আগামী সপ্তাহে তদন্ত নতুন মোড় নেবে
যুদ্ধাপরাধীর বিচার
স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মানবতার বিরম্নদ্ধে অপরাধ বিচারে সরকার গঠিত তদনত্ম সংস্থায় একের পর এক অভিযোগ আসছে। তদনত্মকারী সংস্থা মুখ ফুটে কিছু না বললেও, আভাস পাওয়া গেছে, আগামী সপ্তাহে তদনত্মে মোড় নেবে। সংস্থার প্রধান আব্দুল মতিন বলেছেন, এখন আর কিছুই বলব না। তদনত্মের বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপনীয়ভাবে করতে হবে। অন্যদিকে চীফ প্রসিকিউটর বলেছেন, কাজের অগ্রগতি হচ্ছে। প্রতিদিনই কিছু না কিছু নতুনত্ব আসছে। তাড়াহুড়োর কিছু নেই। সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে হলে অবশ্যই ধীরস্থিরভাবে অগ্রসর হতে হবে। যখন '৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের কাজ চলছে ঠিক তখন একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে ব্যসত্ম। ওয়্যার ক্রাইমস্্ ফ্যাক্টস্্ ফাইন্ডিং কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, আইন ও শালিস কেন্দ্র ইতোমধ্যে তদনত্মকারী সংস্থার কাছে বেশ কিছু তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করেছে। '৭১ সালে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল, তাদের সম্ভাব্য তালিকাও তদনত্মকারী সংস্থার হাতে রয়েছে। সেগুলো এখন যাচাই বাছাই হচ্ছে।ওয়্যার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি এক গবেষণায় জানিয়েছে, পাকিসত্মানী হানাদার ও তাদের দোসররা ১৯৭১ সালে দেশে যে ব্যাপক গণহত্যা ও নারী নির্যাতন চালায় তাতে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এর বাইরে আরও হিসেব রয়েছে। এ যাবত গণকবর ও গণহত্যা স্পট আবিষ্কৃত হয়েছে প্রায় ৯২০টি। ৮৮টি নদী, ৬৫টি ব্রিজের উপরে হত্যা নির্যাতনের শক্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে। চার লাখ ৬০ হাজার নির্যাতিত নারীর পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন পাকিসত্মানী দোসররা করলেও তাদের সাথে পাকিসত্মানী সেনাবাহিনীর সদস্যরাও জড়িত ছিল। ধর্ষিতা ও প্রত্যৰদশর্ীরা অনেক পাকিসত্মানীর অফিসার ও নেতাদের নাম উলেস্নখ করেছে। এ প্রেৰাপটে ওয়্যার ক্রাইমস্্ ফ্যাক্টস্্ ফাইন্ডিং কমিটি ২৮৭ জন পাকিসত্মানী যুদ্ধাপরাধীকে শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে ১৯১ জন বড় মাপের যুদ্ধাপরাধী। ৩০ থেকে ৪০ জন রয়েছে শীর্ষ অপরাধী। যদিও 'আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে' পাকিসত্মানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে না। বিচার হচ্ছে যারা বাংলাদেশী অথচ '৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল।
১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এক রেজুলেশনে ২৬০(৩) এর অধীনে গণহত্যাকে এমন একটি শাসত্মিযোগ্য অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হয়, যা বিশ্বময় প্রতিরোধে সকল রাষ্ট্র অঙ্গীকারাবদ্ধ। এই গণহত্যা বলতে বোঝায় এমন কর্মকা- যার মাধ্যমে একটি জাতি, ধমর্ীয় সম্প্রদায় বা নৃতাত্তি্বক গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াস নেয়া হয়েছে বা হচ্ছে। '৭১ সালে পাকিসত্মানী হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা এদেশে গণহত্যা চালায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে সাধারণ ৰমা ঘোষণা করেন। সাধারণ ৰমা ঘোষণার পরও ১১ হাজার দালাল বিভিন্ন কারাগারে আটক ছিল। এদের বিচার চলছিল। এদের অধিকাংশই সরাসরিভাবে হত্যা, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগসহ বড় মাপের মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যা কর্মকা-ে সম্পৃক্ত ছিল। এই অপরাধ কখনও ৰমার যোগ্য নয়। অথচ ১৯৭৫ সালের পর জেনারেল জিয়াউর রহমান অনৈতিক ও অসাংবিধানিকভাবে তাদের মুক্ত করেন।
জিয়াউর রহমানের পরে যে সমসত্ম সরকার ৰমতায় এসেছে, তারাও প্রত্যৰ ও পরোৰভাবে যুদ্ধাপরাধীদের সহায়তা করেছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের সপৰের শক্তিগুলো বলেছিল, নির্বাচনে জয়লাভ করে ৰমতায় আসলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইসত্মেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট ৰমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে দ্রম্নত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার জন্য সর্বসম্মত প্রসত্মাব পাস হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য পুরাতন হাইকোর্টে স্থাপন করা হয়েছে আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল। ট্রাইবু্যনাল তাদের কাজ শুরম্ন করেছে। বিচার কাজ শুরম্ন না হতেই চিহ্নিত মানবতাবিরোধী অপরাধকারীরা হৈ চৈ শুরম্ন করেছে। তদনত্ম সংস্থা কাজ করছে। অচিরেই তারা ট্রাইবু্যনালের এবং প্রসিকিউটরদের কাছে রিপোর্ট পেশ করবে। রিপোর্ট দেয়ার পর পরবতর্ী ধাপ শুরম্ন হবে বলে জানা গেছে।
No comments:
Post a Comment