণ। আর মাওবাদী সমস্যা আর যা-ই হোক, এর সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে পশ্চিমা দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে না।
লস্কর-ই-তৈয়বার ক্ষেত্রে আরেকটি বিশেষ বিষয় জড়িত, তা হলো লস্কর-ই-তৈয়বা কি তাদের জানবাজি লড়াইয়ে সাম্প্রতিক কোনো ঘোলা জলে পড়েছে কি না। অর্থাৎ লস্কর-ই-তৈয়বা তাদের স্বাধীন কাশ্মীর আন্দোলন ছেড়ে আন্তর্জাতিকভাবে পশ্চিমাদের হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আক্রমণের ক্ষেত্র তৈরির ষড়যন্ত্রে যুক্ত হয়েছে কি না। যদি হয়, তাহলে লস্কর-ই-তৈয়বা একটি মারাত্দক অস্ত্র হতে পারে পশ্চিমাদের। কারণ পশ্চিমাদের অথনৈতিক সংকট সহসাই কাটছে না। অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণের প্রয়োজনে তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আড়ালে দেশ দখলের চেষ্টা করবে।
নিয়মিত বিরতি দিয়ে বাংলাদেশে লস্কর-ই-তৈয়বা ধরা পড়ছে। বাংলাদেশে জেএমবিকে লস্কর-ই-তৈয়বা অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সমর্থন দিয়ে আসছে বলে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সূত্রে জানা গেছে।
নিউজ উইকের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর আইসিজির বিস্তারিত প্রতিবেদনে পরবর্তী আল-কায়েদার টার্গেট হিসেবে বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। যদি আল-কায়েদার টার্গেট হয়, তবে একই সঙ্গে মার্কিনসহ সন্ত্রাসবিরোধী অন্য পশ্চিমাদের সামরিক টার্গেটের ঝুঁকির মধ্যে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জঙ্গি সমস্যা বাংলাদেশকেই নিরসন করতে হবে। সেই পথ-পদ্ধতি বাংলাদেশকেই বের করতে হবে। জঙ্গি নিরসনের নামে পশ্চিমাদের কোনো সাহায্য নেওয়া কোনোভাবেই সংগত নয়। পশ্চিমারা জঙ্গি দমনে সাহায্যের নামে বাংলাদেশকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অন্যতম ভূখণ্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারে; যার সব থেকে ভালো উদাহরণ পাকিস্তান। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের যুদ্ধের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কাজ করে দেশটি আজ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশের জন্য সে রকম কোনো পরিণতি কারোই প্রত্যাশিত নয়।
'ব্যর্থ রাষ্ট্র'র ষড়যন্ত্র থেমে নেই!
ব্যর্থ রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাদেশকে ঘিরে। এ অভিযোগ পুরনো। মাঝখানে জরুরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তাত্তি্বকেরা নিশ্চুপ ছিলেন বলে মনে হয়। অথচ জরুরি তত্ত্বাবধায়ক আমলেই রাষ্ট্র দুই বছর ব্যর্থ ছিল। তাত্তি্ব্বকেরা এক অর্থে সফলকাম। জরুরি অবস্থার অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনের পর গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে বেশ কিছু দিন। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের আমলে আবারও দেশের বিরুদ্ধে ব্যর্থ রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত প্রভাবশালী সাপ্তাহিক 'নিউজ উইক' চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করে 'দ্য নেক্সট আল-কায়েদা' বা পরবর্তী আল-কায়েদা শিরোনামে। এরই ধারাবাহিকতায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন দেয় চলতি বছরের ১ মার্চে 'The Threat from Jamaat-ul Mujahideen Bangladesh' শীর্ষক শিরোনামে। সেখানে আইসিজি দেখিয়েছে জামাতুল মুজাহিদিন বা জেএমবি মূলত লস্কর-ই-তৈয়বার হয়ে কাজ করে। যেখানে দেখানো