Tuesday, April 20, 2010

খোদ বঙ্গভবনে জঙ্গীদের নিজস্ব লোক!

খোদ বঙ্গভবনে জঙ্গীদের নিজস্ব লোক!
গাফফার খান চৌধুরী ॥ শুধু দুর্গম পাহাড়েই নয় খোদ বঙ্গভবনেও রয়েছে জঙ্গীদের নিজস্ব লোক! বাংলাদেশে জঙ্গীদের ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়টি জামায়াতের আগাগোড়াই জানা। নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হুজি ও জেএমবির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে জামায়াত। ১৯৯৬ সালে কক্সবাজার জেলার উখিয়ার দুর্গম পাহাড়ে ট্রেনিংরত অবস্থায় যে ৪৩ জন জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছিল, পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী প্যানেলের সহযোগিতায় তারা জামিনে মুক্তি পায়। বর্তমানে পলাতক এ জঙ্গীদের নতুন করে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে জামায়াত। বড় ধরনের নাশকতা চালাতে এদের ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিলেতী জঙ্গী গোলাম মোস্তাফা জঙ্গী ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপনে অর্থায়নের পাশাপাশি এসব তদারকিও করত। হুজির যুক্তরাজ্য শাখার আটক আমির ব্রিটিশ নাগরিক গোলাম মোস্তাফা এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে গোয়েন্দাদের।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্য থাকাকালে ১৯৯০ সাল থেকেই গোলাম মোস্তফা পুরোপুরি জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। গোলাম মোস্তফার সঙ্গে ভোলার ক্রিসেন্ট মাদ্রাসার আড়ালে জঙ্গী ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপনের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ফয়সাল মোস্তফার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের স্পার্ক ব্রোক এলাকার শাহজালাল বাঙালী স্কুল এ্যান্ড মসজিদের ইমাম মাওলানা নুরুল্লাহ গোলাম মোস্তফার অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মাওলানা নুরুল্লাহ ১৯৯২ সাল থেকে জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত। নুরুল্লাহ বড় মাপের জঙ্গী নেতা বাংলাদেশে মোস্ট ওয়ান্টেড। তার পুরো পরিবারই জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত। সে লন্ডনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশে মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন সেবামূলক কাজের কথা বলে অর্থ যোগাড় করত। জঙ্গীবাদ বিস্তারে এসব অর্থ পরবর্তীতে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভারত ও বসনিয়ায় পাঠানো হতো। তার বাড়ি লন্ডনের কেনটাকিতে। এ তিনজনে মিলে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ বিস্তারে বিভিন্ন লন্ডনে অর্থ যোগাড় করত। এসব অর্থের বরাদ্দের দায়িত্ব ছিল গোলাম মোস্তফা ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু নুরুল্লাহর। নুরুল্লাহর ছেলে মোহাম্মদ হেলালের সঙ্গে বঙ্গভবন মসজিদের ইমামের মেয়ের বিয়ে হয়েছে। জঙ্গীরা সাধারণত জঙ্গী পরিবারের বাইরে আত্মীয়তা করে না। গোয়েন্দারা বলছে, বঙ্গভবনের ইমাম নিজেও জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। ইমামের মেয়ে জামাই নিজেও হুজির বড় মাপের নেতা।
গোলাম মোস্তফার সঙ্গে আইডিপি নেতা মাওলানা আব্দুস সালাম, মাওলানা ছগীর, হুজির সিলেটের আমির বড়লেখা এলাকার বাসিন্দা হাফেজ আব্দুল মতিন, মুফতি বখতিয়ারসহ অনেকের যোগাযোগ ছিল। হাফেজ আব্দুল মতিন মোস্ট ওয়ান্টেড। মাওলানা ২০০৪ সালে গোলাম মোস্তফা আত্মগোপনের জন্য বাংলাদেশে চলে আসে। গোলাম মোস্তফা বলেছে সে নিয়মিত বাংলাবাজার (ইসলামিয়া প্রিন্টিং প্রেস ও আধুনিক প্রিন্টিং প্রেসের) এলাকার দু'টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। নিয়মিত যাতায়াত ছিল সেখানে। এখান থেকেই তাকে প্রচুরসংখ্যক জিহাদী বই দিয়েছিল মাওলানা ছগীর। প্রসঙ্গত, এ দুটো প্রতিষ্ঠানকে জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন ছাত্র শিবিরের স্থায়ী আস্তানা হিসেবে শনাক্ত করে গোয়েন্দারা। আধুনিক প্রিন্টিং প্রেস ছাত্র শিবিরের ২৪তম আস্তানা হিসেবে গোয়েন্দা তালিকায় স্থান পেয়েছে। মাওলানা ছগীরের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সর্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। ছগীরের মাধ্যমেই জামায়াতের কয়েক নেতার সঙ্গেম গোলাম মোস্তফার ঘনিষ্ঠতা হয়। ওই সূত্র ধরেই বাংলাদেশের দুর্গম পাহাড়ে জঙ্গী ট্রেনিং ক্যাম্প গড়ে ওঠার বিষয়টি আগাগোড়াই জানে জামায়াত। গোলাম মোস্তফা জঙ্গী ট্রেনিং ক্যাম্পের অর্থায়নের পাশাপাশি তদারকিও করত।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে কক্সবাজার জেলার উখিয়ার দুর্গম পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে ট্রেনিংরত অবস্থায় ৪৩ জঙ্গীকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ব্যাপারে ১৯ ফেব্রুয়ারি উখিয়া থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়। তদন্ত শেষে একই বছর ১৩ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালত ৪১ জঙ্গীকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করে। বাকি ২ জঙ্গীকে অব্যাহতি দেয়। গ্রেফতারের পর থেকেই তাদের জামিনে কারামুক্ত করতে মরিয়া হয়ে ওঠে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। জামায়াতে ইসলামীর একটি বিশেষ আইনজীবী প্যানেল এ জন্য কাজ করে। পরে ওই আইনজীবী প্যানেলে বিএনপির এক শীর্ষ স্থানীয় আইনজীবীকেও রাখা হয়। জামায়াত-বিএনপির যৌথ আইনজীবী প্যানেলের সহযোগিতায় ইতোমধ্যেই অধিকাংশ জঙ্গী জামিনে কারামুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪১তম আসামি জামিনে কারামুক্ত হয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গীদের সাজার মেয়াদ কমিয়ে ১২ বছর করে নির্ধারণ করে। অভিযোগ রয়েছে ওয়ারেন্ট তামিলের জন্য থানা পুলিশের কাছে পাঠানো হলে কোন ওয়ারেন্টই তামিল করা হয়নি। এর নেপথ্যে কাজ করেছে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। পরে ২৭টি ওয়ারেন্ট কারাগার থেকে অতামিল অবস্থায় ফেরত গেছে আদালতে। আদালত সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের পুনঃগ্রেফতারের জন্য ওয়ারেন্ট জারি করে। ইতোমধ্যে বাকি ১৩ জঙ্গীও জামিন পায়। পরে তাদের বিরুদ্ধেও পুনঃওয়ারেন্ট জারি করে আদালত।
জঙ্গীদের মধ্যে আবুল হোসেন ওরফে আবুল হাসেম, বোরহান উদ্দিন মামুন ওরফে বোরহান, শেখ আনিছুর রহমান, হাফেজ মোহাম্মদ আলী ওরফে ইয়াছ আহাম্মদ ওরফে আলী ইয়াছ, ইব্রাহিম খলিলুল্লা ওরফে ইব্রাহিম খলিল উদ্দিন, খালেদ সাইফুল্লাহ, রশিদুল ইসলাম, আবু জিহাদ, আব্দুল আজিজ ওরফে আব্দুল হালিম ওরফে সেলিম, মোস্তফা, রেজাউল করিম ওরফে রেজাউল, রেজাউল করিম ওরফে প্রকাশ রেজাউল করিম, শরিয়ত উল্লাহ, মুসা, হাফেজ রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ, আনোয়ার উদ্দিন জাবের, খায়ের মাসরুর, গিয়াস উদ্দিন, শাখাওয়াত হোসেন, জসিম উদ্দিন, দিদারুল আলম, আব্দুল, নূরুল আলম, আবুল কাশেম, ইউনুস, হাফেজ সিরাজুল করিম, বশির উদ্দিন, আব্দুল আজিজ, নূরুল হক, মৌলানা আবু তাহের, মহিবুর রহমান, আব্দুল হক, মমতাজ উদ্দিন ও কামরুল ইসলাম ওরফে শামসুল ইসলাম এখনও পলাতক।
এ ছাড়া হাফেজ মোহাম্মদ আবু তাহের, আব্দুস সোবহান ওরফে আবু সুফিয়ান, আমিনুর রহমান, আবু আব্বাস ওরফে মোঃ জাহের আবুল আব্বাস ও আব্দুল মান্নান ওরফে আব্দুল হান্নানসহ ৬ জন বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পলাতক জঙ্গীদের নানাভাবে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে জামায়াত। পলাতক হুজি জঙ্গীদের বাংলাদেশে বড় ধরনের নাশকতায় ব্যবহার করা হতে পারে। পলাতক জঙ্গীরা এখনও সক্রিয় রয়েছে।

http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2010-04-20&ni=15425

No comments: