বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু_ এক অবিচ্ছেদ্য সত্তা
মোঃ এনায়েত হোসেন
(পূর্ব প্রকাশের পর)
শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রদের নিয়ে পূর্ববঙ্গ সরকারের সচিবালয় ঘেরাও করেন। পুলিশ ছাত্রদের ওপর আক্রমণ চালায় এবং শেখ মুজিবসহ ৬৫ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করে। ১৯ মার্চ মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঢাকা আগমন উপলক্ষে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার চুক্তি করেন এবং আটক ছাত্রদের মুক্তি দেন। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রদের একটি শোভাযাত্রা নিয়ে আইন পরিষদের সম্মুখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পূর্ব বাংলার মানুষ ও ছাত্রসমাজের ওপর মুসলিম লীগ সরকারের নির্যাতনের মাত্রা দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, শামসুল হককে সম্পাদক এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সম্পাদক করে ৪০ সদস্যবিশিষ্ট আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠন করা হয়। এ সময় শেখ মুজিবুর রহমান কারারুদ্ধ ছিলেন। ১৯৪৯ সালের শেষের দিকে তিনি কারামুক্ত হন। তখন বাংলায় দুর্ভিক্ষ চলছে। ১৯৫০ সালের জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের ঢাকা আগমন উপলক্ষে আওয়ামী মুসলিম লীগ ভুখা-মিছিল বের করে। পুলিশ রমনা গেটের কাছে মিছিলের নেতা মওলানা ভাসানী, শামসুল হক ও শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। এবারে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রায় দু'বছর আটক রাখা হয়।
পূর্ব বাংলার দুর্ভিক্ষ, লবণ সঙ্কট (১৯৫১), দাঙ্গা, রাজনৈতিক নির্যাতন, উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র, পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ ও শাসনতন্ত্র প্রণয়নে ব্যর্থতার ফলে মুসলিম লীগ সরকার জনপ্রিয়তা হারায়। দেশের এ সঙ্কটময় মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় ঘোষণা করলেন "উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।" আওয়ামী মুসলিম লীগ ও ছাত্রলীগ এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। মুজিব তখন কারাগারে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে মুজিব ও বরিশালের মহিউদ্দিন আহমেদ কারাগারে ১৬ ফেব্রুয়ারি অনশন শুরু করেন। তিনি জেলে থাকাকালে ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর গুলিবর্ষণ করলে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর রহমান প্রমুখ শহীদ হন। ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের ফলে বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনার জন্ম হয়। ১৯৫৩ সালে মুজিব আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে একে ফজলুল হকের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। শেখ মুজিব যুক্তফ্রন্টের প্রার্থীদের জয়যুক্ত করার জন্য পূর্ববাংলার গ্রামগ্রঞ্জে প্রচারণা চালান। যুক্তফ্রন্ট এ নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করে এবং শেখ মুজিব মুসলিম লীগ নেতা ওয়াহিদুজ্জামানকে পরাজিত করে গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক মন্ত্রিসভা গঠন করেন। এ মন্ত্রিসভায় শেখ মুজিবুর রহমান সমবায়, কৃষি ও বন বিভাগের মন্ত্রী নিযুক্ত হন।
পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকচক্র শেরে বাংলার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ আনে। তদানীন্তন গবর্নর জেনারেল গোলাম মুহাম্মদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার ফলে ৩১ মে ১৯৫৪ কেন্দ্রীয় সরকার একে ফজলুল হকের মন্ত্রিসভা বাতিল করেন এবং শেখ মুজিবুর রহমানসহ শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। ১৯৫৫ সালের ৩ জুন পূর্ব বাংলা থেকে 'গবর্নর জেনারেলের শাসন' তুলে নিলে শেখ মুজিব মুক্তিলাভ করেন। ঐ সালের ৫ জুন গণপরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিব পুনরায় গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পাকিস্তান গণপরিষদের স্পীকার নির্বাচিত হলেন আবদুল ওয়াহাব খান। ইস্কান্দার মির্জার ষড়যন্ত্রের ফলে যুক্তফ্রন্ট ভেঙ্গে যায়। আওয়ামী মুসলীম লীগ বিরোধী দল গঠন করে। জাতীয় পরিষদ নতুন শাসনতন্ত্র গঠন করলে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের দাবি জানান। পাকিস্তান সরকার 'পূর্ব বাংলার' নাম পরিবর্তন করে 'পূর্ব পাকিস্তান' রাখার প্রস্তাব করলে ১৯৫৫ সালের আগস্টে শেখ মুজিবুর রহমান গণপরিষদে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তিনি বলেন, 'তারা পূর্ব বাংলার' পরিবর্তে 'পূর্ব পাকিস্তান' করতে চায়। আমরা বার বার দাবি করছি আপনারা এ অঞ্চলের নাম 'বাংলা' করবেন। বাংলার নিজস্ব ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে। আপনারা জনগণকে জিজ্ঞাসা না করে এ নামের পরিবর্তন করতে পারবেন না। শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দলের প্রতিবাদ সত্ত্বেও শাসনতন্ত্রে পূর্ব বাংলার পরিবর্তে পূর্ব পাকিস্তান লেখা হয়।
মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৫৬ সালের ৪ আগস্ট খাদ্যের দাবিতে ঢাকা শহরে বিরাট মিছিল হয় এবং পুলিশ ঐ মিছিলে গুলি করে। মুখ্যমন্ত্রী আবুল হোসেন সরকার পদত্যাগ করে। ৬ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা খান আতাউর রহমান খান মন্ত্রিসভা গঠন করেন। এ মন্ত্রিসভায় শেখ মুজিব শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড দফতরের দায়িত্ব লাভ করেন। ১১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সভাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। পাকিস্তানীদের প্রাসাদ ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। তারা আওয়ামী লীগকে দ্বিখণ্ডিত করতে সফল হয়। ১৯৫৭ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠিত হয়। শেখ মুজিব আওয়ামী লীগে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে রয়ে যান। একই ষড়যন্ত্রের কারণে ১৯৫৭ সালের ১১ অক্টোবর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। অবশেষে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা সামরিক আইন জরি করেন। শাসনতন্ত্র বাতিল করে মন্ত্রিসভা ও আইন পরিষদ ভেঙ্গে দেয়া হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। জেনারেল আইয়ুব খান ২৭ অক্টোবর ইস্কান্দার মির্জাকে সরিয়ে নিজেই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন। অবশ্য ইতোমধ্যে ১২ অক্টোবর শেখ মুজিবুর রহমানকে কারারুদ্ধ করা হয়। যদিও ১৪ মাস কারাভোগের পর বঙ্গবন্ধু ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বরে মুক্তি লাভ করেন কিন্তু তাঁর ভাগ্যে বাংলার মুক্ত জলবায়ুতে বেশিদিন অবস্থান করা বোধহয় সম্ভব ছিল না। সামরিক সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা দায়ের করে ১৯৬২ সালে। (ক্রমশ)
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, প্রাবন্ধিক।
শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রদের নিয়ে পূর্ববঙ্গ সরকারের সচিবালয় ঘেরাও করেন। পুলিশ ছাত্রদের ওপর আক্রমণ চালায় এবং শেখ মুজিবসহ ৬৫ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করে। ১৯ মার্চ মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঢাকা আগমন উপলক্ষে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার চুক্তি করেন এবং আটক ছাত্রদের মুক্তি দেন। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রদের একটি শোভাযাত্রা নিয়ে আইন পরিষদের সম্মুখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পূর্ব বাংলার মানুষ ও ছাত্রসমাজের ওপর মুসলিম লীগ সরকারের নির্যাতনের মাত্রা দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, শামসুল হককে সম্পাদক এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সম্পাদক করে ৪০ সদস্যবিশিষ্ট আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠন করা হয়। এ সময় শেখ মুজিবুর রহমান কারারুদ্ধ ছিলেন। ১৯৪৯ সালের শেষের দিকে তিনি কারামুক্ত হন। তখন বাংলায় দুর্ভিক্ষ চলছে। ১৯৫০ সালের জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের ঢাকা আগমন উপলক্ষে আওয়ামী মুসলিম লীগ ভুখা-মিছিল বের করে। পুলিশ রমনা গেটের কাছে মিছিলের নেতা মওলানা ভাসানী, শামসুল হক ও শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। এবারে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রায় দু'বছর আটক রাখা হয়।
পূর্ব বাংলার দুর্ভিক্ষ, লবণ সঙ্কট (১৯৫১), দাঙ্গা, রাজনৈতিক নির্যাতন, উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র, পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ ও শাসনতন্ত্র প্রণয়নে ব্যর্থতার ফলে মুসলিম লীগ সরকার জনপ্রিয়তা হারায়। দেশের এ সঙ্কটময় মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় ঘোষণা করলেন "উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।" আওয়ামী মুসলিম লীগ ও ছাত্রলীগ এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। মুজিব তখন কারাগারে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে মুজিব ও বরিশালের মহিউদ্দিন আহমেদ কারাগারে ১৬ ফেব্রুয়ারি অনশন শুরু করেন। তিনি জেলে থাকাকালে ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর গুলিবর্ষণ করলে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর রহমান প্রমুখ শহীদ হন। ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের ফলে বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনার জন্ম হয়। ১৯৫৩ সালে মুজিব আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে একে ফজলুল হকের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। শেখ মুজিব যুক্তফ্রন্টের প্রার্থীদের জয়যুক্ত করার জন্য পূর্ববাংলার গ্রামগ্রঞ্জে প্রচারণা চালান। যুক্তফ্রন্ট এ নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করে এবং শেখ মুজিব মুসলিম লীগ নেতা ওয়াহিদুজ্জামানকে পরাজিত করে গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক মন্ত্রিসভা গঠন করেন। এ মন্ত্রিসভায় শেখ মুজিবুর রহমান সমবায়, কৃষি ও বন বিভাগের মন্ত্রী নিযুক্ত হন।
পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকচক্র শেরে বাংলার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ আনে। তদানীন্তন গবর্নর জেনারেল গোলাম মুহাম্মদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার ফলে ৩১ মে ১৯৫৪ কেন্দ্রীয় সরকার একে ফজলুল হকের মন্ত্রিসভা বাতিল করেন এবং শেখ মুজিবুর রহমানসহ শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। ১৯৫৫ সালের ৩ জুন পূর্ব বাংলা থেকে 'গবর্নর জেনারেলের শাসন' তুলে নিলে শেখ মুজিব মুক্তিলাভ করেন। ঐ সালের ৫ জুন গণপরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিব পুনরায় গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পাকিস্তান গণপরিষদের স্পীকার নির্বাচিত হলেন আবদুল ওয়াহাব খান। ইস্কান্দার মির্জার ষড়যন্ত্রের ফলে যুক্তফ্রন্ট ভেঙ্গে যায়। আওয়ামী মুসলীম লীগ বিরোধী দল গঠন করে। জাতীয় পরিষদ নতুন শাসনতন্ত্র গঠন করলে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের দাবি জানান। পাকিস্তান সরকার 'পূর্ব বাংলার' নাম পরিবর্তন করে 'পূর্ব পাকিস্তান' রাখার প্রস্তাব করলে ১৯৫৫ সালের আগস্টে শেখ মুজিবুর রহমান গণপরিষদে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তিনি বলেন, 'তারা পূর্ব বাংলার' পরিবর্তে 'পূর্ব পাকিস্তান' করতে চায়। আমরা বার বার দাবি করছি আপনারা এ অঞ্চলের নাম 'বাংলা' করবেন। বাংলার নিজস্ব ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে। আপনারা জনগণকে জিজ্ঞাসা না করে এ নামের পরিবর্তন করতে পারবেন না। শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দলের প্রতিবাদ সত্ত্বেও শাসনতন্ত্রে পূর্ব বাংলার পরিবর্তে পূর্ব পাকিস্তান লেখা হয়।
মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৫৬ সালের ৪ আগস্ট খাদ্যের দাবিতে ঢাকা শহরে বিরাট মিছিল হয় এবং পুলিশ ঐ মিছিলে গুলি করে। মুখ্যমন্ত্রী আবুল হোসেন সরকার পদত্যাগ করে। ৬ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা খান আতাউর রহমান খান মন্ত্রিসভা গঠন করেন। এ মন্ত্রিসভায় শেখ মুজিব শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড দফতরের দায়িত্ব লাভ করেন। ১১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সভাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। পাকিস্তানীদের প্রাসাদ ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। তারা আওয়ামী লীগকে দ্বিখণ্ডিত করতে সফল হয়। ১৯৫৭ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠিত হয়। শেখ মুজিব আওয়ামী লীগে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে রয়ে যান। একই ষড়যন্ত্রের কারণে ১৯৫৭ সালের ১১ অক্টোবর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। অবশেষে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা সামরিক আইন জরি করেন। শাসনতন্ত্র বাতিল করে মন্ত্রিসভা ও আইন পরিষদ ভেঙ্গে দেয়া হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। জেনারেল আইয়ুব খান ২৭ অক্টোবর ইস্কান্দার মির্জাকে সরিয়ে নিজেই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন। অবশ্য ইতোমধ্যে ১২ অক্টোবর শেখ মুজিবুর রহমানকে কারারুদ্ধ করা হয়। যদিও ১৪ মাস কারাভোগের পর বঙ্গবন্ধু ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বরে মুক্তি লাভ করেন কিন্তু তাঁর ভাগ্যে বাংলার মুক্ত জলবায়ুতে বেশিদিন অবস্থান করা বোধহয় সম্ভব ছিল না। সামরিক সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা দায়ের করে ১৯৬২ সালে। (ক্রমশ)
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, প্রাবন্ধিক।
No comments:
Post a Comment