হয় পরবর্তী আল-কায়েদার অন্যতম বাসস্থান বা চারণ ভূমি বাংলাদেশ। নিউজ উইক ও আইসিজি প্রতিবেদনে ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীর কজের অন্যতম জায়গা হিসেবে বাংলাদেশকে দেখানো হয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিয়ে অনন্তকালের এক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। এই যুদ্ধ মূলত ভেঙে পড়া পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সচল করার চেষ্টা। পশ্চিমা পুঁজিবাদীদের অর্থনৈতিক মন্দা কাটানোর যুদ্ধের ক্ষতি নিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়া দরিদ্র কমজোর সামরিক শক্তির মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ও দেশের জনসাধারণ। তবে এ যুদ্ধের সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও ধর্মীয় উগ্রবাদের নামেই যুদ্ধটা শুরু হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতি এবং তার অবসম্ভাবী ফল বিশ্ব রাজনীতির সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কারণ নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান তুহিনদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল মূলত বিশ্ব মন্দা কাটানোর জন্যই। সে সময় শিল্প কারখানাগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে বিশ্ব এক ভয়াবহ অর্থ সংকটের মধ্যে পড়েছিল। ১৯৩০ সালের সে মন্দাকে ইতিহাসে গ্রেট ডিপ্রেশন বা মহামন্দা বলে অভিহিত করা হয়। সে সময় কোটি কোটি গাড়ি উৎপাদন নষ্ট করতে হয়েছিল গাড়ি কম্পানিগুলোকে। আজকের মন্দায় সেই প্রভাব লক্ষণীয় ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে মার্কিনিদের গর্ব বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্র টুইন টাওয়ারে বিমান হামলার ফলে পৃথিবীর রাজনীতি পাল্টে যায়। ওই হামলায় আল-কায়েদাকে দায়ী করা হয়। প্রথমে আল-কায়েদা হামলার দায়িত্ব অস্বীকার করলেও পরবর্তী সময়ে তারা সাননন্দে তা স্বীকার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী আক্রমণের স্বীকার_এই অজুহাতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশ 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' ঘোষণা করে। প্রথম দিকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এই শব্দগুচ্ছ শুনতে ভালো লাগলেও পরবর্তী সময়ে এই যুদ্ধের প্রত্যক্ষ শিকার হতে থাকে একের পর এক তেল, খনিজসম্পদ অথবা ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলো। তবে দুর্ভাগ্য মুসলিম ধর্মালম্বী মানুষের জন্য, কারণ বুশের যুদ্ধ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নয়, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বিরুদ্ধে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মার্কিনিরা এক কুৎসিত বর্ণবাদী যুদ্ধেরও অবতারণা করেছে। তবে অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করেন, ভেঙে পড়া মার্কিন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনেই এই রকম একটি যুদ্ধের দরকার ছিল। যারা মাইকেল মুরের 'ফারেনাইট নাইন ইলেভান' তথ্যচিত্রটি দেখেছেন, তাঁরা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন টুইন টাওয়ারে হামলার মধ্য দিয়ে মার্কিন অস্ত্র কম্পানিগুলোর জন্য অসম্ভব এক লোভনীয় বাজার তৈরি করেছে। ইরাকে যেসব অস্ত্র দিয়ে হামলা হচ্ছে, তার মধ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র জজ বুশের কম্পানি কার্লাইল অন্যতম।
কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলে যেসব মুসলিম সন্ত্রাসী গ্রুপকে অস্ত্র, অর্থ ও তথ্যপ্রযুক্তি দিয়ে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা পরিচালনা করত, এই জমানার ঘোষিত সন্ত্রাসীরা কিন্তু সাবেক সেই বন্ধুরাই। আর এ কারণে অনেকে মনে করেন, আল-কায়েদা বলে বাস্তবে কোনো মার্কিনবিরোধী শক্তি নেই, যা আছে তা হলো দেশে দেশে আল-কায়েদা নামে মার্কিনিদের হামলা জায়েজ করার একটি প্রক্রিয়া। বিষয়টি আরো খোলামেলাভাবে বললে এভাবে বলতে হয়, যতদিন আল-কায়েদা থাকবে, ততদিন মার্কিন সৈন্যবাহিনী ও তার মিত্রশক্তি আল-কায়েদা ধ্বংস করার নামে দেশে দেশে হামলা চালানোর বৈধতা তৈরি করবে।
বিশ্ব আজ ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। এই সংকট মোকাবিলার শান্তিপূর্ণ কোনো সমাধান নেই। শান্তিপূর্ণ সমাধান না থাকায় তাকে যুদ্ধ বাধাতেই হবে। আর এ কারণে মার্কিন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক অনন্ত যুদ্ধ ঘোষণা করে তাদের মন্দা কাটানোর চেষ্টা করছে। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে বিশ্ব মন্দার একটি সংক্ষিপ্ত চালচিত্র দেখা যাক।
ধসে পড়ছে পুঁজিবাদী বিশ্ব অর্থনীতি
পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার সারকথা হলো মুক্তবাজার অর্থনীতি। অর্থনীতিতে বাজার হবে অবাধ এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণহীন। এই নিয়ন্ত্রণহীনতাই জন্ম দিয়েছে সাম্প্রতিক বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার। এই মন্দা ইতিমধ্যেই মুক্তবাজারকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ও রাজনীতিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
এবারের বিশ্ব মন্দায় রাষ্ট্রকে তার মুক্তবাজার চরিত্র ভেঙে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা একে পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড় ত্রুটি হিসেবে দেখছেন। পুঁজিবাদী অর্থনীতি তার নীতির বাইরে গিয়ে বাজার ব্যবস্থার রাষ্ট্রীয়করণ করছে। কিন্তু তার পরও বিশ্ব মন্দা কাটেনি। চলমান এই বিশ্ব মন্দা এই পর্যায় পেঁৗছেছে যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার গৃহনির্মাণ খাতে ঋণদানকারী সর্ববৃহৎ দুটি কম্পানি Freddie Mac, Fannie Mae-কে ২০ হাজার কোটি ডলারের বিনিময়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। আর্থিক বিনিয়োগ ব্যাংক 'লেহম্যান ব্রাদার্স' নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। মার্কিন সরকার এই ধস থামানোর জন্য মার্কিন কংগ্রেসে বেইল আউট কর্মসূচির জন্য ৭০০ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন দিয়েছে। এই অবস্থায়ও যখন ধস থামছে না তখন জি-৭-এর অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে সংকট মোকাবিলায় আরো বৃহত্তর পরিসরে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশ বিস্তারিত কর্মসূচির নেওয়ার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।
এই মন্দার পরিসর আরো গভীরতর হয়ে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু মার্কিন অর্থনীতি নয়, ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশেও মন্দা চলছে। অস্থিতিশীল বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে ইউরো অঞ্চল নামে পরিচিত ইউরোপের ১৫টি দেশ প্যারিসে বৈঠক করেছে। ইইউর প্রেসিডেন্সি ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী নিকোলাই সারকোজি ওই বৈঠকে বলেন, 'আর কোনো ব্যাংকের পতন তাঁরা চান না এবং এ জন্য ২০০৯ সাল পর্যন্ত ব্যাংকগুলোয় অর্থ ঢালা হবে। তবে যেসব ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপকেরা দায়ী, তাঁদের অবশ্যই চলে যেতে হবে।'
ব্রিটেনে এই সংকট থাবা বসিয়েছে রয়েল ব্যাংক অব স্কটল্যান্ড (আরবিএস), লয়েডস টিএসবি ও এইচবিওএসের ওপর। এ কারণে সংকটে থাকা ব্যংকগুলোকে দেওয়া হবে তিন হাজার ৭০০ কোটি পাউন্ড।
জার্মান সরকার ৫০ হাজার কোটি ইউরোর একটি প্যাকেজ পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে। ফ্রান্স ব্যয় করবে ৩৫ হাজার কোটি ইউরো আর স্পেন সরকার ১০ হাজার কোটি ইউরোর প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছে। ইতালি, অস্ট্রিয়াও তাদের মন্দা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
খাতওয়ারি লোকসানের একটি চিত্র এবারের মন্দায় ধসে পড়েছে সেবা খাত। হাজার হাজার মানুষের কাছে বিক্রি করা ফ্লাটের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না গ্রাহকেরা। তাই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন এই মন্দার গোড়ার কথা হলো রিয়েল এস্টেট ব্যবসার ধস। অথচ কেউ একবার বলছে না যেসব গ্রাহক রিয়েল এস্টেটের কাছ থেকে ফ্লাট বা জমি কিনেছিলেন, তারাই তো প্রথমে কিস্তি শোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁরা কেন হলো? অর্থাৎ মন্দার গোড়ার কথা রিয়েল এস্টেট নয়। সামগ্রিকভাকে মন্দা পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে ছোবল দিয়েছে। ফলে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় একটি সামগ্রিক ধস নেমেছে, যা বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সেবা খাতকে। ২০০৮ সালের অক্টোবরে Realty Track-এর সূত্রে জানা গেছে, ওই বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ ৮১ হাজার ৩০০ বাড়ি নিলামে তোলা হয়েছে, আগস্ট ২০০৭ থেকে এ পর্যন্ত মোট আট লাখ ৫১ হাজার বাড়ি ঋণদাতারা অধিগ্রহণ করার জন্য অগ্রসর হয়েছে। এই তথ্য আরো ভাবনায় ফেলে দেয় যখন জানা যায়, মার্কিনিদের ঘর-বাড়ি হারানোর আরো করুণ কাহিনী। Credit Suisse-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর Rod Dubitsky এক শীর্ষস্থানীয় বিজনেস উইককে জানিয়েছেন, '২০১২ সাল নাগাদ ৫০ লাখেরও বেশি আমেরিকান পরিবার তাদের বাড়ি হারাবে, আর ২০০৮ সালেই বাড়ি হারানো পরিবারের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১৬ লাখ ৯০ হাজার।'
এই মন্দার প্রভাব বিশ্বজুড়ে অন্য খাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। তৈরি করেছে পরস্পরের প্রতি এক অদৃশ্য কিন্তু বাস্তব টিকে থাকার সম্পর্ক। মার্কিন মন্দা তাই চীনের বাজার ব্যবস্থায়ও হানা দিয়েছে। মার্কিনিদের রিয়েল এস্টেটের ধস চীনের পিভিসি পাইপ ম্যানুফ্যাকচারিং কমিয়ে দিয়েছে ৩০ শতাংশ উৎপাদন। শুধু পিভিসি নয়, চীনের চারটি বৃহত্তম ইস্পাত কম্পানি ২০ শতাংশ উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে দেশটি। ইউরোপেও এই প্রভাব পড়ায় ইউরোপিয়ান গৃহনির্মাণ সামগ্রী প্রস্তুতকারকেরা হয় ফ্যাক্টরি বন্ধ নতুবা উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে।
মোটরযান কেনার লোক নেই GM, Ford, Toyota, BMW, Daimler, Volkswagen, Audi, Porsche-এর ইউরোপের কার্যক্রম সংকুচিত করেছে। এই সংকচনের ফলে শুধু গাড়িশিল্প নয়, এর প্রভাব গিয়ে পড়েছে অন্য শিল্পেও। ইস্পাত, গ্লাস, রাবার, ইলেকট্রনিক পার্টস, রাবারসহ একাধিক শিল্পে। আরো অসংখ্য খাতের ওপরও তার প্রভাব ফেলছে। তাৎক্ষণিক ফল হচ্ছে বিভিন্ন প্ল্যান্ট ও ফ্যাক্টরি বন্ধ অথবা লে-অফ ঘোষণা। General Motors-এর মধ্যেই তার ছয়টি ফ্যাক্টরি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে, যার পাঁচটি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত (জর্জিয়া, মিশিগান, নিউইয়র্ক, ওহিও ও উইসকনসিন), সেই সঙ্গে মেক্সিকোর Toluca এবং কানাডার Ontario-তেও প্ল্যান্ট বন্ধের ঘোষণা এসেছে। শুধু তা-ই নয়, জার্মানি, স্পেন, ব্রিটেন, পোল্যান্ড, সুইডেন ও বেলজিয়ামেও ফ্যাক্টরি সাময়িক বন্ধ করছে।
ইউএস গাড়ি-প্রস্তুতকারকেরা দেউলিয়াত্বের কিনারে এসে অটো শ্রমিকদের চাকরির ওপর খৰহস্ত হচ্ছে। জেনারেল মোটর (এগ) গত ১৬ অক্টোবর তাদের তিনটি প্ল্যান্টে (একটি দেলাওয়ার ও বাকি দুটি মিশিগানে-পনটিয়াক ও ডেট্রোইট) এক হাজার ৬০০ কর্মীর লে-অফ ঘোষণা করেছে। ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত তার অর্ধেক লোকবলকে ছাঁটাই করেছে, শ্রমিকের সংখ্যা এক লাখ ৩৩ হাজার থেকে এখন ৭২ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে।
Chrysler এবং এগ ফাইনান্সিয়াল সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে মার্জারের জন্য ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করেছে। Chrysler অবশ্য Renault-Nissan-এর সঙ্গেও মার্জার তথা পার্টনারশিপ অপশন বিবেচনা করছে বা খতিয়ে দেখছে। এটি ২০০৭ সালের শুরু থেকে এর মধ্যেই ২২ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করেছে, আগামী বছরে আরো কমপক্ষে চার হাজার ছাঁটাই করবে।
এ রকম ছাঁটাই শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, অন্যান্য শিল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশেও শুরু হয়েছে। ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানির দুই বৃহৎ অটো-পার্টস প্রস্তুতকারক কম্পানি 'উল্লেখযোগ্য' সংখ্যায় লে-অফের ঘোষণা দিয়েছে। জার্মান অটো-Daimler-এর স্টার্লিং ট্রাক ডিভিশন বন্ধ এবং অন্টারিও, কানাডা ও অরেগন রিজিয়নে প্ল্যান্ট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে, যাতে তিন হাজার ৫০০ শ্রমিক কাজ হারাবে।
পাল্টে গেছে বিশ্বযুদ্ধের কৌশল?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল মূলত বিশ্ব মন্দা কাটানোর জন্যই। সে সময় শিল্প কারখানাগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে বিশ্ব এক ভয়াবহ অর্থ সংকটের মধ্যে পড়েছিল। ১৯৩০ সালের সে মন্দাকে ইতিহাসে গ্রেট ডিপ্রেশন বা মহামন্দা বলে অভিহিত করা হয়। সে সময় কোটি কোটি গাড়ি উৎপাদন নষ্ট করতে হয়েছিল গাড়ি কম্পানিগুলোকে। আজকের মন্দায় সেই প্রভাব লক্ষণীয়। বাজার দখলকে কেন্দ্র করে তখন অক্ষশক্তি বনাম মিত্রশক্তির মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়, যা বিশ্বযুদ্ধ নামে পরিচিত। সে যুগের মন্দায় যেসব বিষয় স্পষ্ট ছিল, আজকের বিশ্ব মন্দায় সে বিষয়গুলো স্পষ্ট। তবে কি বিশ্ব একটি সামগ্রিক বিশ্বযুদ্ধের অপেক্ষায়? যেহেতু অর্থনৈতিক লক্ষণগুলো প্রায় কাছাকাছি।
লক্ষণগুলো কাছাকাছি হলেও আজকের যুগে বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা প্রায় নেই। কারণ আজকের যুগে বৈশ্বিক মন্দায় এক দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই একই কারণে অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যদি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার করার কোনো উপায় বেছে নেয়, তাহলে কম আক্রান্ত অন্য দেশগুলো সে বিষয়ে বিশেষ কোনো বাধা দেয় না। এমনকি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য যুদ্ধের রাস্তা বেছে নিলেও।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন ২০০০ সালের নাইন-ইলেভেনে কথিত সন্ত্রাসী আক্রমণের শিকার হওয়ার আগ থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার আগুন লাগা শুরু করেছে। ওয়ার্ল্ডকম, এনরনের মতো জায়ান্ট কম্পানিগুলো লোকসানের দায়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল তখনই। মার্কিনিদের মন্দার সঙ্গে নাইন-ইলেভেন হামলার একটি সম্পর্ক রয়েছে।
ট্ইন টাওয়ারে হামলার পরে মার্কিনিরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার একটি অজুহাত দাঁড় করাতে পেরেছিল। অথচ এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছিল তাদের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের যুদ্ধ। একটি অন্যায় যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বযুদ্ধ বেধে যাওয়ার অনেক কারণ ছিল। বিশ্বযুদ্ধ বাধেনি, কারণ না বাধার মতো বাস্তবিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে শুধু মার্কিনিরাই নয়, চীনের মতো মার্কিনবিরোধী দেশও এই মন্দায় আক্রান্ত হয়। ফলে অর্থনৈতিকভাবে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই মন্দা দ্বারা আক্রান্ত হলে তাদের স্বার্থ কাছাকাছি। বর্তমান বিশ্বে যারা শিল্পোন্নত দেশ, তাদের স্বার্থ অন্যান্য শিল্পন্নোত দেশের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। ফলে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ ঘোষণা করে অন্যায়ভাবে দেশ আক্রমণ করেছিল, তখন কোনো দেশের জোরালো প্রতিবাদ শক্তি-সামর্থ্য কম হওয়ার কারণে করেনি তা নয়, বরং পরোক্ষে হলেও এই যুদ্ধে তাদের একটি অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে।
ব্যর্থ রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র এখনো চলছে
বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এই ষড়যন্ত্রে পশ্চিমাদের সঙ্গে এ দেশীয় কিছু ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ জড়িত_বারবার দেশের সচেতন মহল থেকে এ প্রতিবাদ এসেছে। ব্যর্থ রাষ্ট্রের প্রবক্তারা দেশকে একটি অচল অবস্থায় নিয়ে যেতে চায়। এক অর্থে রাষ্ট্র কিন্তু বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ব্যর্থই ছিল। সে অর্থে রাষ্ট্র বিগত সেনা সমর্থিত দুই বছরে ব্যর্থ ছিল। যারা এই তত্ত্ব বাংলাদেশে তাদের পত্রিকা মিডিয়া দিয়ে প্রচার করেছিল, তারা কিন্তু সফল। কিন্তু বিপুল আকারে রাষ্ট্রের ব্যর্থতার রোগ সেবারে স্থায়ীকরণ হয়নি। আর এ কারণে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি সর্বাত্দক মিডিয়া যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে বিশ্বব্যাপী। তারই প্রতিধ্বনি মূলত নিউজ উইকে দেখা গেছে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এবং আইসিজির ১ মার্চের প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশের ওপর সন্ত্রাসবাদের তকমা লাগানোর যে চেষ্টা প্রথমবার আন্তর্জাতিক শক্তি করেছিল, তা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে আফগানিস্তান কিংবা পাকিস্তানের পার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি মাত্র দেশ, যে দেশ সশস্ত্র যুদ্ধ করে মুক্ত হয়েছে, স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের অভ্যুদয় ঘটিয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের দর্শন হিসেবে বাঙালিরা অসাম্প্রদায়িকতাকে বেছে নিয়েছিল। এখনো বাংলাদেশে স্বাধীনতার চেতনা গভীরভাবে হাজির। আর এ কারণে বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিবাদ নামে যে রাষ্ট্রের ব্যর্থ হওয়ার যড়যন্ত্রের আয়োজন করেছিল দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, তা ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশে জঙ্গি আছে_এই বিষয়টি হলে চলবে না, প্রমাণ করতে হবে বাংলাদেশের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জঙ্গি মনোভাবাপন্ন। যদি জনগোষ্ঠী হিসেবে মুসলিম জঙ্গি_এটা প্রমাণ করা যায়, তাহলে বাংলাদেশ হবে পশ্চিমাদের পরবর্তী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অন্যতম আক্রমণের জায়গা।
তবে বাংলাদেশে যে জঙ্গি নেই, এটাও সত্য নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে জঙ্গিবাদের রাজনৈতিক বিষয়টি কিভাবে হাজির-নাজির থাকে, তা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
গোয়েন্দা সূত্র জানাচ্ছে, বাংলাদেশে যত জঙ্গি আছে, তাদের নেতারা সব আফগান ফেরত তালেবান মুজাহিদ। এই জঙ্গি নেতাদের স্বপ্ন কোনো না কোনোভাবেই আফগানিস্তানের তালেবান রাষ্ট্র। এই তালেবান আমদানিতে একটি বিশেষ দেশের গোয়েন্দা সংস্থার দিকে বারবার আঙুল উঠেছে, এখনো উঠছে। অর্থাৎ এ দেশের মানুষের মধ্যে জঙ্গিবাদ নেই, যা আছে তা হলো যড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গি মনোভাবাপন্ন নয়, তাই এ জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে শেকড় গেড়ে বসতে পারেনি। এ দেশের মানুষ ধার্মিক, তারা শান্তিকামী। ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কিছুসংখ্যক মানুষকে বিভ্রান্ত করা গেলেও জনগোষ্ঠীর মূল অংশ কখনোই সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করবে না।
ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের গুরুত্ব
যদি অর্থনীতির হাল চিত্রে ধরেন রাষ্ট্রের গরিব আর বড়লোকের হিসাব-নিকাশে, তাহলে বাংলাদেশ দরিদ্র দেশের তালিকায় পড়বে। তবে আধুনিক ব্যবসা-বাণিজ্য হিসাবের তারতম্য পাল্টে দিচ্ছে। সে হিসেবে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশে রয়েছে পৃথিবীর ব্যাপক জনসংখ্যা। বাংলাদেশের চারপাশে রয়েছে পৃথিবীর উদীয়মান পরাশক্তিগুলো। পশ্চিমা বিশ্ব যদি এশিয়া মহাদেশকে নিজেদের কবজায় রাখতে চায়, তবে বাংলাদেশের মতো ভৌগোলিক গুরুত্বপূর্ণ দেশ আর একটিও নেই। বাংলাদেশের নিকট প্রতিবেশী ভারত, বাংলাদেশ থেকে চীনের দূরত্ব খুব বেশি নয়। বাংলাদেশের রয়েছে এক উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সমুদ্র অঞ্চল। এই ভৌগোলিক বাস্তবতা বাংলাদেশকে দিয়েছে_এশিয়া পশ্চিমা পরাশক্তিগুলোর জন্য করে তুলেছে আদর্শস্থানীয়। এই কারণে মার্কিন পরাশক্তি থেকে শুরু করে উদীয়মান শক্তিগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে নানা ধরনের চুক্তি করে এ দেশকে তাদের ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তুলতে চায়। এই চেষ্টা যখন সফল হয় না, তখনই তাকে ভিন্নভাবে চেষ্টা করতে হয়। ব্যর্থ রাষ্ট্র তত্ত্ব রপ্তানি করতে হয়। আজকের জমানায় ব্যর্থ রাষ্ট্রের সব থেকে বড় অনুষঙ্গ হলো ইসলামী জঙ্গিবাদ। ভারত ইতিমধ্যে তাদের দেশের অভ্যন্তরে পরিচালিত সব ইসলামী জঙ্গিবাদকে প্রতিহত করেছে এবং করছে। ভারত পশ্চিমাদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আকর্ষণীয় ক্ষেত্র হতে পারত, অন্তত মুম্বাই হামলার পরে; কিন্তু দেশটি শেষ পর্যন্ত তা হতে দেয়নি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষেত্র যদি সেখানে শুরু হয়ে যেত, তাহলে ভারত তার উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার কোনোভাবেই ধরে রাখতে পারত না।
নিউজ উইক লস্কর-ই-তৈয়বাকে পৃথিবীর পরবর্তী আল-কায়েদা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আর সেই পরবর্তী আল-কায়েদার চারণভূমি হবে এশিয়া ছাড়িয়ে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত। এশিয়ায় লস্কর-ই- তৈয়বার অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করেছে নিউজ উইক।
লস্কর-ই-তৈয়বা পাকিস্তানভিত্তিক একটি সশস্ত্র রাজনৈতিক দল, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কাছ থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আসছে। লস্কর-ই-তৈয়বা মূলত ভারতের বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোয় হামলা করে থাকে। ভারতের দাবি, লস্কর-ই-তৈয়বা পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার মদদে এগুলো করে থাকে। ভারতের মুম্বাই হামলার পরও কিন্তু ভারত সরকার সে দেশের প্রধান শত্রু বা সমস্যা কিন্তু ইসলামী জঙ্গিবাদকে চিহ্নিত করেনি। আরো অবাক বিষয়, তারা দেশের মধ্যে চলমান মাওবাদী সমস্যাকেই নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কারণ ভারতের শাসকশ্রেণী জানে, ইসলামী জঙ্গিবাদের বিপদ হলো বাইরের রাষ্ট্রের আক্রমণ। আর মাওবাদী সমস্যা আর যা-ই হোক, এর সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে পশ্চিমা দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে না।
লস্কর-ই-তৈয়বার ক্ষেত্রে আরেকটি বিশেষ বিষয় জড়িত, তা হলো লস্কর-ই-তৈয়বা কি তাদের জানবাজি লড়াইয়ে সাম্প্রতিক কোনো ঘোলা জলে পড়েছে কি না। অর্থাৎ লস্কর-ই-তৈয়বা তাদের স্বাধীন কাশ্মীর আন্দোলন ছেড়ে আন্তর্জাতিকভাবে পশ্চিমাদের হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আক্রমণের ক্ষেত্র তৈরির ষড়যন্ত্রে যুক্ত হয়েছে কি না। যদি হয়, তাহলে লস্কর-ই-তৈয়বা একটি মারাত্দক অস্ত্র হতে পারে পশ্চিমাদের। কারণ পশ্চিমাদের অথনৈতিক সংকট সহসাই কাটছে না। অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণের প্রয়োজনে তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আড়ালে দেশ দখলের চেষ্টা করবে।
নিয়মিত বিরতি দিয়ে বাংলাদেশে লস্কর-ই-তৈয়বা ধরা পড়ছে। বাংলাদেশে জেএমবিকে লস্কর-ই-তৈয়বা অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সমর্থন দিয়ে আসছে বলে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সূত্রে জানা গেছে।
নিউজ উইকের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর আইসিজির বিস্তারিত প্রতিবেদনে পরবর্তী আল-কায়েদার টার্গেট হিসেবে বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। যদি আল-কায়েদার টার্গেট হয়, তবে একই সঙ্গে মার্কিনসহ সন্ত্রাসবিরোধী অন্য পশ্চিমাদের সামরিক টার্গেটের ঝুঁকির মধ্যে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জঙ্গি সমস্যা বাংলাদেশকেই নিরসন করতে হবে। সেই পথ-পদ্ধতি বাংলাদেশকেই বের করতে হবে। জঙ্গি নিরসনের নামে পশ্চিমাদের কোনো সাহায্য নেওয়া কোনোভাবেই সংগত নয়। পশ্চিমারা জঙ্গি দমনে সাহায্যের নামে বাংলাদেশকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অন্যতম ভূখণ্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারে; যার সব থেকে ভালো উদাহরণ পাকিস্তান। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের যুদ্ধের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কাজ করে দেশটি আজ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশের জন্য সে রকম কোনো পরিণতি কারোই প্রত্যাশিত নয়।
No comments:
Post a Comment